করোনার মধ্যেই ইসলাম গ্রহণ করলেন অস্ট্রিয়ার রেসলিং তারকা
বিশ্বের মানুষের কত ক্ষমতা, পারমানবিক বোমা, সুপার কম্পিউটার, প্রযুক্তির এতএত উৎকর্ষতা, সামরিক, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এত উন্নতির সোপান- সব কিছুই হার মেনে গেছে অতিক্ষুদ্র, যা খালি চোখে দেখা যায় না- এমন এক ভাইরাসের কাছে। বিশ্বের মহাপরাক্রমশালী শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো আজ ঘরে বন্দী।
করোনাভাইরাস তথা কোভিড-১৯ এতটাই দাপট যে, সারা বিশ্বকেই চোখের পলকে লকডাউন করে দিয়েছে সেটা। কোয়ারেন্টাইনে বসে এক অতিক্ষুদ্র ভাইরাসের এমন বিশাল শক্তি দেখে নিজের বিশ্বাসেই এক বিশাল পরিবর্তন অনুভব করেন অস্ট্রিয়ান মিক্সড মার্শাল আর্ট (এমএমএ) রেসলার উইলহেম অট।
সেই পরিবর্তনের সঙ্গে তার চিন্তার জগৎও খুলে যায়। তিনি করোনাভাইরাসের শক্তির উৎস খুঁজতে থাকেন। অবশেষে পেয়ে যান করোনার শক্তির উৎস কি। তিনি বিশ্বাস খুঁজে পেলেন সৃষ্টিকর্তায়। অবশেষে করোনার কারণে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে থাকতেই ইসলাম গ্রহণ করেন ফেলেন জাতিতে জার্মান এই অস্ট্রিয়ান। নতুন নাম রাখেন খালিদ অট।
১৬ এপ্রিল নিজের ইসলাম গ্রহণের কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন উইলহেম অট। জানিয়ে দিলেন, কোভিড-১৯ এর এই সঙ্কটই আমাকে সঠিক পথ খুঁজে পেতে সহযোগিতা করেছে।
তবে, কোয়ারেন্টাইনে থাকতে নয়, ইসলামের সু-শীতল ছায়ার খোঁজ তিনি পেয়েছিলেন আরো আগেই। কোয়ারেন্টাইনে থেকে স্টাডি করে শুধু নিজের মধ্যে বিশ্বাস পাকা-পোক্ত করেছেন। ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা এক বার্তায় উইলহেম জানান, ইসলাম তার মানসিকতায় গেঁথে ছিল গত কয়েকটি বছর ধরেই। কিন্তু সময়ই বের করতে পারছিলেন না এ নিয়ে স্টাডি করার, জানা-শোনা করার। অবশেষে কোয়ারেন্টাইনে থেকে নিরবচ্ছিন্ন অবসর খুঁজে পেয়েছেন। সেখানেই তিনি খুঁজে পেলেন ইসলামের সৌন্দর্য।
উইলহেম অট বলেন, ‘আমি নিজেকে রাজনৈতিক মনোভাবাপন্ন হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। তবে, যখন আমি খুব কঠিন সময় অতিবাহিত করি, তখন ইসলাম আমাকে শক্তি যোগায়।’
ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা বার্তায় এই এমএমএ ফাইটার তার নিজের শাহাদাতের (ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার) ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে ইসলামের পাঁচ কালেমার একটি পড়ে শোনান। যেটা ইসলাম গ্রহণ করার স্বীকৃতি দিয়ে থাকে, আল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা এবং মোহাম্মদ (সঃ)কে আল্লাহর রাসুল হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে থাকে।’
উইলহেম অট বলেন, ‘আমার বিশ্বাস অনেক বেশি শক্তিশালী। যে কারণে আমি বুঝতে পারছি, একমাত্র সত্যিকার আল্লাকে। একই সঙ্গে আমি গর্বভরেই স্বাক্ষী দিতে পারছি ইসলামে প্রবেশ করার। হ্যাঁ, আমি এখন একজন মুসলিম।’
অন্য এক পোস্টে উইলহেম অট তার সমর্থকদের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার কারণে তাদেরকে ধন্যবাদ জানান। একই সঙ্গে ইসলামিক সমাজে তাকে উষ্ণতার সঙ্গে গ্রহণ করে নেয়ার কারণেও ধন্যবাদ জানান তার মুসলিম ভাইদের।’
তিনি বলেন, ‘আমি নিজেকে বড় করে উপস্থাপনের জন্য বিষয়টা জানাচ্ছি না। বিষয়টা পোস্ট করছি কেবল, আমার চারপাশে যারা রয়েছেন এবং আমার বন্ধুদের বিষটা জানানোর জন্য।’
১৯৮২ সালে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মার্শাল আর্টের ওয়ার্ল্ড র্যাংকিংয়ে ৬১৫ জনের মধ্যে তিনি রয়েছেন ৭৪ নম্বরে। ২০০৮ সালে পেশাদার মার্শাল আর্ট শুরু করেন উইলহেম। এরপর এখনও পর্যন্ত ৩৩ ম্যাচ খেলে ১৬টিতে জয়লাভ করেন। মিক্সড মার্শাল আর্টে মুসলিমদের সঙ্গে মেলামেশার কারণেই ইসলামের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েছিলেন উইলহেম অট।
শুধু উইলহেম অটই নন, সম্প্রতি ইসলাম গ্রহণ করেন চরম মুসলিম বিদ্বেষী হিসেবে পরিচিত এক জার্মান রাজনীতিবিদ। আর্থার ওয়েগনার নামে এই রাজনীতিবিদ জার্মানিতে মুসলিম বিদ্বেষী এবং কঠোর ডান-পন্থি হিসেবে পরিচিত রাজনৈতিক দল অল্টারনেটিভ ফার ডয়েচল্যান্ডের (এএফডি) নেতৃত্বস্থানীয় সদস্য ছিলেন। কিন্তু গত জানুয়ারিতে তিনি হঠাৎ ইসলাম গ্রহণ করে দলের নেতৃত্ব ছেড়ে দেন।
বার্লিণভিত্তিক একটি দৈনিকে তিনি সরাসরি জানিয়ে দেন, ‘এটা আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।’ তার রাজনৈতিক দল অল্টারনেটিভ ফার ডয়েচল্যান্ডের মুখাপাত্র জানিয়ে দেয়, এ বিষয়ে তারা মোটেও প্রস্তুত ছিল না। তাদের এমন একজন নেতা যে ইসলামের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়ছেন, সেটা তারা টেরই পায়নি। তবে, এ ঘটনায় দলের কোনো ক্ষতি হবে না বলেও জানায় তারা।
তবে জার্মান পত্রিকাগুলো বলছে, জার্মানিতে দলে দলে আসা মুসলিম শরনার্থীরাই তার মধ্যে পরিবর্তন ঘটিয়েছে। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে নিজেকে পরিবর্তন করে ফেলেন আর্থার ওয়েগনার।
আইএইচএস/