ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

চাকরি হারালেন বিজেএমসির প্রায় আড়াইশ ক্রীড়াবিদ

রফিকুল ইসলাম | প্রকাশিত: ০৬:৪৪ পিএম, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) সাম্প্রতিক অর্থ সংকটের কোপটা বেশি পড়লো ক্রীড়াবিদদের ওপর। প্রতিষ্ঠানটি স্বাধীনতার পর থেকে বিশাল অবদান রেখে আসছিল দেশের খেলাধুলায়। বিশেষ করে নারী খেলোয়াড়দের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা প্রশংসনীয়।

এগারোটি ডিসিপ্লিনে এই সরকারি প্রতিষ্ঠানটি খেলাধুলায় অংশ নিয়ে আসছে। জন্ম দিয়েছে বহু স্বনামধন্য ক্রীড়াবিদ, যারা দেশের বাইরেও জাতীয় পতাকা উঁচিয়ে ধরেছেন। কিন্তু হঠাৎ করেই দুঃসংবাদ এ প্রতিষ্ঠানের ক্রীড়াবিদদের। বিভিন্ন ডিসিপ্লিনে ২৬৭ জন ক্রীড়াবিদ হাজিরা কার্ডে (অস্থায়ী ভিত্তিতে) চাকরি করতেন এ প্রতিষ্ঠানে। তাদের মধ্যে প্রায় আড়াইশজনের চাকরি নেই।

অর্থ সংকটের কারণে প্রতিষ্ঠানটি ফুটবলে দল গঠন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল গতবছর। তখনই চাকরি হারানোর শঙ্কায় পড়েছিলেন বিজেএমসি নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়রা। 

স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন দিন দাপটের সঙ্গে ফুটবল খেলা বিজেএমসি মাঝে হারিয়ে গিয়েছিল। ২০১১ সালে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আরিফ খান জয় বিজেএমসির পরিচালক হিসেবে যোগ দেয়ার পর প্রতিষ্ঠানটিকে ফুটবলে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেন এবং দলগঠন করে ২০১২ মৌসুমে সরাসারি অংশ নেয় বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে। দেশের শীর্ষ পর্যায়ে ৭ মৌসুম খেলে আবার তারা মুখ ফিরিয়ে নিলো ফুটবল থেকে।

বিজেএমসি গত মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ থেকে অবনমন হয়ে যায়। তার আগেই তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অর্থ সংকটের কারণে ফুটবলে আর দল গঠন করবে না। ২০১৯ সালের ২০ মে বিজেএমসির বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল- আর্থিক সংকটের কারণে পরবর্তী মৌসুম হতে তাদের অর্থায়নে ‘টিম বিজেমমসি’র ফুটবল পরিচালনা সম্ভব নয়।

বিজেএমসি তাদের এই সিদ্ধান্ত চিঠি দিয়ে বাফুফেকে জানিয়ে দিয়েছিল গত বছরের ৩০ জুলাই। তৎকালীন সচিব একেএম তারেক স্বাক্ষরিত চিঠিতে বিজেএমসি বলেছিলেন, ‘আগামীতে স্পন্সর পেলে তারা ফুটবলের কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।’

প্রতিষ্ঠানটির তৎকালিন চেয়ারম্যান শাহ মো.নাছিম ফুটবল দল বিলুপ্তির পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছেন বলে জানিয়েছে বিজেএমসির কয়েকটি সূত্র। বিজেএমসি নাম প্রত্যাহার করে নেয়ায় এখন ১৪ দলের পরিবর্তে ১৩টি নিয়ে চলছে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের দলবদল।

বিজেএমসি ফুটবল (পুরুষ) দল হয়েছিল চুক্তিভিত্তিক খেলোয়াড় দিয়ে। আর অন্যান্য ডিসপ্লিনের খেলোয়াড়রা প্রতিষ্ঠানটির বেতনভূক্ত কর্মচারি (হাজিরা কার্ড)। প্রায় এক ডজন ডিসিপ্লিনে বিজেএমসিতে হাজিরা কার্ডে চাকরি করতেন ২৬৭ জন ক্রীড়াবিদ।

প্রতিষ্ঠানটি অর্থ সংকট দেখিয়ে তার মধ্যে প্রায় আড়াইশ জনের মতো ক্রীড়াবিদের হাজিরা কার্ড বাতিল করেছে। ইতিমধ্যে সেই সিদ্ধান্ত তাদের বিভিন্ন মিলে পাঠিয়েও দেয়া হয়েছে। দুই একটি ছাড়া প্রায় সব মিলই হাজিরা কার্ডে বেতন পাওয়া ক্রীড়াবিদদের টাকা পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে। যেসব মিল এখনও সিদ্ধান্ত পায়নি তাদের অধীনে থাকা ক্রীড়াবিদদরা ফেব্রুয়ারিতে সাপ্তাহিক বেতন পেয়েছেন।

বিজেএমসিতে মূলত মেয়েদের দলই বেশি। হ্যান্ডবল, ভলিবল, কাবাডি ডিসিপ্লিনে শুধু মেয়েদের দল ছিল তাদের। সাইক্লিং, অ্যাথলেটিকস, জিমন্যাস্টিক, তায়কোয়ানদো, উশু, ভারোত্তোলন ও ফুটবলে ছিল নারী ও পুরুষ উভয় দল।

আড়াইশ ক্রীড়াবিদের হাজিরা কার্ড বাতিল হওয়ায় এখন হ্যান্ডবল আর সাইক্লিং ছাড়া অন্য ডিসিপ্লিনে খেলাধুলায় অংশ নেয়াই কঠিন হবে প্রতিষ্ঠানটির। আগামী ১ থেকে ১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গেমস হবে। বিজেএমসি ১১ ডিসিপ্লনে খেলবে বলে প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু তারা এখন দল কিভাবে গঠন করবে তা নিয়ে আছে সংকটে।

বিজেএমসির ক্রীড়াবিদদের এমন এক সময় হাজিরা কার্ড বাতিল হলো, যখন প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীদের বেতন প্রায় দ্বিগুণ করেছে সরকার। হাজিরা কার্ড বাতিল হওয়া এক নারী ক্রীড়াবিদ বলেন, ‘বর্তমান সরকার খেলাধুলায় বিশাল অবদান রেখে আসছে। বিশেষ করে আমাদের প্রধানমন্ত্রী ক্রীড়াবান্ধব ব্যক্তিত্ব। মেয়েদের খেলার বিষয়ে তিনি সব সময় উৎসাহ দিয়ে থাকেন। অথচ এ সময়ে আমরা চাকরিই হারালাম। বিজেএমসিতে সবই ঠিক আছে, চাকরি গেলো শুধু ক্রীড়াবিদদের।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রউফ জাগো নিউজকে বলেছেন, ‘আমরা ১৮০০ অস্থায়ী কর্মচারী-কর্মকর্তার নিয়োগ বাতিল করেছি। এর মধ্যে আড়াইশ’র মতো ক্রীড়াবিদও পড়ে গেছেন। আমাদের কী করার আছে? তবে আমাদের খেলাধুলার বিষয়ে অনেক নজর আছে। আমরা এ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। এপ্রিলে অনুষ্ঠিতব্য বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গেমসের জন্য আমরা প্রায় একশ ক্রীড়াবিদকে নতুন করে নিয়োগ দেবো। যারা ভালো করবে তাদের ব্যাপারে আমার ইতিবাচক ভাববো।’

আরআই/এসএএস/এমকেএইচ