অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খেলাধুলায় পৃষ্ঠপোষকতার পরিকল্পনা সরকারের
দেশে ক্রীড়া ফেডারেশন, অ্যাসোসিয়েশন ও সংস্থা মিলে সংখ্যাটা ৫৩। ২০১৮ সালটা ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর ‘হাফ সেঞ্চুরি’ পূরণের বছরও। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ সর্বশেষ যে অ্যাসোসিয়েশনটির জন্ম দিয়েছে তার নাম ‘জুজুৎসু অ্যাসোসিয়েশন।’ কী অদ্ভূত নাম, তাই না? এটি মার্শাল আর্টের একটি খেলা। এর আগে অনুমোদন পাওয়া ৩ অ্যাসোসিয়েশন হচ্ছে- চুকবল, থ্রোবল ও সেপাকটাকরো (কিক ভলিবল)।
এত ফেডারেশন কেন? ক্রীড়াঙ্গনে এ প্রশ্ন অনেক দিনের। উত্তর মিলেনি। বরং প্রতি বছর ফেডারেশন/অ্যাসোসিয়েশনগুলোর তালিকায় যোগ হচ্ছে নতুন নতুন নাম। তালিকা লম্বা হলেও খেলাধুলায় সরগরম হচ্ছে না ক্রীড়াঙ্গন। বেশিরভাগ ক্রীড়া ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশন বছর কাটায় ঘুমিয়ে। স্টেডিয়াম পাড়ায় ফেডারেশনের নামে একটা জায়গা পাওয়াটাই তাদের বড় প্রাপ্তি। ভাড়া দিতে হয়না, বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের বিল দিতে হয় না। সেখানে বসে ব্যক্তিগত ব্যবসাও সামলানো যায়। উল্টো বছরে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের একটা অনুদান।
এক সঙ্গে এতগুলো ফেডারেশনকে অনুদান দিতে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ব্যয় হয় বছরে প্রায় ৪ কোটি টাকা। এর বাইরে এসব ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনের পেছনে অন্যান্য খরচতো আছেই। কিন্ত হাতে গোনা কয়েকটি খেলা ছাড়া বাকিগুলোর আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে সাফল্য আনার কোনো সম্ভাবনা নেই। এমন কি স্থানীয়ভাবেও কার্যক্রম নেই অনেক ফেডারেশনের।
বিলম্বে হলেও সরকার খেলাধুলায় ঢালাও পৃষ্ঠপোষকতা না করে একটি নীতিমালা তৈরি করতে যাচ্ছে। যে নীতিমালায় খেলাধুলার পৃষ্ঠপোষকতা করা হবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে সে প্রক্রিয়া শুরুও করেছে। সম্ভাবনাময় খেলাগুলো চিহ্নিত করার জন্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার একটি সভা করেছে। মন্ত্রণালয়, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, ক্রীড়া পরিদপ্তর, বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) ও বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ) এর প্রতিনিধিদের নিয়ে এ সমন্বয় সভায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কোন কোন খেলাকে সামনে রাখা হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
সভায় উপস্থিত থাকা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব মো. মাসুদ করিম জাগো নিউজকে বলেছেন, ‘আমাদের ক্রীড়া ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশন পঞ্চাশের বেশি। আমরা সম্ভাবনাময় খেলাগুলো বাছাই করে সেগুলোকে আলাদা করে পৃষ্ঠপোষকতা করবো। কেবল বরাদ্দই বাড়বে না তাদের, অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধাও বৃদ্ধি করা হবে ওই ফেডারেশনগুলোর। আমরা বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে ফেডারেশন নিয়ে কাজ করবো।’
যে সব খেলার আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে সাফল্য আনার সম্ভাবনা আছে সেগুলো বাছাই করবে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। তবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কতগুলো খেলাকে বিশেষ বরাদ্দের আওতায় আনা হবে তা এখনো ঠিক হয়নি। ‘আমরা তো কেবল কার্যক্রম শুরু করলাম। সব কিছু বিবেচনা করেই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাই এখনই বলা যাবে না কতগুলো ফেডারেশনকে অগ্রাধিকার ভিত্তির তালিকায় আনা হবে’-বলেছেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব।
এ নীতিমালায় যে খেলাগুলো পেছনের তালিকায় পড়বে তাদের সরকারের চলমান সুযোগ-সুবিধাগুলো অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে মো. মাসুদ করিম বলেছেন, ‘এসব খেলা কোনোভাবেই বঞ্চিত হবে না। বরং বরাদ্দ আগের চেয়ে বাড়বে। আর যাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে তাদের পৃষ্ঠপোষকতা বাড়ানো হবে। ওইসব খেলা অবকাঠামোও উন্নয়ন করা হবে।’
আরআই/এমএমআর/আরআইপি