মুরগির খামারি সেই পেরেসিচ এখন ক্রোয়েশিয়ার নায়ক
বন্ধুরা তাকে ডাকতো কোকা (মুরগি) বলে। কারণ, কিশোর বয়সে বাবার মুরগির খামারে সহযোগিতা করতে ইভান পেরেসিচ। বন্ধুদের সেই মশকরায় কান দিতেন না কিশোর পেরেসিচ। মন দিতেন নিজের কাজেই। সেই পেরেসিচই এখন বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ক্রোয়েশিয়াকে।
ক্রোয়েশিয়ার নিজ শহরের উপকণ্ঠে ছিল পেরেসিচের বাবার মুরগির খামার। সেখানে বাবাকে সহায়তার পাশপাশি স্থানীয় একটি ফুটবল ট্রেনিং একাডেমিতেও খেলতেন পেরেসিচ। এখানে ১০টি বয়সভিত্তক ক্যাটাগরিতে বাচ্চাদের ফুটবল ট্রেনিং দেয়া হয়ে থাকে। যে ক্লাবটির প্রধান কাজই হলো প্রতিভাবান ফুটবলারদের বড় বড় ক্লাবে বিক্রি করে এজেন্ট হিসেবে। পেরেসিচের বাবা যখন মুরগির খামারের আয় দিয়েও সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তখন ছেলেকে বিক্রি করে দেয় ফ্রান্সের দ্বিতীয় স্তরের লিগের দল সসাক্সে।
ওই ক্লাবের ‘বি’ দলের হয়েই ২০০৯ সালে সিনিয়র ক্যারিয়ার শুরু করা পেরেসিচ এখন ইতালির জায়ান্ট ইন্টার মিলানের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। সেই সঙ্গে ক্রোয়েশিয়া জাতীয় দলের। রাশিয়া বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে যখন ০-১ গোলে পিছিয়ে তখন সেই পেরেসিচ ত্রাতার ভূমিকায় দুর্দান্ত এক গোল করে ম্যাচে ফেরান ক্রোয়েশিয়াকে। অতিরিক্ত সময় মানজুকিচের গোলে ক্রোয়েশিয়া ফাইনালে উঠলেন পেরেসিচ ছিলেন এ ম্যাচর প্রধান চালিকাশক্তি।
গোল করে ম্যাচের মোড় ঘুড়িয়েছেন। পারফরম্যান্স দিয়ে ম্যাচসেরা পুরস্কারও পেয়েছেন এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। ইংল্যান্ডবধের পর বুধবার রাতে পেরেসিচ নিজের বাল্যজীবনের কথা বলেছেন। ক্যারিয়ারের এই যে পরিবর্তন তার সূচনা ফ্রান্স দিয়েই। তাইতো জিনেদিন জিদানের দেশের সঙ্গে তার আছে নানা স্মৃতিময় সময়।
সেমিফাইনালের আগে তার মায়ের সঙ্গে কী কথা হয়েছিল তাও সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন পেরেসিচ। ‘আমার মায়ের স্বপ্ন ছিল ফ্রান্সের সঙ্গে যেন আমরা ফাইনাল খেলি। আমরা পেরেছি। আমার মায়ের আশা পূরণ হয়েছে। আমি দলের হয়ে গোল করতে পেরেছি, এটা অবশ্যই খুশির। তবে এখনো আমাদের কাজ শেষ হয়নি। আমরা ট্রফি নিয়েই ঘরে ফিরতে চাই। তবে ফ্রান্সের বিপক্ষে ফাইনাল খেলবো যা আমার কাছে খুবই আনন্দের। আমি শিহরিত হয়ে উঠি, যখন ভাবি সেই দেশের বিরুদ্ধে ফাইনাল খেলবো যে দেশে ফুটবল খেলে প্রথম টাকার মুখ দেখেছিলাম- বলেছেন ইংল্যান্ডবধের অন্যতম নায়ক পেরেসিচ।
পেরেসিচ ইতালির ক্লাব ইন্টার মিলানে খেলছেন ২০১৫ সাল থেকে। জাতীয় দলে তার অভিষেক ২০১১ সালে। ক্রোয়েশিয়ার জার্সি গায়ে এ পর্যন্ত ৭২ ম্যাচ খেলে গোল করেছেন ২০টি। ক্রোয়াটদের অন্যরকম আশা-ভরসার প্রতীক এখন এক সময়ে মুরগির খামারে কাজ করা পেরেসিচ।
আরআই/বিএ