রেফারিই হারিয়ে দিয়েছেন কলম্বিয়াকে!
দ্বিতীয় রাউন্ডের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। মস্কোর স্পার্তাক স্টেডিয়ামে মুখোমুখি ইংল্যান্ড এবং কলম্বিয়া। হারলেই বিদায়। জিতলে উঠে যাবে পরের রাউন্ডে। এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচেই কি না রেফারি মার্ক গেইগারকে দেখা গেলো সম্পূর্ণ পক্ষপাতমূলক আচরণ করতে। পুরোপুরি ইংল্যান্ডের পক্ষ নিয়ে মাঠের মধ্যে বাঁশি বাজাতে। এমনকি পক্ষপাতদুষ্ট হয়েই তিনি কলম্বিয়ার বিপক্ষে পেনাল্টির বাঁশি বাজালেন এবং ওই এক পেনাল্টিতেই বিদায় ঘটে যায় লাতিন দলটির।
মস্কোর স্পার্তাক স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ড আর কলম্বিয়া ম্যাচের জন্য ফিফা রেফারি নিয়োগ দিয়েছে আমেরিকান মার্ক গেইগারকে। আমেরিকান রেফারি নিয়োগ দেয়া নিয়েই এখন কলম্বিয়ানদের বড় প্রশ্ন। কলম্বিয়ার অধিনায়ক রাদামেল ফ্যালকাও সরাসরি অভিযোগ করেছেন, রেফারিই তাদেরকে হারিয়ে দিয়েছেন। তার প্রশ্ন, কেন ইংরেজি ভাষাভাষী হওয়া সত্ত্বেও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আমাদের ম্যাচে আমেরিকান রেফারিকে ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হবে?
ফ্যালকাও প্রশ্ন তুলে দেন, ইংল্যান্ড এবং আমেরিকার ভাষা এক। তারা পরস্পর কথা-বার্তা, ভাব আদান-প্রদান খুব সহজেই করতে পারে। যে কারণে, দেখা গেছে ইংল্যান্ডের প্রতি বেশিই পক্ষপাতিত্ব করছেন রেফারি। অধিকাংশ সিদ্ধান্তই দিয়েছেন কলম্বিয়ার বিপক্ষে। ফ্যালকাওয়ের অভিযোগের ভিত্তি সেখানেই। এ কারণেই তার দাবি, ‘রেফারি ইচ্ছা করেই হারিয়েছেন আমাদের। কারণ, তিনি সব সময়ই আমাদের বিপক্ষে বাঁশি বাজিয়েছেন।’
ম্যাচে মোট ৩৬টি ফাউল হয়েছে। যার ২৩টিই ধরা হয়েছে কলম্বিয়ার বিপক্ষে। এছাড়া মোট ৮টি হলুদ কার্ডের প্রয়োগ ঘটান রেফারি। যার মধ্যে ৬টিই দেখানো হয়েছে কলম্বিয়ার ফুটবলারদের। তারওপর ম্যাচের ৫৪ মিনিটে কার্লোস সানচেজের সঙ্গে বল দখলের লড়াইয়ে হ্যারি কেইন পড়ে গেলে তাকে ফাউল হিসেবেই গণ্য করেন রেফারি। এমনকি তিনি ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির (ভিএআর) সহযোগিতা নেয়ারও প্রয়োজন মনে করেননি।
কলম্বিয়ান ফুটবলারদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে তিনি এমনভাবে ধমকাচ্ছিলেন যেন, যে সিদ্ধান্ত তিনি দেবেন সেটা মেনে নিতেই হবে। এ ছাড়া উপায় নাই। শেষ পর্যন্ত কলম্বিয়াকে মেনে নিতে হলো এবং পেনাল্টি থেকে গোল করে ইংল্যান্ডকে এগিয়ে দেন হ্যারি কেইন।
ম্যাচ শেষে রাদামেল ফ্যালকাও নিজের অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার কাছে খুবই অদ্ভূত লেগেছে এই ম্যাচে তারা (ফিফা) একজন আমেরিকার রেফারি নিয়োগ দিয়েছে। এই প্রক্রিয়াটাই তো অনেক বেশি সন্দেহের জন্ম দেয়। কারণ, তিনি শুধুমাত্র ইংরেজিতেই কথা বলতে পারেন। যে কারণে অনেকগুলো নিশ্চিত পক্ষপাতিত্ব করেছেন। এমনকি একটি ছোট কারণেই তিনি আমাদের জালে বল জড়িয়ে দেয়ানোর মত সিদ্ধান্ত দিয়ে ফেলেছেন। এটাই এখন আমার কাছে পরিস্কার।’
ফাউলের এই অমিল সত্ত্বেও ইংল্যান্ডের প্রায় সমান সমান খেলেছে কলম্বিয়া। বল পজেশন, টোটাল শট নেয়া এবং আক্রমণ- সব কিছুতেই সমান সমান ছিল কলম্বিয়ানরা; কিন্তু রেফারির এক সিদ্ধান্তই তাদেরকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেয়। ফ্যালকাও বলেন, ‘যখন খেলা ৫০-৫০ চলছিল, তখন রেফারি আমাদের অনেক বেশি ডিস্টার্ব করেছেন। তিনি সব সময়েই ইংল্যান্ডের পক্ষে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। যেটা আমাদের অনেক বেশি ক্ষতি করেছে। তিনি দুই দলের সঙ্গে সমানভাবে আরচরণ করেননি।’
ইংল্যান্ডের পক্ষে সিদ্ধান্ত দেয়া নিয়ে ফ্যালকাও বলেন, ‘যখন কোনো কিছু নিয়ে সামান্য সন্দেহ তৈরি হয়েছে, তড়িগড়ি করে তিনি সেই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন ইংল্যান্ডের পক্ষে। একটা বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডের মত গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে এ ধরনের ঘটনা ঘটা অবশ্যই লজ্জাজনক।’
শুধু রাদামেল ফ্যালকাওই নন, কলম্বিয়া কোচ হোসে পেকারম্যানও অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছেন রেফারি মার্ক গেইগরের দিকে। তিনিও অভিযোগ করেন, রেফারি ইংল্যান্ডের পক্ষেই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন সবচেয়ে বেশি। একই সঙ্গে তিনি ইংলিশদের আচরণ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। প্যাকারম্যান বলেন, ‘মাঠে ইংলিশরা যেন কলম্বিয়ানদের খেলোয়াড়ই মনে করছিল না। তাদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হলো, প্রতিপক্ষের ডি বক্সের মধ্যে প্রবেশ করো এবং পড়ে যাও। তাহলে রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজাবেন।’
হ্যারি কেইনের ফাউলকে ভূয়া উল্লেখ করে পেকারম্যান বলেন, ‘একজন খেলোয়াড় ভূয়া ফাউলের শিকার হওয়ার ভান ধরলো এবং তারা রেফারিকে দিয়ে অন্য খেলোয়াড়কেও হলুদ কার্ড দেখানোর চেষ্টা করছিল। এসব পরিস্থিতি তো পুরো ম্যাচের চিত্রই বদলে দেয়। এ ধরনের ম্যাচে এমন আচরণ কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।’
রেফারি মার্ক গেইগারের বিপক্ষে অভিযোগ এবার নতুন নয়। ২০১৮ সালে কোনো প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে তিনি প্রথম দায়িত্ব পালন করেন পর্তুগাল এবং মরক্কো ম্যাচে। ওই ম্যাচে রোনালদোর জার্সি চেয়ে তিনি বড় বিতর্কের জন্ম দেন। মরক্কান ফুটবলার নুরদিন আমরাবাত অভিযোগ করেন, মাঠেও গেইগার পক্ষপাতমূলক আচরণ দেখিয়েছেন এবং রোনালদোর প্রতি তার এত ভক্তি যে, তিনি সিআর সেভেনের জার্সিই চেয়ে বসেন। যদিও ফিফা এবং রেফারি গেইগার এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ উড়িয়ে দেন।
আইএইচএস/আরআইপি