প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ স্টেডিয়ামে সৌদি নারীরা
‘সেদিন সুদূর নয়-যে দিন ধরণী পুরুষের সাথে গাহিবে নারীর ও জয়’-কাজী নজরুল ইসলামের নারী কবিতার এই পংকক্তি বোধহয় সৌদি আরবের নারীরা প্রথমবার উচ্চস্বরে বলতে পারার সাহস পেল। ধর্মীয় রীতিনীতিতে আটকে রেখে দীর্ঘদিন যাবত নারীদের স্টেডিয়ামে যেতে বাঁধা দিয়ে রেখেছিল মুসলিম অধ্যুষিত দেশ সৌদি আরব। কিন্তু যুবরাজ সালমানের কল্যাণে যেন আশার আলো দেখতে পায় সে দেশের নারীরা।
‘ভিশন-২০৩০’এর লক্ষ্য নিয়ে নেমেই সৌদি আরবের সংস্কৃতিতে আমুল পরিবর্তন আনেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। যার একটি ছিল, স্টেডিয়ামে বসে সৌদি নারীদের খেলা দেখতে দেওয়া। তারই আলোকে, প্রথমবার বিশ্বকাপ স্টেডিয়ামে দেখা গেলো সৌদি নারীদের।
সৌদি নারীরা প্রথম স্টেডিয়ামে ম্যাচ দেখতে আসে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে। আল আহলি ও আল বাইতানের মধ্যকার ম্যাচটি প্রথমবারের মতো মাঠে বসে উপভোগ করে সৌদি নারীরা। এবার আরো বড় মঞ্চে আবির্ভাব হলো তাদের। মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী দিনেই সৌদি আরবের ম্যাচে দেখা গেল সেদেশের নারীদের।
সৌদি আরবের পতাকার রঙ্গে জিন্স, স্কার্ফ ও হিজাব পরে অনেক সৌদি নারী আসেন রাশিয়া বনাম সৌদি আরবের মধ্যকার ম্যাচটি দেখতে। সঙ্গে সৌদি আরবের পতাকাও ছিল। সেখানে তারা পুরুষদের সঙ্গে বসেই খেলা উপভোগ করেন।
তেমনই একজন হলেন নাদা আলতুয়াইজরি। সৌদি আরবের নাগরিক হলেও ১২ বছর বয়স থেকে বসবাস করেন ব্রিটেনে। ছোটবেলা থেকেই ফুটবল প্রিয় নাদা স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে এসে বলেন, ‘যদি আপনারা আমাদেরকে বড় পর্দায় দেখান তাহলে আমি বলতে পারি, আরো অনেক সৌদি নারীরা দেশকে সমর্থন দিতে রাশিয়ায় আসবে।
২৭ বছর বয়সী নাদা জানান এসেছিলেন সবুজ রঙের সৌদি পতাকা হাতে। রাশিয়ায় থাকা তার এক বন্ধু, নাদার মতে তিনি তার ভাইয়ের মত, তার মাধ্যমেই খেলা দেখতে এসেছেন তিনি। নারীদের এভাবে অবাধে চলাচল এক বছর আগেও ওমন ছিল না। তিনি বলেন, ‘পারদপক্ষে, আমরা নারী-পুরুষের সমানুতা অর্জন করেছি। আপনি ইচ্ছে অনুযায়ী যেকোন সৌদি নাগরিককে জিজ্ঞেস করুন, সেও একই কথা বলবে।’
স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে আসা অন্যান্য সৌদি নারীরা এসেছিলেন নিজ দেশের পতাকা হাতে। অনেকে মোহাম্মদ বিন সালমানের ছবি সম্বলিত পোস্টারও নিয়ে এসেছেন। সংস্কৃতির পালা বদলে ৩২ বছর বয়সী সালমান এখন সারা সৌদিতে উজ্জ্বল এক নাম।
নাদার মতো খেলা দেখতে এসেছেন সৌদি নারী রায়েল আল-মুতেইরি। মস্কোতে নিজের মা ও স্বামীর সঙ্গে এসেছেন সরকারি খরচে। ২৫ বছর বয়সী এই সরকারী কর্মকর্তা নারী বলেন, ‘আমি অনেক দূর থেকে এসেছি জাতীয় দলকে অনুপ্রেরণা যোগাতে। সৌদি নারীদের বর্তমান অবস্থান নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি। এটা দেশ এবং ফুটবল দলেরও গর্বের বিষয়।’
ফুটবল স্টেডিয়ামে খেলা দেখার পাশাপাশি জুন পাশ থেকেই সৌদি নারীরা সুযোগ পেয়েছেন গাড়ি চালাতে। ইতোমধ্যে অনেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে কাজও শুরু করে দিয়েছেন। প্রাচ্যের শিকল ভেঙ্গে সৌদি নারীদের বিশ্বকাপের মঞ্চে স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে আসা অনুপ্রেরণা জোগাবে অন্য নারীদেরও। তারা প্রমাণ করলেন, সৌদি নারীরাও এখন সমঅধিকার নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।
আরআর/এসএএস/জেআইএম