বিশ্বকাপে বাদ পড়াদের সেরা একাদশ
বিশ্বকাপকে সামনে রেখে জাতীয় দলের কোচেরা ২৩ সদস্যের চূড়ান্ত দল ঘোষণা করে ফেলেছে ইতোমধ্যেই। প্রতি দলে এই চূড়ান্ত ২৩ জনকে নির্বাচন করতে যেয়ে তাদের যে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়েছে তা বলাই বাহুল্য।
নিজেদের সেরা স্কোয়াড সাজাতে গিয়ে কোচদের নানান বিতর্কিক সিদ্ধান্তের বলি হতে হয়েছে সময়ের অনেক সেরা খেলোয়াড়দেরও। সেসব বাদ পড়া খেলোয়াড় নিয়েই আমাদের আজকের এই বাদ পড়াদের সেরা একাদশ:
গোলরক্ষক : জো হার্ট (ইংল্যান্ড)
ওয়েস্ট হাম ইউনাইটেডের গোলরক্ষক গত বিশ্বকাপে ছিলেন দলের প্রথম পছন্দ। কিন্তু এরপরই ফর্ম হারাতে থাকেন তিনি। সাবেক ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটিও তাকে ছেড়ে দেয় এ কারণে। তারপর তোরিনো ঘুরে এখন ওয়েস্ট হামে আছেন এ ইংল্যান্ড গোলরক্ষক। এ বছর মোটে আটটি ম্যাচ খেলেছেন হার্ট। আর তাই ইংল্যান্ড কোচ গ্যারেথ সাউথগেট দলে নেননি ইংল্যান্ডের একসময়ের নিয়মিত এই সেনানীকে।
ডিফেন্ডার : মার্কোস আলোন্সো (স্পেন)
বিশ্বকাপে বাদ পড়দের মধ্যে অন্যতম একজন চেলসির ফুলব্যাক মার্কোস আলোন্সো। প্রিমিয়ার লিগে তার দল চেলসি তেমন ভালো না করলেও দুর্দান্ত একটি মৌসুম কাটিয়েছেন তিনি। নিজের কাজ রক্ষণভাগ সামলানো ছাড়াও করেছেন নিয়মিত গোল। তার মতো ফ্রি-কিক বিশেষজ্ঞকে যে কোনো দলই নিজেদের দলে পেতে চাইবে। কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে অভিজ্ঞতাটা একটু কম তার। অভিষেক হয়েছে এ বছরেরই মার্চে। আর তাতেই হয়তো স্পেন কোচ লোপেতেগুইয়ের মন গলাতে পারেননি তিনি।
ডিফেন্ডার : ডেভিড লুইজ (ব্রাজিল)
জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চাপিয়েছেন ৫০ বার। গত বিশ্বকাপেও দলে ছিলেন। তাই তার দলে না থাকাটাকে অনভিজ্ঞতা বলে উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। কিন্তু গত বিশ্বকাপে ব্রাজিলের ভরাডুবির পরই জাতীয় দলে ব্রাত্য হয়ে পড়েন লুইজ। আর তিতে কোচ হবার পর থেকে তো একবারও সুযোগ পাননি। তিতে মিরান্ডা, সিলভা, মার্কুইনহোসের জায়গায় লুইজকে নেবেন এমন ভাবাটাও ভুল। তাই লুইজের বিশ্বকাপের দলে জায়গা না পাওয়াটা অনুমিতই ছিল।
ডিফেন্ডার : আয়মেরিক লাপোর্তে (ফ্রান্স)
জাতীয় দলের হয়ে এখনো অভিষেক হয়নি ম্যানচেস্টার সিটির ডিফেন্ডার আয়মেরিক লাপোর্তের। তাই দিদিয়ের দেশমের চূড়ান্ত ২৩ সদস্যের দলে তার অন্তর্ভুক্তি না থাকাটা অবাক করা কোনো ব্যাপার নয়। বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে ফ্রান্স দলে থাকলেও শেষ পর্যন্ত মাঠে নামা হয়নি তার। দেশম তাকে বাদ দিয়েই যে দল ঘোষণা করবেন সেটা তাই অনুমিতই ছিল।
মিডফিল্ডার : ফ্যাবিনহো (ব্রাজিল)
মোনাকোর হয়ে দুর্দান্ত এক মৌসুম কাটানোর পরও তিতের চূড়ান্ত ২৩ সদস্যের দলে জায়গা হলো না ফ্যাবিনহোর। এর আগে দুটি কোপা আমেরিকা দলে থাকলেও মাঠে নামা হয়নি তার। জাতীয় দলের হয়েও মাঠে নেমেছেন চারবার। তিতে কোচ হয়ে আসার পর আর দলে ডাক পাননি সদ্য লিভারপুলে যোগ দেয়া এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার। ক্যাসেমিরো আর ফার্নান্দিনহোকে টপকে তিতের দলে ফ্যাবিনহো জায়গা পাবেন এমনটা আশা করাটা ভুলই বলা চলে।
মিডফিল্ডার : জ্যাক উইলশেয়ার (ইংল্যান্ড)
তর্কসাপেক্ষে জ্যাক উইলশেয়ারকে দলের বাইরে রাখতেই সবচেয়ে বেশি চিন্তা করতে হয়েছে দলটির কোচ গ্যারেথ সাউথগেটকে। যদিও আর্সেনালের হয়ে বলার মতো খেলেননি তিনি কিন্তু থ্রি লায়ন্সদের হয়ে এ বছর বেশ কয়েকটি প্রীতি ম্যাচেই মাঠে ছিলেন তিনি।
মিডফিল্ডার : রাদজা নাইঙ্গোলান (বেলজিয়াম)
বর্তমান সময়ের সেরা মিডফিল্ডারদের একটি তালিকা করা হলে রাদজা নাইঙ্গোলান তাতে সহজেই ঢুকে যাবেন। এ মৌসুমে ইতালিয়ান ক্লাব রোমার দুর্দান্ত পারফম্যান্সের অন্যতম কারিগরও ছিলেন এ বেলজিয়ান মিডফিল্ডার। তাই বেলজিয়াম কোচ রবার্তো মার্টিনেজ যখন সেই নাইঙ্গোলানকে বাইরে রেখেই চূড়ান্ত দল ঘোষণা করলেন তখন পুরো বিশ্বই এতে অবাক হয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে কোচ রবার্তো মার্টিনেজের সঙ্গে শীতল সম্পর্কের জন্যই দলে জায়গা হয়নি এ রোমা মিডফিল্ডারের।
মিডফিল্ডার : লেরয় সানে (জার্মানি)
সম্ভবত সবচেয়ে বড় চমক ছিল লেরয় সানের জার্মানির চূড়ান্ত দলে জায়গা না পাওয়াটা। ম্যানচেস্টার সিটির এ উইঙ্গার এ মৌসুমে নির্বাচিত হয়েছেন পিএফএর বর্ষসেরা তরুণ খেলোয়াড়। দুর্দান্ত এক মৌসুম কাটিয়েছেন ক্লাবের হয়ে। করেছেন ১৪টি গোল এবং ১৯টি অ্যাসিস্ট। ম্যানচেস্টার সিটির লিগ জয়ের পেছনেও তার অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য। তবে জাতীয় দলের হয়ে এখনো বলার মতো কোনো ম্যাচ খেলতে পারেননি সানে। ১২টি ম্যাচ খেলেও গোলশূন্য। সম্ভবত এজন্যই ক্লাবে এমন অসাধারণ পারফর্মেন্স থাকার পরও তাকে দলে নেননি জার্মানির কোচ জোয়াকিম লো।
ফরোয়ার্ড : অ্যান্থনি মার্শিয়াল (ফ্রান্স)
আরেক চমক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ফরোয়ার্ড অ্যান্থনি মার্শিয়ালের দলে জায়গা না পাওয়া। গত ইউরোতেও ফ্রান্স দলে ছিলেন তিনি। এরপর নিয়মিত ফ্রান্সের হয়ে বাছাইপর্বের ম্যাচও খেলেছেন। কিন্তু তাও তাকে দলে রাখেননি ফ্রান্স কোচ দিদিয়ের দেশম। তবে ২২ বছর বয়সী এই ফরাসি ফরোয়ার্ডকে স্ট্যান্ডবাই তালিকায় রেখেছেন দেশম। অর্থাৎ কেউ ইঞ্জুরিতে পড়লেই কপাল খুলবে মার্শিয়ালের।
ফরোয়ার্ড : মাউরো ইকার্দি (আর্জেন্টিনা)
এবারের সিরি’আ তে ৩৪টি ম্যাচ খেলে ২৯টি গোল করেছেন ইন্টার মিলান অধিনায়ক মাউরো ইকার্দি। এতো অসাধারণ পারফর্মেন্স দিয়েও জাতীয় দলের কোচ সাম্পাওলির মন গলাতে পারেননি ইকার্দি। তবে সাম্পাওলির পছন্দের তালিকায় কখনোই ছিলেন না এ ইন্টার মিলান স্ট্রাইকার। আর সেটারই বলি হতে হলো মাউরো ইকার্দিকে।
ফরোয়ার্ড : আলভারো মোরাতা (স্পেন)
গত ইউরোতে দলে থাকলেও এ বছর যেন ফর্মটা যাচ্ছেতাই যাচ্ছিল এ চেলসি স্ট্রাইকারের। আর তখনই তার বিশ্বকাপ খেলা শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিল। অবশেষে সেই শঙ্কাই সত্যি হলো। লোপেতেগুইয়ের ঘোষণা করা ২৩ সদস্যের দলে জায়গা পেতে ব্যর্থ হয়েছেন এ চেলসি স্ট্রাইকার।
ডিকেটি/এসএএস/জেআইএম