ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে সরকারি অনুমতি পত্রে নাম নেই মাশরাফির
তার টেস্ট খেলা নিয়ে রাজ্যের কথা-বার্তা। চারদিকে জোর গুঞ্জন- ‘আবার টেস্টে ফিরছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা।’ দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সব সময়ের অন্যতম সেরা ও কুশলী মিডিয়াম পেসারকে আবার টেস্টে ফিরিয়ে আনার চিন্তা ভাবনাও নাকি চলছে ভিতরে ভিতরে।
মাশরাফি নিজে থেকে মিডিয়ার কাছে আবার সাদা পোশাক ও লাল বলের ক্রিকেটে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ না করলেও তার ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়ানোর আগে টেস্ট খেলার একটা সুপ্ত বাসনা আছে তার নিজের মধ্যেও।
যদিও ফিটনেস ধরে রাখার কারণেই খেলতে নামা। তারপরও বিসিএলের শেষ রাউন্ডে প্রাইম ব্যাংক দক্ষিণাঞ্চলের হয়ে মাশরাফির মাঠে নামাকে কেন্দ্র করে অনেক প্রশ্নের জন্ম হয়েছে। তবে কি সত্যি সত্যিই আবার টেস্ট দলে ফেরার ইচ্ছে মাশরাফির?
এমনকি বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও তার টেস্ট দলে ফেরা নিয়ে কথা বলেছেন। টেস্ট অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও নাকি পেসার মাশরাফিকে টেস্ট দলে পেতে আগ্রহী! তার উদ্বৃতি দিয়ে ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগে জাগো নিউজকে জানিয়েছেন এ তথ্য।
ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফির টেস্ট দলে ফেরা নিয়ে বাজারে নানা মুখরোচক কথা-বার্তা। ক্রিকেট পাড়া, ক্রিকেট ভক্ত-অনুরাগী মহল এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সেন্টিমেন্ট দেখে মনে হচ্ছে মাশরাফি বুঝি টেস্ট দলে ফিরে আসছেন আবারও! মনে হচ্ছে যেন, তার আবার টেস্ট দলে নাম লিখানো এখন শুধুই সময়ের ব্যাপার। কেউ কেউ ধরেই নিয়েছেন আগামী জুন মাসে টাইগাররা যে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যাচ্ছে, সেই দলে থাকছেন মাশরাফি বিন মর্তুজার নামও।
এই যখন অবস্থা, ঠিক তখন মিললো এক বোমা ফাটানো খবর। যা দেখে, শুনে ও জেনে মূর্ছা যেতে পারেন অনেক মাশরাফি সমর্থক। বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে যাবেন অতিবড় বাংলাদেশ ক্রিকেট ভক্ত।
সেটা হলো, আবার টেস্টে ফেরা বহুদূরে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওপেনিং বোলারের ভূমিকায় দেখা যাওয়াতো অলিক কল্পনা- ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফির ওয়েস্ট ইন্ডিজ যাওয়া নিয়েই তৈরি হয়েছে দারুণ এক ধুম্রজাল।
অন্যান্য বিদেশ সফরের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরকে সামনে রেখে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় যে সরকারি অনুমতি (গভর্নমেন্ট অর্ডার বা জিও) পত্র দিয়েছে, সেখানে নাম নেই মাশরাফির।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব তৌফিক ইমাম স্বাক্ষরিত ওই অনুমতি পত্রে ২২ জন ক্রিকেটারের নাম রয়েছে। যাদের সবাই টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের সম্ভাব্য স্কোয়াডে জায়গা পাবার মতো।
কিন্তু ওই ২২ জনের তালিকায় নেই মাশরাফির নাম। কেন সরকারি অনুমতি পত্রে নেই মাশরাফির নাম? এটা কি ভুল? এ ভুল কাদের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের? না বিসিবির? নাকি মাশরাফিকে ছাড়াই সাজানো হবে ওয়ানডে স্কোয়াড?
হোক তা ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, সাঁতার, শ্যুটিং কিংবা অ্যাথলেটিক... জাতীয় দল বিদেশ সফরের আগে সরকারি অনুমতি প্রয়োজন। এটা ভিসা পাবার ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর দলিল বলে গণ্য হয়। সে জন্যই বিভিন্ন সময় বিদেশে সিরিজ খেলতে যাওয়ার আগে ক্রিকেট দলও সরকারি অনুমতিপত্র (জিও) নেয়। এবারও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরকে সামনে রেখে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে অনুমতি চায় বিসিবি এবং বিসিবির দেয়া খেলোয়াড় তালিকা দেখেই ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি পত্র পাঠানো হয়েছে।
সেই জিও‘তে মাশরাফির নাম না থাকায় উঠেছে নানা প্রশ্ন। এদিকে এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে বিসিবি প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দীন সুজনের সাথে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। জাগো নিউজের পক্ষ থেকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। জানা গেছে তিনি অসুস্থ।
তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফির নাম না থাকার কারণ অজ্ঞাতই থেকে গেছে। এদিকে কেউ কেউ হয়ত ভাবছেন, যেহেতু আগে টেস্ট তারপর ওয়ানডে এবং সবশেষে টি টোয়েন্টি সিরিজ- তাই হয়ত মাশরাফির নাম রাখা হয়নি।
এমন প্রশ্ন উঠলেও সেটা অবান্তর মনে হবে। কারণ যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে যে সরকারি অনুমতি দেয়া হয়েছে তার শিরোনামে পরিষ্কার বলা হয়েছে, ‘আগামী ২৪ জুন থেকে ৬ আগস্ট ২০১৮ তারিখ পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠেয় দুটি টেস্ট, তিনটি একদিনের (ওডিআই) এবং তিনটি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট সিরিজে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ দলের ২২ সদস্যর সরকারি অনুমতি পত্র।’
তবে এটা সত্য যে, জিও-তে শুধু ২২ ক্রিকেটারের নাম আছে। কোচ কোর্টনি ওয়ালশ, ট্রেনার মারিও ভিল্লাভারায়ন, ফিজিও এবং ম্যানেজার হিসেবে কারো নাম নেই সেখানে। সুতরাং, সেখানে একটা ফাক-ফোঁকর রয়েই গেছে।
এমনও হতে পারে, হয়তো যেহেতু দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের পর ওয়ানডে সিরিজ। তাই পরে কোচ, সহকারী কোচ, বোলিং কোচ, ফিজিও, ট্রেনার এবং ম্যানেজারের সাথে মাশরাফিরও জিও করানো হবে। তবে প্রাথমিকভাবে যে ২২ ক্রিকেটারের নামে সরকারি অনুমতি পত্র এসেছে, সেখানে মাশরাফির নাম নেই।
যাদের নামে জিও করা হয়েছে, সেই ২২ ক্রিকেটার হলেন
সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, ইমরুল কায়েস, লিটন কুমার দাস, মুশফিকুর রহীম, সাব্বির রহমান (রোমান), মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, মুমিনুল হক, আফিফ হোসেন, আরিফুল হক, মেহেদি হাসান মিরাজ, নুরুল হাসান সোহান, নাজমুল ইসলাম অপু, রুবেল হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান, শফিউল ইসলাম, সাইফউদ্দীন, আবুল হাসান (রাজু) , আবু হায়দার (রনি) ও আবু জায়েদ চৌধুরী (রাহি)।
এআরবি/আইএইচএস/এমএস