পিএসজিকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ
একেই বলে বিগ ম্যাচ খেলোয়াড়। তার ওপর ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে বলা হচ্ছিল, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কিং। পিএসজির বিপক্ষে মাঠে নামার আগেই ৬ ম্যাচে করেছেন ৯ গোল। প্রতিটি ম্যাচেই তার কম করে ১টি হলেও গোল রয়েছে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের বিগ ম্যাচে সব সময় তিনিই রাজা- এখনও পর্যন্ত সেটাই প্রমাণ করে এসেছেন তিনি।
পিএসজির বিপক্ষে ম্যাচটি যখন ফুটবলীয় উত্তেজনার সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে, তখন রোনালদো আর নিজেকে গুটিয়ে বসে থাকতে পারেন না। প্রতিপক্ষ দলে থাক না নেইমার, এমবাপে কিংবা কাভানির মতো ফুটবলার। নিজেকে মেলে ধরার জন্য তো এমন বড় ম্যাচই রোনালদোর জন্য আদর্শ।
সুযোগটা অসাধারণভাবে কাজে লাগিয়েছেন রোনালদো। পিএসজির বিপক্ষে করলেন জোড়া গোল। প্রথমে গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়ার পরও সিআর সেভেনের জোড়া গোলে শেষ পর্যন্ত নেইমারের দল পিএসজিকে ৩-১ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে দিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ।
মাদ্রিদের হোম ভেন্যু সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে এই জয়ের ফলে কোয়ার্টার ফাইনালের পথে অনেকটাই এগিয়ে গেল চ্যাম্পিয়ন্স লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। রিয়ালের হয়ে বাকি গোলটি করেন মার্সেলো। পিএসজির হয়ে একমাত্র গোলটি করেন আদ্রিয়েন র্যাবিওট।
প্রথমে গোল করে পুরো মাদ্রিদকেই যেন স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল ফরাসি ক্লাব প্যারিস সেন্ট জার্মেই। ম্যাচের ৩৩ মিনিটে ডান পাশ থেকে সতীর্থের দেয়া পাস স্টপ করেন নেইমার। সেটিই ফাঁকায় পেয়ে যান আদ্রিয়েন র্যাবিওট। তার দারুণ বুদ্ধিদীপ্ত ডান পায়ের শট জড়িয়ে যায় রিয়ালের জালে।
অথচ তার আগে পরে রিয়ালের কতগুলো প্রচেষ্টা নস্যাৎ হয়ে যাচ্ছিল পিএসজির গোলমুখে গিয়ে। রোনালদো-বেনজেমাদের সামনে যেন চীনের প্রাচীরের মতো বিশাল দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন পিএসজি গোলরক্ষক আলফোনসে আরেওলা। ২৮তম মিনিটেই মার্সেলোর কাছ থেকে বল পেয়ে ছোটেন রোনালদো। সামনে শুধু গোলরক্ষক। দৌড়ে এসে জোরালো শট নেন তিনি। ঝাঁপিয়ে পড়ে নিজের মুখমণ্ডলে লাগিয়ে সেটিকে ঠেকিয়ে দেন পিএসজি গোলরক্ষক।
এর দুই মিনিট আগে একেবারে বক্সের সামনে ফ্রি কিক পেয়েছিলেন রোনালদো। তবে তার ফ্রি কিকটি পিএসজির বারের ওপর দিয়ে গ্যালারিতে চলে যায়। বলতে গেলে শুরু থেকেই আক্রমণে উঠে খেলতে থাকে রিয়াল। সুযোগটা নিতে থাকে পিএসজিও। তারাও পাল্টা আক্রমণে বারবার উঠে আসছিল রিয়ালের রক্ষণে।
৩০ মিনিটে এমন একটি আক্রমণে নেইমারের শট রক্ষা করেন গোলরক্ষক কেইলর নাভাস। মার্কো ভেরাত্তির কাছ থেকে বল পেয়ে শট নিয়েছিলেন নেইমার। ৩৩ মিনিটে তো তার অসাধারণ দক্ষতায় গোল করেন র্যাবিওট।
গোল হজম করার পর রিয়াল যেন আহত বাঘের মতো গর্জন করে ওঠে। ৩৭ মিনিটে গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন রোনালদো; কিন্তু তার শট বাইরে চলে যায়। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার খানিক আগে বক্সের মধ্যে টনি ক্রুসকে ফাউল করে বসেন জিওভানি লো সেলসো।
স্পট কিক নিতে আসেন রোনালদো। তার ডান পায়ের জোরালো শট জড়িয়ে যায় পিএসজির জালে। ঝাঁপিয়ে পড়ে বলের লাইনে গেলেও সেটিকে রক্ষা করতে পারেননি গোলরক্ষক আরেওলা। ১-১ সমতা নিয়ে বিরতিতে যায় রিয়াল এবং পিএসজি।
দ্বিতীয়ার্ধে যেখানে রিয়ালের আরও বেশি ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা, সেখানে তাদের আক্রমণের ধার ছিল যেন কম। দু’একটি আক্রমণ করলেও সেগুলো গিয়ে ঠেকে যাচ্ছে পিএসজির রক্ষণ দেয়ালের সামনে। সেই দেয়াল ভেদ করা গেলেও গোলরক্ষক আরেওলা যেন সীসাঢালা প্রাচীর। ভেদ করা অসম্ভব। আক্রমণভাগে করিম বেনজেমা তো বল নিয়ে বক্সের মধ্যে ঢুকতেই পারছিলেন না। যে কারণে, ৬৮ মিনিটে তাকে তুলে নিয়ে গ্যারেথ বেলকে মাঠে নামান কোচ জিদান।
বেল মাঠে নামার পর কিছুটা গতি বাড়ে রিয়ালের খেলায়। তবে, রিয়াল মাদ্রিদকে শেষ ১০ মিনিটে আমুল বদলে দিলেন মার্কো আসেনসিও। ৭৯ তম মিনিটে ইস্কোকে তুলে আসেনসিওকে মাঠে নামান জিদান। একই সময় কাসেমিরোকে তুলে নামান লুকাস ভাসকুয়েজকে।
আসেনসিও মাঠে নামার পরই যেন পুরো ম্যাচের চালচিত্র পাল্টে গেলো। দারুণ আক্রমণ শানালেন তিনি। পিএসজির হাফ থেকে বল উঠতেই দিলেন না। যার ফলশ্রুতিতে মাত্র ৩ মিনিটের ব্যবধানে আরও দুটি গোল করে বসে রিয়াল। ৮৩ মিনিটে বাম পাশ থেকে আসেনসিওর গোললাইন বরাবর পাস হাত দিয়ে ঠেকিয়ে দেন পিএসজির গোলরক্ষক আরেওলা। কিন্তু সামনেই দাঁড়ানো ছিলেন রোনালদো। তিনি শুধু হাঁটু দিয়ে একটু পুশ করলেন। তাতেই বল জড়িয়ে গেল পিএসজির জালে।
৮৬ মিনিটে আবারও মার্কো আসেনসিও। সেই বাম পাশ থেকেই দারুণ এক পাস দিলেন মার্সেলোকে। বক্সের মধ্যে বল পেয়ে ডান পায়ের শটে অসাধারণভাবে পিএসজির জালে জড়িয়ে দিলেন ব্রাজিলিয়ান এই তারকা। ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে গেলো রিয়াল। শেষ পর্যন্ত এই ব্যবধানেই ম্যাচ শেষ করলো রিয়াল মাদ্রিদ।
পিএসজি যতটা তর্জন-গর্জন করে এসেছে মাদ্রিদে খেলতে, ততটা বর্ষণ করতে পারেনি। নেইমার কিছু ক্ল্যাসিক ফুটবল দেখিয়েছেন সত্য, অন্যরা বিশেষ করে কাভানি, এমবাপেরা ছিলেন অনেকটাই নিষ্প্রভ। কাভানিকে তো ম্যাচের ৬৬ মিনিটের সময় তুলে নিতে বাধ্য হন কোচ উনাই এমেরি।
এই ম্যাচ হারলেও পিএসজির সামনে সুযোগ শেষ হয়ে যায়নি। ফিরতি লেগে তাদেরকে অন্তত ২-০ গোলে জিততে হবে। তাতে দুই লেগ মিলে দু’দলের গোল সংখ্যা হবে ৩-৩। অ্যাওয়ে গোলের সুবাধে এগিয়ে যেতে পারবে নেইমাররা। যদি ৩-১ ব্যবধানে জেতে, তাহলে হবে টাইব্রেকার। এছাড়া অন্য ব্যবধানে জিতলে সেটা হতে হবে অন্তত ৩ গোলের ব্যবধান। ফিরতি লেগের ম্যাচ মার্চের ৭ তারিখ।
আইএইচএস/বিএ