কুমিল্লাকে হারিয়ে ফাইনালে মাশরাফির রংপুর
ম্যাচের একেবারে শেষ বল। রুবেল হোসেনের বলে ক্যাচ তুলে দিলেন আল আমিন হোসেন। ঝাঁপিয়ে পড়ে সেই ক্যাচটা নিলেন মাশরাফি। এমনিতে হেরে বসে আছে কুমিল্লা। মাশরাফি ঝাঁপ দিয়ে ক্যাচটা না ধরলেও পারতেন; কিন্তু রংপুর রাইডার্সের অধিনায়ক বুঝিয়ে দিলেন, কোনো অবস্থানেই কোনো কিছুকেই ছাড় নয়। এতটা পেশাদারী মানসিকতা যে দলের সেই দলেরই তো ফাইনাল খেলার কথা। নানা ঘটনা আর নাটকীয়তার ম্যাচে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে ৩৬ রানে হারিয়ে দ্বিতীয় দল হিসেবে ফাইনালে নাম লিখিয়ে ফেললো মাশরাফি বিন মর্তুজার রংপুর রাইডার্স।
লক্ষ্যটা যখন ১৯৩ রান, তখন মানসিকভাবেই যেন হেরে বসেছিল। শেষ পর্যন্ত সেই মানসিক চাপ থেকে বেরই হতে পারল না তামিম ইকবালের দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। গ্রুপ পর্বে দুর্দান্ত খেলেছিল তারা। রাউন্ড রবিন লিগের শেষের আগের ম্যাচটি হেরেছিল খুলনার কাছে। তখন থেকেই যেন মানসিকভাবে পিছিয়ে পড়ছিল ভিক্টোরিয়ান্সরা। শেষ ম্যাচে যদিও সিলেট সিক্সার্সকে হারিয়েছিল তামিম ইকবালের দল।
কিন্তু প্রথম কোয়ালিফায়ারে এসে খেই হারাল ঢাকা ডায়নামাইটসের সামনে। হারতে হয়েছিল ৯৫ রানের বিশাল ব্যবধানে। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে এসে পরাজয়ের বৃত্ত থেকে আর বের হতে পারল না। রংপুর রাইডার্সের কাছে হার মানতে হলো ৩৬ রানে।
বৃষ্টির কারণে দু’দিনে ভাগ হয়ে যাওয়া ম্যাচটিতে জনসন চার্লস আর ব্রেন্ডন ম্যাককালামের অতি মানবীয় ব্যাটিংয়ে ১৯২ রান তোলার পরই অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায় মাশরাফিই আবার উঠছেন ফাইনালে। এর আগে ঢাকার হয়ে দু’বার এবং কুমিল্লার হয়ে একবার শিরোপা জিতেছিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। এবার আবারও শিরোপা জয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে তিনি। যদিও রংপুর এবারই প্রথম উঠলো ফাইনালে।
গতকাল (রোববার) সময়মতো খেলা শুরু হয়েছিল। ৭ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ৫৫ রান তোলার পরই বৃষ্টি নামে। শেষ পর্যন্ত বৃষ্টি থামলেও নানা ঘটনার পর খেলা আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত স্থগিত করা হয়। গতকাল যেখানে শেষ হয়েছিল, আজ সেখান থেকেই আবার খেলা শুরু হয়। কিন্তু জনসন চার্লস এবং ব্রেন্ডন ম্যাককালামের ১৫১ রানের অসাধারণ জুটির ওপর ভর করে কুমিল্লার সামনে বিশাল স্কোর দাঁড় করাতে সক্ষম হয় রংপুর।
১০৫ রানে অপরাজিত থাকেন চার্লস। তার ইনিংস সাজানো ছিল ৬৩ বলে ৯টি বাউন্ডারি এবং ৭টি ছক্কায়। ৪৬ বলে ৭৮ রান করেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। তার ইনিংসে ছিল ৯টি ছক্কার মার। বাউন্ডারি ছিল কেবল ১টি।
জবাব দিতে নেমে একেবারে শেষ বলে সবকটি উইকেট জারিয়ে রংপুরের ইনিংস শেষ হয়ে যায় ১৫৬ রানে। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতে যদিও ঝড় তুলেছিলেন তামিম ইকবাল এবং লিটন কুমার দাস। ৪.৫ ওভারেই ৫৪ রান তুলে ফেলেছিলেন দু’জন। কিন্তু ১৯ বলে ৩৬ রান করা তামিম মাশরাফির বলে ছক্কা মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন সোহাগ গাজীর হাতে।
পুরো ইনিংসে মাশরাফির উইকেট ওই একটি। কিন্তু সেটাই ছিল রংপুরকে ফাইনালে তোলার অন্যতম মাইলফলক। তামিম আউট হওয়া মানেই তো বড় রান তাড়া করতে নেমে কুমিল্লার পিছু হটা। ২৮ বলে ৩৯ রান করে আউট হন লিটন কুমার দাস। পুরো বিপিএলে এমনই মাঝারি মানের ইনিংস খেলে গিয়েছেন তিনি। প্রয়োজনের সময় তার ব্যাট থেকে আর বড় ইনিংস বের হলো না।
দুই ওপেনার দ্রুত আউট হয়ে যাওয়ার পরই মোটামুটি ব্যাকফুটে কুমিল্লা। এরই মধ্যে নিয়মিত পারফরমার ইমরুল কায়েস বিদায় নিলেন কোনো রান না করেই। শোয়েব মালিক ১৪ বল খেলে করলেন ১০ রান। ভিক্টোরিয়ান্সদের ব্যাকফুটে যাওয়ার এটাও একটা বড় কারণ। যদিও মিডল অর্ডারে মারলন স্যামুয়েলস আর জস বাটলার মিলে কিছুটা চেষ্টা করেছিলেন।
কিন্তু স্যামুয়েলস যখন ৩০ বলে ২৭ রান করেন, তখন ১৯২ তাড়া করা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। বাটলার ১৬ বলে খেলেন ২৬ রানের ইনিংস। নিয়মিত ব্যাটসম্যাসনরা দ্রুত ফিরে গেলে শেষ দিকে কুমিল্লার লেজ মুড়ে দেন রুবেল হোসেন। হাসান আলি, সাইফউদ্দিন, মেহেদী হাসান কিংবা আল আমিন হোসেনরা আউট হলেন রুবেল আর ইসুরু উদানার বলে। দু’জন মিলে নেন ৫ উইকেট। রুবেল ৩টি, উদানা ২টি।
আইএইচএস/আরআইপি