ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

দুই বছরেই সেরা পাঁচে যাবে বাংলাদেশ : সাকিব

প্রকাশিত: ১০:০৬ এএম, ২৮ জুন ২০১৫

তার যাত্রা শুরু ২০০৬-এ হারারে থেকে। বল হাতে ১০ ওভারে ৩৯ রানে ১ উইকেট। পাশাপাশি ব্যাট হাতে হার না মানা ৩০ রান। প্রথম ম্যাচেই নিজের জাত চিনিয়েছিলেন। এরপর প্রায় এক দশক। লাল-সবুজ জার্সির প্রতিনিধিত্ব করে এখন তিনি পৃথিবীর সেরা অলরাউন্ডার। বলছি বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেরা তারকা সাকিব আল হাসানের কথা।
 
অভিষেক যখন হয়েছিলো তখন বাংলাদেশ বড় দলগুলোর সাথে ভালো খেলার প্রত্যয় নিয়ে মাঠে নামত। আর এখন প্রতিপক্ষ যেই হোক না কেন রীতিমত চোখরাঙিয়ে জয় তুলে নেন তিনি। বাংলাদেশ দলের এই পরিবর্তনে সাকিবের ভূমিকা অপরিসীম। ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ের পর অলরাউন্ডার পারফরমেন্সে আবারো তিনি ক্রিকেটের সব সংস্করণে এক নম্বরে উঠে এসেছেন। সম্প্রতি ভারত সিরিজের পরই উইজডেন ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সদ্য সমাপ্ত সিরিজ ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাফল্যের ধারাবাহিকতার নানা চিত্র তুলে ধরেছেন তিনি। সংক্ষেপে সেই সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো-

ক্রিকেটে বাংলাদেশের যে কয়টি অর্জন, তার মধ্যে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়টাকে কোন অবস্থানে রাখবেন?

অবশ্যই এটি সেরা জয়ের মধ্যে একটি। তবে ২০০৭ বিশ্বকাপ ও ২০১৫ বিশ্বকাপে পরের রাউন্ডে উঠে আসাটাই আমার দৃষ্টিতে সেরা। এরপরেই ভারত, নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের মুহূর্তগুলোকে রাখবো।

এই সিরিজ জয়ের আগে আপনার কি মনে হয়েছে ভারতের বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে জেতা সম্ভব?

আসলে সেরকম ছিল না বিষয়টা! তবে ড্রেসিং রুমে সবার ইতিবাচক মনোভাব ছিল। যেভাবে আমরা ঘরের মাঠে খেলছি, এখন বলতে পারি নিজেদের দিনে যে কোনও দলকেই আমরা এখন হারাতে পারি। আমার এখন মনে হয় আমরা নিজেদের এবং পুরো বিশ্বকে দেখাতে পেরেছি ওয়ানডেতে আমরা কতটুকু শক্তিশালী। অবশ্যই শেষ ওয়ানডেতে ভালো খেলতে পারিনি। ওই ম্যাচে ব্যাটিংটা যদি ঠিকমতো হতো তাহলে জিততে পারতাম। সার্বিকভাবে এই সিরিজটা অসাধারণ একটা সিরিজ ছিলো। এখন আমরা দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের দিকে তাকিয়ে আছি।

এখনকার পারফরম্যান্সের পর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কি বাংলাদেশই ফেভারিট?

না! আমি এখনও বিশ্বাস করি দক্ষিণ আফ্রিকাই ফেভারিট। কারণ ওদের ভালো বোলিং আক্রমণ রয়েছে। কিন্তু আমাদের পরিকল্পনা সঠিকভাবেই বাস্তবায়ন করতে হবে। ভারতের বিপক্ষে চার পেসার খেলালেও, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এর উল্টোটা হতে পারে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে কোচ এবং অধিনায়কের ওপর।  

টেস্টে বাংলাদেশ সে ভাবে জ্বলে উঠতে পারেনি। এর কারণ কী?

আসলে টেস্ট ম্যাচ জিততে গেলে ২০ উইকেট প্রয়োজন। তবে যে পিচে আমরা খেলি সেগুলো মূলত ফ্ল্যাট। এখানে ব্যাটসম্যানরাই রান তুলতে পারে। তাই এসব পিচে উইকেট নেওয়া কষ্টসাধ্যই। যদি আমরা কিছু ভালো বোলার তৈরি করতে পারি, যারা ইনিংসে ৫-৬ উইকেট নিতে পারবে। তাহলে খেলাটি অবশ্যই পাল্টে যাবে। বলতে গেলে এই পিচের কারণেই সংগ্রাম করতে হয়।

কেন বাংলাদেশের সেরা মেধাবী তরুণদের টেস্ট ক্রিকেটে নেওয়া হয়না, বিশেষ করে তাসকিন আহমেদের মত খেলোয়াড়কে?

আপনার এটা নির্বাচকদের জিজ্ঞাসা করা উচিত, আমি জানিনা। আমি যতটুকু জানি তারা দিনে ২০/৩০ ওভার করার এবং পাঁচ দিন খেলার মত ফিট না। এটা কেউ কেউ বলে থাকে। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমি জানিনা টেস্ট খেলার জন্য তারা কতটা ফিট অথবা আনফিট।

কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে আইপিএল-এ খেলার অভিজ্ঞতা কেমন?

সে এক বিশাল অভিজ্ঞতা! কলকাতায় যাওয়াটাকে নিজের ঘরে যাওয়ার মতোই মনে হয়। এটা সত্যিই অসাধারণ অভিজ্ঞতা যখন আপনি গ্রেট সব ক্রিকেটারদের সঙ্গে ড্রেসিং রুম ভাগাভাগি করছেন। আমি কেকেআরের হয়ে খেলছি প্রায় চার-পাঁচ বছর ধরে। ওদের হয়ে যতোদিন পারবো ততদনই পারফর্ম করতে চাইব।

আপনার কি মনে হয় বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশের স্বীকৃতির জন্য অনেক লড়াই করতে হয়েছে?

হ্যাঁ! অবশ্যই। আপনার সুযোগের প্রয়োজন। যদি তা না পান তাহলে আপনি কিছুই করতে পারবেন না। আমরা একটি বা দুইটি (আন্তর্জাতিক পর্যায়ে) সুযোগ পাই যেখানে অন্য সবাই তিনটি বা চারটির বেশি সুযোগ পায়। সুতরাং আপনাকে চাপের মাঝে পারফর্ম করতে হয়। যদি আপনি সে পর্যায়ে পারফর্ম করতে পারেন তাহলে সমস্যা নাই। কিন্তু যদি না পারেন তবে আপনাকে সংগ্রাম করতে হবে। আপনি যদি অনেক বেশি ম্যাচ না খেলেন তাহলে আপনার পারফর্ম করার ক্ষমতা দেখানো কঠিন হয়ে যাবে।

এই সংগ্রাম কতখানি কঠিন?

আমি জানিনা এটা কিভাবে বর্ণনা করতে হয়। এর মানে এই না যে আমরা ক্রিকেট খেলছিনা। আমরা নিয়মিত খেলে যাচ্ছি। হ্যাঁ, সবাই আমাদের বড় ক্রিকেট জাতি হিসাবে দেখে না। এর কারণ আমাদের ধারাবাহিকতার অভাব ছিল। কিন্তু এখন আমরা বড় দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলে যাচ্ছি। তাই এখন সবাই আমাদের বড় দল হিসাবে স্বীকৃতি দিচ্ছে। আমরা একটা কাজই করতে পারি তাহলো পারফর্মেন্সের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে। তখন সবাই এমনিতেই  আমাদের চিনে যাবে।

দলে আপনার ভূমিকা কিভাবে দেখেন?

আমরা সবাই স্বাধীনভাবে খেলি। আমরা পরিস্থিতি বুঝে খেলার চেষ্টা করি। কিন্তু দলে কোনো ভূমিকা নিয়ে খেলার কোনো চাপ নেই। সবাই চায়, নিজের খেলা উপভোগ করে। নিজের মত করে শট খেলেই ফিরে আসে। কোচ সবাইকে স্বাধীনতা দিয়েছেন। বলেছেন, যদি তুমি হিট করে খেলার মত সক্ষম হও তাহলে খেল। যদি প্রথম বলেই ছয় মারার ক্ষমতা থাকে তাহলে তাই কর। আমাদের কোন চাপ নেই।

আপনি বাংলাদেশের অধিনায়ক ছিলেন। উপমহাদেশে অধিনায়কদের আলাদা চাপ থাকে। এই সিরিজে যা এমএস ধোনির ক্ষেত্রে দেখা গেছে। বিপক্ষ দলের অধিনায়কত্ব সম্পর্কে আপনার কি ধারণা?

যে সকল জিনিস তিনি অর্জন করেছেন, আমার মনে হয় এ প্রজন্মের কোনো অধিনায়ক তার সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করবেন না। আপনি জিতলে আপনার অধিনায়ককে বাহবা দিবেন। কিন্তু যদি হারেন তাহলে বলবেন অধিনায়কের জন্য সব হেরেছেন। এটাই বর্তমানে হয়। সবাই তাই ভাবলেও আমার মনে হয় এটা ঠিক না। তবে আমার মনে এটা সব জায়গায়ই হয়, শুধুমাত্র উপমহাদেশে না। সবাই প্রথমে অধিনায়ককে দোষী করে; তারপর কোচকে।

আপনার ব্যক্তিগত, বাংলাদেশের টেস্ট এবং ওয়ানডেতে লক্ষ্য কি?

আমার মনে হয় বর্তমানে যা করছি তা ভালো করছি। তবে আমাদের আরো উন্নতি চালিয়ে যেতে হবে। আমার নিজস্ব কোনো লক্ষ্য নেই। আমরা যেভাবে খেলে যাচ্ছি তাতে আগামী দুই বছরেই ওয়ানডে র‌্যাংঙ্কিংয়ের সেরা পাঁচে যাবো। যদি আরো দুই তিনটি বোলার বের করতে পারি যারা পাঁচ ছয়টি উইকেট নেবার ক্ষমতা রাখে তাহলে তাহলে টেস্ট ক্রিকেটেও ছয় সাতে আসতে পারবো। ব্যক্তিগত লক্ষ্য বলতে আমি তেমন কিছু ভাবিনা। আমার ভাবনা দলে অবদান রাখা।

ভাষান্তর: রামিন তালুকদার
এলএ/এমআরআই