ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

রূপকথার জয়ে ছোটদের বিশ্বকাপ ইংল্যান্ডের

রফিকুল ইসলাম | কলকাতা (ভারত) থেকে | প্রকাশিত: ০৬:১৮ পিএম, ২৮ অক্টোবর ২০১৭

অবিশ্বাস্য! অভাবনীয়! ছোটদের বিশ্বকাপের ফাইনাল এভাবে ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয় জুড়িয়ে দেবে তা ছিল কল্পনারও বাইরে। কে বলবে মাঠে খেলেছে ইংল্যান্ড আর স্পেনের কিশোররা? বিশ্বকাপের নাম অনূর্ধ্ব-১৭, এটা না জেনে কেউ খেলা দেখলে বুঝতেই পারতেন না এটা ছোটদের ইংল্যান্ড-স্পেনের লড়াই। বোঝার কোনো উপায়ও রাখেনি ইউরোপের দুই জায়ান্টের ছোটরা। সব দেশের, সব বয়সের ফুটবলের ভাষা যে এক তা আরেকবার উপহার দিল কিশোর বিশ্বকাপের ফাইনাল। ২ গোলে পিছিয়ে পড়া ইংল্যান্ড ফাইনাল জিতল ৫-২ ব্যবধানে। কেবল বিশ্বকাপেই নয়, যেকোনো পর্যায়ের আন্তর্জাতিক ফুটবলে এমন ঘটনা বিরল।

এই তো মাস চারেক আগে এশিয়া থেকে অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপের ট্রফি উড়িয়ে নিয়ে গেছে ইংল্যান্ড। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে যুবাদের ট্রফি জয়ের পর এবার ভারতে ইংলিশরা জিতল অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের ট্রফি। ইংল্যান্ডের জন্য এশিয়া হয়ে গেল বিশ্বকাপের ভেন্যু। পরবর্তী অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়ার ভারতের দাবিকে হয়তো ইংল্যান্ডই দেবে সবার আগে সমর্থন!

আগে কখনো অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের ফাইনাল মঞ্চই দেখেনি ইংল্যান্ড। প্রথম ফাইনালে উঠে তারা কেবল শিরোপাই জিতল না, ফুটবলকেও জিতিয়ে দিয়ে গেল। দক্ষিণ এশিয়ায় লিখে গেল ফুটবলের নতুন রূপকথা। ২-০ গোলে পিছিয়ে পরার পর সে ম্যাচ ইংল্যান্ড জিতবে সেটা হয়তো তাদের সমর্থকদের ভাবনারও বাইরে ছিল। কিন্তু কলকাতার বিবেকানন্দ যুব ভারতী ক্রীড়াঙ্গন যে শেষ দিনের জন্য রেখে দিয়েছিল ফুটবলেন সব রং, সব আলো তা কে জানতো?

সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের এই যুবারাই ব্রাজিলকে বিধ্বস্ত করে জানান দিয়েছিল তারা এশিয়া থেকে আরেকটি বিশ্বকাপের ট্রফি নিতেই এসেছে। এ অঞ্চলের ফুটবল প্রিয় মানুষের মন জয় করেই ফিফা আয়োজিত সবচেয়ে ছোট বিশ্বকাপের ট্রফি নিয়ে ঘরে ফিরছে ইংলিশ কিশোররা।

ফিফা প্রেসিডন্ট জিয়ানি ইনফান্তিনোর হাত থেকে ট্রফি নিয়েই সল্ট লেক স্টেডিয়ামে বাধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস ইংল্যান্ডের ছেলেদের। শুধু খেলোয়াড়ই নয়, দলের সঙ্গে থাকা বুড়ো অফিসিয়ালরাও যেন ফিরে গেলেন আনন্দের কৈশরে। ছোটদের বিশ্বকাপ জিতে তাদের বড় আনন্দ দীর্ঘদিন মূল বিশ্বকাপ জিততে না পারার দুঃখ হয়তো ঘুচাতে পারবে না। তবে ইংল্যান্ড এ বয়সভিত্তিক দল নিয়েই দেখতে পারে ফুটবল বিশ্বশাসনের নতুন স্বপ্ন।

যুব ভারতী ক্রীড়াঙ্গনের গ্যালারি কোনো দলকে নয়, যেন ভালো ফুটবল ও গোলকেই সমর্থন করেছিল। তা না হলে ম্যাচের ৭টি গোলের পরই কেন সমানভাবে উল্লসিত হয়ে উঠবে স্টেডিয়াম। ফাইনালের বল ৭ বার জাল ছুঁয়েছে। ৭ বারই স্টেডিয়াম চেঁচিয়ে উঠেছে ‘গো..ও...ল’ বলে। নিত্তিতে মেপেও বল সম্ভব ছিল না কোন দলের সমর্থকদের ওজন বেশি।

গ্যালারি ভরিয়ে দেয়া যুব ভারতী ক্রীড়াঙ্গনকেও কম দিয়ে গেল না ছোটদের বিশ্বকাপ। এমন ফাইনাল কে কয়টি দেখেছে? তাও আবার এক ঝাঁক কিশোরের কাছ থেকে। ম্যাচের আগে ইংলিশ জাতীয় দলের সাবেক ফুটবল ক্যাম্পবেলতো এটাই বলেছেন, কিশোরদের ফুটবল মানের উন্নতি অবাক করার মতো। ক্যাম্পবেলের এমন মূল্যায়নকে ঘণ্টাখানেক পরই শতভাগ সমর্থন দিল তারই দেশের কিশোররা।

যা করতে হবে শুরুতেই। ঠিক বাসর রাতে বিড়াল মারার মতো-স্পেন কোচের হয়তো সে পরিকল্পনাই ছিল। ইংল্যান্ড কোচ স্টিভ কুপার যেখানে একাদশ সাজালেন একমাত্র স্ট্রাইকার ব্রেস্টারকে রেখে, সেখানে স্পেনের কোচ সান্তিয়াগো দেনিয়ার একাদশে চার চারজন ফরোয়ার্ড। শুরু থেকে ইংল্যান্ডকে চেপে ধরার কৌশলে শতভাগ সফলও হয়েছিলেন তিনি। ১০ আর ৩১ মিনিটে সার্জিও গোমেজের দুটি দুর্দান্ত গোল স্পেনকে স্বপ্নই দেখিয়েছিল প্রথমবারের মতো অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের ট্রফি জয়ের। কিন্তু ইংলিশ কিশোররা যে দ্বিতীয়ার্ধে এভাবে ফুটবলের রূপকথা লিখবে তা হয়তো বুঝতেই পারেনি ক্যাসিয়াস, ইনিয়েস্তাদের উত্তরসূরীরা।

দুই গোলে পিছিয়ে পড়া ইংল্যান্ডের মনোবলে রসদ যোগান এবারের বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা ব্রেস্টার। বিরতিতে যাওয়ার আগের মিনিটে গোল করে ব্যবধান কমান লিভারপুলের এ ফরোয়ার্ড। আর দ্বিতীয়ার্ধে ভোঁজবাজির মতো সবকিছু বদলে দেন গিবস, ফোডেন ও গুয়েহি। ৫৮ মিনিটে সমতা আনেন গিবস। ৬৯ মিনিটে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডকে এগিয়ে দেন ফোডেন। ৮৪ মিনিটে গুয়েহি ব্যবধান ৪-২ করলে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে স্পেন। শেষ বাঁশির ২ মিনিট আগে নিজের দ্বিতীয় ও দলের পঞ্চম গোল করে বড় জয় নিশ্চিত করেন।

আরআই/আরএস

আরও পড়ুন