ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

বাংলাদেশ ব্যাট করতে গেলেই বোলিং উইকেট!

ক্রীড়া প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৫:২৩ পিএম, ০৭ অক্টোবর ২০১৭

 

বাংলাদেশ বোলিং করতে গেলে হয়ে যায় ব্যাটিং উইকেট। বাংলাদেশের বোলারদের পেয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা রীতিমত ব্যাটিং প্র্যাকটিসে মেতে ওঠেন। আর বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা যখন ব্যাটিং করতে নামেন, সেটা হয়ে যায় পুরোপুরি বোলিং উইকেট। প্রোটিয়া বোলাররা তখন মনের সুখে একটার পর একটা উইকেট নিতে থাকেন আর বোলিং প্র্যাকটিসটা সেরে নেন।

এ যেন এক আজব রীতি। দক্ষিণ আফ্রিকা কী সত্যি সত্যি কোনো জাদু জানে যে, সেই জাদুবলে বাংলাদেশ বোলিং করতে নামলে উইকেটকে বানিয়ে ফেলে ব্যাটিং বান্ধব আর ব্যাটিং করতে নামলে বানিয়ে ফেলে বোলিং বান্ধব! না হলে এমন হবে কেন? পচেফস্ট্রমের পর একই ঘটনা ব্লুমফন্টেইনেও।

মুশফিকুর রহীমই হয়তো এ বিষয়টা নিয়ে সবচেয়ে বেশি ভাবনা-চিন্তা করতে পারেন। দলীয় সিদ্ধান্ত যাই হোক, সেটা তো তার মাধ্যমেই প্রকাশ হচ্ছে, প্রকাশ পাচ্ছে। মুশফিকের একার কাঁধে বন্দুক রেখে অন্য কেউ এভাবে একের পর এক মিস ফায়ার করে যাচ্ছেন। এটা এক প্রকার নিশ্চিত। দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট শুরুর আগে থেকেই নানান লেখা, পত্র-পত্রিকার বিভিন্ন কলাম এবং টিভি টকশোগুলোতে এমনটাই আলোচনা হয়ে আসছিল।

পচেফস্ট্রম টেস্টের পর সংবাদ সম্মেলনে মুশফিক নিজেই স্বীকার করেছেন, ‘টস জিতে ফিল্ডিং নেয়ার সিদ্ধান্ত তার একার নয়। এটা দলীয় সিদ্ধান্ত।’ বোঝাই গেলো, মুশফিক সিদ্ধান্ত নেন না। টস জিতলে কী করতে হবে না হবে- তা নির্ধারণ করে দেয়া থাকে। উইকেট দেখে মুশফিক যে চিন্তা-ভাবনাই নিজের মধ্যে রাখুন না কেন, দলের সেই সর্বময় কর্তা ঘোষিত ব্যাক্তিটির অঙ্গুলি হেলনেই তাকে চলতে হয়। এমনকি এমনও খবর এসেছে, মুশফিক কোন পজিশনে ফিল্ডিং করবেন, সেটাও নির্ধারিত হয় ড্রেসিং রুমে।

এ কারণেই, টস হওয়ার পর ইএসপিএন ক্রিকইনফোর লাইভ স্কোর এবং কমেন্ট্রিতে ফিস-ফাস শুরু হয়, ‘মুশফিককে বলছি, তিনি যদি উইকেট চিনতে ভুল করেন, তাহলে তার জন্য সবচেয়ে ভালো হয় টস হেরে যাওয়া। তাতে অন্তত ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে বেঁচে যেতে পারেন তিনি।’

১০ বছরের বেশি ক্যারিয়ার শেষ হওয়ার পরও কী মুশফিক সত্যি সত্যি উইকেট চিনতে পারেন না? এতগুলো টেস্টে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সাফল্যের ঝুলিও কম নয়। তবুও তাকে এতদিন পর এসে শুনতে হবে, তিনি উইকেট চিনতে পারেন না? পচেফস্ট্রমে নিখাঁদ ব্যাটিং উইকেট। আগেরদিনই সংবাদ সম্মেলনে বলে গিয়েছিলেন মুশফিক। পরেরদিন টস জেতার পর চোখ-মুখ বন্ধ করে কমেন্টেটর শন পোলককে তিনি বলেন দিলেন, বোলিং ফাস্ট। যেন মুশফিক একটা পাপেট। অদৃশ্য সুতোয় কেউ একজন তাকে নাড়ছেন আর বলাচ্ছেন।

এমন ফ্ল্যাট উইকেটে মুশফিকের ফিল্ডিং নেয়ার সিদ্ধান্ত দেখে অবাক সবাই। টেস্ট পঞ্চম দিনে গড়ানোর পরও এই সিদ্ধান্তের রহস্য ভেদ করা সম্ভব হয়নি। মুশফিক পরে জানালেন, এটা ছিল দলীয় সিদ্ধান্ত। দলীয় সিদ্ধান্তই যদি হবে, তাহলে অধিনায়ক কেন? ড্রেসিং রুম থেকে বলে দেয়া হবে আর মাঠে সেগুলো বাস্তবায়ন হবে। পুতুল অধিনায়ক রেখেই বা কী লাভ! মুশফিকই বা কেন পুতুল অধিনায়ক হয়ে থাকবেন আর সব দোষ নিজের মাথা পেতে নেবেন?

পচেফস্ট্রমের শিক্ষা ব্লুমফন্টেইনে কাজে লাগানোর বড় সুযোগ ছিল। সেই সুযোগটা নিজের হাতেই মুশফিক তুলে দিলেন প্রোটিয়াদের হাতে। বিস্মিত প্রোটিয়া অধিনায়ক ফ্যাফ দু প্লেসিস টসের সময়ই বলে দিলেন, ‘এই উইকেটে ১০ বারের মধ্যে ৯বারই ব্যাটিং নেবো আমি।’

তো কেন, কী উদ্দেশ্যে মুশফিক ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন বোঝা গেল না। বোলাররা তো কোনো প্রভাবই বিস্তার করতে পারেনি। প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানরা ইচ্ছামত ব্যাটিং প্র্যাকটিসটা করে গেলেন। চার উইকেট গেল, চারজন ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি করলেন। ৫৭৩ রানের আয়েশী ইনিংসের পর অবশেষে বাংলাদেশের কাছে উইকেট ছেড়ে দিলো প্রোটিয়ারা।

দক্ষিণ আফ্রিকা যতক্ষণ ব্যাট করলো, ততক্ষণ মনে হলো এই উইকেটে বোলারদের জন্য কিছুই নেই। বাংলাদেশের তিন পেসার মোস্তাফিজ, রুবেল আর শুভাশিস রায়, সঙ্গে অকেশনাল মিডিয়াম পেসার সৌম্য সরকার, স্পিনার তাইজুল, মাহমুদউল্লাহ, মুমিনুল হক এবং সাব্বির রহমান। এদেরকে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের সামনে বোলারই মনে হলো না। একমাত্র শুভাশিসই যা একটু ব্যতিক্রম ছিলেন। ১১৮ রান দিলেও নিয়েছেন ৪টির মধ্যে ৩ উইকেট। বাকিটা রুবেল। ২২ ওভার বল করে ৫.১৩ ইকনোমি রেটে ১১৩ রান দিয়ে।

বাংলাদেশ যখন প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং করতে নামলো, তখনই ভোজবাজির মত উল্টে গেল দৃশ্যপট। যে উইকেট ছিল পুরোপুরি ব্যাটিং বান্ধব, সেটা হয়ে গেলো বোলিং উইকেট। যান কোনো এক জাদুকাঠির ছোঁয়ায় বদলে গেল পুরো উইকেট। কোনো ব্যাটসম্যানই দাঁড়াতে পারলেন না প্রোটিয়া বোলারদের সামনে; একমাত্র লিটন দাস ছাড়া। এমনকি এই উইকেটে রুবেল হোসেনও সৌম্য, মুমিনুল, মুশফিক এবং মাহমুদউল্লাহর মত প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যানের চেয়ে বেশি বল খেলতে পেরেছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং ডিপার্টমেন্টে ডেল স্টেইন নেই, ভারনন ফিল্যান্ডার নেই। ইনজুরির কারণে ছিটকে গেছেন মরনে মর্কেলও। প্রতিষ্ঠিত বোলারই শুধু রাবাদা। এছাড়া অলিভিয়ের, পারনেলরা সুযোগ পেলেন বাংলাদেশের বিপক্ষে। তারাই কি না এক একজন স্টেইন, ফিল্যান্ডার, মর্কেল হয়ে আবির্ভূত হলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সামনে।

যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকা ১২০ ওভার খেলে ৫৭৩ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করেছে, সেখানে বাংলাদেশ ৪২.৫ ওভার খেলে ১৪৭ রানেই অলআউট! লিটন দাস করেছেন প্রায় অর্ধেক রান (৭০)। এছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৬ রান, ইমরুল কায়েসের। বাকিরা ছিলেন শুধু আসা-যাওয়ার মিছিলে। ফলে ৪২৬ রানের বিশাল ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে ফলোঅনে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামতে হয়েছে বাংলাদেশকে।

আইএইচএস/এআরএস

আরও পড়ুন