দক্ষিণ আফ্রিকায় ওয়ানডে সিরিজও সহজ হবে না : মাশরাফি
মুশফিকুর রহীমের পর পর দুই টেস্টে টস জিতে আগে ব্যাট না করে বোলিংয়ের সিদ্ধান্তে দেশে তোলপাড়। কেন মুশফিক আবার টস জিতে ফিল্ডিং বেছে নিলেন? রাজ্যের কথা বার্তা। সমালোচনার ঝড়।
আগের সূচি, মানে ৯ অক্টোবর দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার সিডিউল ঠিক থাকলে হয়ত টেস্ট সিরিজে নিজ দলের করুণ পরিণতি দেশে থেকেই দেখে যেতে পারতেন ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা; কিন্তু সে সূচি পাল্টে দু’দিন আগে ৭ অক্টোবরই দক্ষিণ আফ্রিকা উড়ে গেলেন ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি, সহ অধিনায়ক সাকিব, ওয়ানডে স্পেশালিস্ট নাসির ও সাইফউদ্দিন।
টেস্ট সিরিজে রীতিমত ধুঁকছে বাংলাদেশ। সিরিজের প্রথম টেস্টে বড় ব্যবধানে হেরেছে মুশফিকুর রহিমের দল। ব্লুমফন্টেইনে দ্বিতীয় টেস্টেও খুব ভালো কিছুর আশা দেখা যাচ্ছে না। সন্দেহ নেই, এই সফরটা বাংলাদেশের জন্য কঠিনতম একটা সফর হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা মনে করছেন, টেস্টের মত ওয়ানডেতেও কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে টাইগারদের।
দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার আগে ঘরে বসে টিভিতে দেখেছেন ব্লুমফন্টেইন টেস্টে খাবি খাচ্ছে বাংলাদেশ। পচেফস্ট্রমে প্রথম টেস্ট পুরো দেখেছেন। ব্লুমফন্টেইনে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের প্রথম দিনের একটি বলও মিস হয়নি। কেন এই বেহাল অবস্থা? গত তিন বছরের বেশি সময় ওয়ানডের পাশাপাশি ধীরে ধীরে টেস্টে ভাল খেলতে শুরু করা বাংলাদেশ হঠাৎ দক্ষিন আফ্রিকা গিয়ে কেন এত খারাপ খেলছে? এ প্রশ্ন এখন সবার।
পাশাপাশি ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি সিরিজ নিয়েও জেগেছে সংশয়। অনেকের মনেই সংশয় বাসা বেঁধেছে- ‘আচ্ছা ওয়ানডে সিরিজে টেস্টের এই অনুজ্জ্বল পারফরম্যান্স ও হতশ্রী অবস্থার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না তো? ঘরের মাঠে ও উপমহাদেশে গত কয়েক বছর ভাল খেলার যে ধারা তৈরি হয়েছে, এবার দক্ষিণ আফ্রিকায় তা বহাল থাকবে তা? নাকি ওয়ানডেতেও খাবি খাবে টাইগাররা?’
অনেকেরই মত প্রোটিয়ারা ওয়ানডেতে আরও সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী। কারণ এবি ডি ভিলিয়ার্স, জেপি ডুমিনি আর ডেভিড মিলার যুক্ত হবেন ওয়ানডে দলে। ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি কি ভাবছেন? কেমন হবে ওয়ানডে সিরিজ? কি করবে টাইগাররা? নিশ্চয়ই খুব জানতে ইচ্ছে করছে।
দেশ ছাড়ার আগে ওয়ানডে ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মর্তুজা জাগো নিউজের সাথে একান্ত আলাপে এ সব নিয়েই অনেক খোলামেলা কথা বলেছেন। আসুন শোনা যাক জাগো নিউজের সাথে ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফির একান্ত সেই সাক্ষাৎকার।
জাগো নিউজ : প্রথম টেস্ট দেখেছেন, দ্বিতীয় টেস্টেরও প্রথম দিন দেখে গেলেন। ওয়ানডেতে কি মনে হয়, কেমন করবে বাংলাদেশ?
মাশরাফি : দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে উপমহাদেশের যে কোন দল সংগ্রাম করে। প্রোটিয়ারা এমনিতেই টেস্টের তুলনায় ওয়ানডেতে আরও সমৃদ্ধ, আরও শক্তিশালী দল। ওয়ানডেতে এবি ডি ভিলিয়ার্স, ডুমিনি ও মিলার যুক্ত হবেন। খুব স্বাভাবিকভাবেই শক্তি বাড়বে বহুগুণে। এ কারণে বলবো, সেখানে ওয়ানডে সিরিজটাও খুব একটা সহজ হবে না।
তারওপর নিজের মাটিতে তারা সব সময় অনেক শক্তিশালী দল। ৩৭০ রানও চেজ করে, ৪৩০ প্লাস রানও চেজ করেছে। মোট কথা, প্রোটিয়ারা নিজের কন্ডিশনে অসাধারণ দল। অসাধারণ ক্রিকেট খেলে। সেই দলের সাথে কাজটা তাই বেশ কঠিন। তারপরও টেস্ট আর ওয়ানডে অবশ্যই ডিফারেন্ট বল গেম।
কিন্তু তারপরও আমি বলবো, আমাদের নেতিবাচক মানসিকতায় না দেখে ওয়ানডে সিরিজটাকে অন্যভাবে চিন্তা করা উচিৎ। আমার মনে হয় কিছু করে দেখানোর জন্য এটা আমাদের অনেক বড় সুযোগ। আমার মনে হয়, শুধু আমার একার না, এ বিষয়টা দলের অন্যদের সবার মাথায়ও আছে। এখন ওখানে গিয়ে চেষ্টা করবো যাতে সেরাটা করা যায়।
জাগো নিউজ : ওয়ানডে সিরিজে সাকিব ফিরবেন। হয়ত তামিমও সুস্থ হয়ে দলের সঙ্গী হবেন। আবার আপনিও অধিনায়ক হয়ে খেলবেন। এতে করে কি বাংলাদেশ দলের শক্তিও বাড়বে না?
মাশরাফি : আমাদের ওয়ানডে দলে তো নতুন কোন কিছু নাই। যারা খেলে আসছে তারাই খেলবে এই সিরিজে। আমি যেটা বলতে চাচ্ছি, যারাই খেলুক, যত বড় প্লেয়াররা খেলুক না কেন, উপমহাদেশের কোনো দল দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশনে গিয়ে যে কোন দলের জন্য কঠিন হবে সেটা মাথায় রেখেই খেলতে হবে।
ওরা ওদের ৮০ ভাগ খেললে আমাদের ওদের থেকে আরও বেশি, ১০% ভাল খেলতে হবে। এখন যেহেতু টেস্ট ম্যাচ চলছে, দেখা যাক কি হয়, আল্লাহ ভরসা। ওয়ানডেতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো ভাল খেলার। তারপর দেখা যাক রেজাল্ট কী হয়? তবে সত্য কথা হচ্ছে, এটা মানতে হবে দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশনে খেলা হবে আমাদের জন্য এ বছরের সেরা চ্যালেঞ্জ।
যদিও নিউজিল্যান্ড ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিও চ্যালেঞ্জ ছিল। এ বছরের শুরুতে বাইরে প্রথম খেলতে গিয়েছিলাম নিউজিল্যান্ডে। সেখানে প্রথমেই ধাক্কা সামলাতে পারিনি। তারপর শ্রীলঙ্কা ও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভাল খেলেছি। এগুলোতে ধীরে ধীরে ভাল খেলেছি। প্রসেস ধরে রাখা খুব জরুরী। চেস্টা করবো।
জাগো নিউজ : দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে উপমহাদেশের উইকেটের মৌলিক পার্থক্য কি?
মাশরাফি : সত্যি কথা বলতে কি, সবচেয়ে প্রয়োজনীয় কাজ হলো বোলারদের লেন্থ পিক করা। এটা খুব খুব জরুরী। কোন লেন্থে বল পড়লে শটস খেলবো, দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যানরা খুব ভাল জানেন তা। একইভাবে তাদের বোলাররাও খুব ভাল জানে, কোন লেন্থে বল ফেললে বাইরের দলগুলোর খেলতে কষ্ট হবে। সে কারণে উপমহাদেশ থেকে যারা যায়, তাদের সবারই সমস্যা হয় সেখানে। এমনকি যারা ওই কন্ডিশনে খেলে অভ্যস্ত, সেই সব দল যেমন, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডও দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়ে বেকায়দায় পড়ে।
যারা ওই সব কন্ডিশনে খেলে অভ্যস্ত, এমন এক কঠিন কন্ডিশনে গিয়ে যদি কিছু অর্জন করে আসা যায়, সেটা হবে সামনে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া। এ বছরের সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ এ কারণে এই সফর। এই সফরটা যদি আল্লাহর রহমতে মোটামুটি ভালভাবে শেষ করতে পারি, আমার বিশ্বাস ছেলেরা আগামীতে আরও ভাল করতে পারবে। তারা অনেক পরিণত হবে। ভাল খেলার রসদ জন্মাবে তাদের মধ্যে।
জাগো নিউজ : ব্যাটসম্যান ও বোলারদের দায়িত্ব ও কর্তব্য কি হওয়া উচিৎ?
মাশরাফি : ওখানে ওয়ানডেতে ৩০০ রান হয় না এমন ম্যাচ খুব কম হয়। ৩৩০ রানও হয়। আবার সাড়ে তিনশোর মত রানও ওঠে। কাজেই ধরেই নেয়া যায় আমাদের ম্যাচগুলোও হয়ত বিগ স্কোরিং গেম হবে। রানও করতে হবে। ব্যাটসম্যানদের তা ধরে নিয়েই খেলতে হবে। ব্যাটসম্যানদের কাজ হবে যত বড় সম্ভব স্কোর করা।
আর বোলারদের দায়িত্ব হলো, যত কম রান দেয়া যায়। বোলাররা যদি প্রোটিয়াদের রান কমিয়ে রাখতে পারে, তাহলে আশা করি আমাদের ব্যাটসম্যানরা আশা করি সে টার্গেট নিতে পারবে।
জাগো নিউজ : নিউজিল্যান্ড সফরের অভিজ্ঞতা কি কিছুটা কাজে দিতে পারে?
মাশরাফি : নিউজিল্যান্ড সফরে আমরা কয়েকটি ম্যাচে ভাল করার সম্ভাবনা জাগিয়েও শেষ রক্ষা করতে পারিনি। সেটা ছিল এ বছরের প্রথম কঠিন মিশন। আর দক্ষিণ আফ্রিকা মনে হয় বছরের সবচেয়ে কঠিন মিশন। তবে এসব কঠিন মিশনে কিছু অন্যরকম দিকও থাকে। এসব চ্যালেঞ্জ ভালভাবে মোকাবিলা করতে পারলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ প্রশস্থ হয়। এখন দেখা যাক, আল্লাহ ভরসা।
জাগো নিউজ : এ সিরিজে নিজের কোন লক্ষ্য-পরিকল্পনা আছে কি?
মাশরাফি : আমি তো কোনো দিনই পারসোনাল গোল সেট করি না। যখন করতাম, তখন তো ইনজুরি বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়াতো। এখন তাই আর কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও পরিকল্পনা করি না। তবে দলকে সাহায্য করা, দলের সাফল্যে কার্যকর অবদান রাখা এবং ম্যাচ জেতা- এটাই টার্গেট।
জাগো নিউজ : এবারই প্রথম শুধু ওয়ানডে অধিনায়ক হয়ে বিদেশ সফরে যাচ্ছেন, অনুভুতিটা একটু জানাবেন?
মাশরাফি : নাহ ভিন্ন কোনো অনুভুতি নেই। আগের মতই।
এআরবি/আইএইচএস/আরআইপি