নায়ক সেই মুমিনুল-মাহমুদউল্লাহ
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে সবচেয়ে অবহেলিত খেলোয়াড় কে? এই প্রশ্ন করা হলে চোখ বন্ধ করে যে কেউ উত্তর দিয়ে দেবে- কেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর মুমিনুল হক! সর্বশেষ কয়েকটা সিরিজে এই দুই ক্রিকেটারের সঙ্গে যা করা হয়েছে, তার রীতিমত বর্ণনার অযোগ্য।
শ্রীলঙ্কা সফরেই খড়গ নেমে আসে বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য দুই ব্যাটসম্যানের ওপর। গল টেস্টে হেরেছিল বাংলাদেশ। এরপর কলম্বোয় নিজেদের ইতিহাসে শততম টেস্ট। এই টেস্টে যখন খেলার স্বপ্ন বুনছিলেন মুমিনুল-মাহমুদউল্লাহ, তখনই তাদের বাদ দেয়া হলো দল থেকে। শততম টেস্ট খেললো বাংলাদেশ দলের সেরা দুই ব্যাটসম্যানকে ছাড়াই। যদিও ওই টেস্টে জিতেছিল বাংলাদেশ।
এরপর ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ। ১১ বছর বাংলাদেশের মাটিতে টেস্ট খেলতে আসলো অস্ট্রেলিয়া। এক অর্থে বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক সিরিজই বটে। দীর্ঘ অনুশীলন শেষে যখন দল ঘোষণা করা হলো, তখন দেখা গেলো সেরা ১৪ জনের মধ্যে নেই মাহমুদউল্লাহ এবং মুমিনুলের নাম।
মাহমুদউল্লাহর বিষয়টা না হয় কেউ কেউ মেনে নিয়েছে। কিন্তু মুমিনুলের বিষয়টা কেউ মেনে নিতে পারেনি। টেস্টে চোখ বন্ধ করে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান মুমিনুল। বাংলাদেশের লিটল মাস্টার, ব্র্যডম্যান- কত নামে তাকে ডাকা হচ্ছিল। তিন কিংবা চার নম্বর পজিশনে নির্ভরতার প্রতীক। অথচ তাকেই কি না অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কঠিন সিরিজে দলে রাখা হলো না।
ক্ষেপে ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। প্রতিবাদের ঝড় ওঠে সারা দেশে। মানুষের কষ্টের ভাষা বুঝতে পেরেছিল বিসিবিও। সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন নিজেই বললেন, ১৫ জনের দল গঠন করে মুমিনুলকে রাখা যেতো। তবে দুর্ভাগ্যক্রমে চোখের ইনজুরিতে পড়লেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। তার পরিবর্তে দলে ফেরানো হলো মুমিনুলকে।
দলে ফিরলেও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে খেলানো হলো না। যদিও ওই টেস্টেও জিতেছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে দ্বিতীয় টেস্টে তাকে দলে নেয়া হলো। ৩১ এবং ২৯ রানের দুটি ইনিংস খেললেন তিনি।
দক্ষিণ আফ্রিকা দলে মুুমিনুলের সঙ্গে ফেরানো হলো মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকেও। মূলতঃ সাকিব বিশ্রাম চেয়ে ছুটি নেয়ার কারণেই দলে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। যদিও গতিময় বাউন্সি পিচে তার অভিজ্ঞতাও ছিল দলে ফেরার নিয়ামক। বেনোনিতে প্রস্তুতি ম্যাচে যাচ্ছেতাই ব্যাটিং করেন রিয়াদ। অনেকেই ভেবেছিলেন তাকে দলে নেয়া হবে না।
শেষ পর্যন্ত নেয়া হলো এবং পচেফস্ট্রম টেস্টে ৬ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে দারুণ দুটি জুটি গড়ে তোলেন তিনি। শুধু তাই নয়, একের পর এক আউট হওয়ার কারণে বাংলাদেশের ইনিংস কত দ্রুত শেষ হবে, সে শঙ্কা দেখা দিয়েছিল, সেখানে মুমিনুল আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদই ত্রাতার ভুমিকায় অবতীর্ণ হন বাংলাদেশের হয়ে।
৭৭ রানের ইনিংস খেলেন মুমিনুল হক। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এটাই যে কোনো বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানের হয়ে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। মাহমুদউল্লাহর ব্যাট থেকে আসলো ৬৬ রানের অনবদ্য ইনিংস। তার ইনিংসটি ছিল অনেকটাই বিধ্বংসী। মুমিনুল আর মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে চড়েই মূলতঃ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশ ৩০০ প্লাস (৩২০) রানের ইনিংস গড়তে সক্ষম হয়।
আইএইচএস/আরআইপি