ভিডিও EN
  1. Home/
  2. খেলাধুলা

অস্ট্রেলিয়াকে ‘বাংলাওয়াশের’ কথাই ভাবছে মুশফিক বাহিনী

আরিফুর রহমান বাবু | চট্টগ্রাম থেকে | প্রকাশিত: ১২:৫৪ পিএম, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭

সত্যি সময়ে কত কিছুই না বদলায়! এক সময় যে অস্ট্রেলিয়াকে টেস্টে হারানো ছিল শুধুই স্বপ্ন, আকাশ কুসুম কল্পনা- এখন তা বাস্তব। আজ থেকে ১৪ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম টেস্ট খেলতে যাবার আগে ও গিয়ে কী কথার বাণেই না বিদ্ধ হয়েছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা।

টাইগারদের নিয়ে কত ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ হয়েছিল। বাংলাদেশ টেস্ট খেলতে পারে না। দুইদিনে টেস্ট হেরে বসবে, ‘গো হারা হারবে’ আরও কত তীর্যক কথাবার্তা।

অজি ক্রিকেট-বোদ্ধা-বিশেষজ্ঞদের বড় অংশর অবজ্ঞা, অবহেলার শিকার হয়েছিলেন হাবিবুল বাশার, জাভেদ ওমর, আল শাহরিয়ার রোকন, মোহাম্মদ আশরাফুল, খালেদ মাহমুদ সুজন ও খালেদ মাসুদ পাইলটরা। কী আশ্চর্য্য, সেই বাংলাদেশে এবার খেলতে এসে উল্টো নাকাল অস্ট্রেলিয়া!

স্টিভেন স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নার, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, হ্যাজেলউড ও কামিন্সরা মিরপুরের শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে হালে পানি পাননি। সাকিব আল হাসানের অনন্য অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্স, তামিম ইকবালের দুর্দান্ত ব্যাটিং নৈপুণ্য আর দুই তরুণ স্পিনার মিরাজ-তাইজুলের সাঁড়াশি বোলিংয়ে নাকাল স্টিভেন স্মিথের দল।

২০০৩ সালে যে অজি মিডিয়া টাইগারদের মান, মেধা ও পারফরম্যান্স নিয়ে কটাক্ষ করেছিল, সেই মিডিয়ার মুখে এখন সাকিব-তামিমদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা। আর নিজ দলের প্রবল সমালোচনা! শেরেবাংলায় চারদিনের দুর্দান্ত লড়িয়ে পারফরম্যান্সে পাওয়া ২০ রানের জয়ে এখন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজে ১-০‘তে এগিয়ে।

মুশফিক বাহিনীর সামনে টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে হোয়াইটওয়াশের সুবর্ণ সুযোগ। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে জিততে পারলেই ব্যাস! সাফল্যের নতুন ইতিহাস রচিত হবে। ক্রিকেট বিশ্ব দেখবে-জানবে টাইগারদের গর্জনে, শৌর্য্য-বীর্য্যে ধরাশায়ী স্মিথের দল।

এ রকম অবস্থায় কী ভাবছেন টাইগাররা? মুশফিক, তামিম, সাকিব, মিরাজ ও তাইজুলদের মনের অবস্থা কী? অজিদের তুলোধুনো করার চিন্তায় মশগুল তারা? নাকি অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে টেস্টে প্রথম হারানোর আনন্দে আত্মহারা মুশফিক বাহিনী আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন?

ভক্ত-সমর্থক ও ক্রিকেট অনুরাগীদের কৌতূহলী প্রশ্নের এখানেই শেষ নেই। আরও আছে। কী জানি সাফল্যের অমন সম্ভাবনার সূর্য যদি হঠাৎ ডুবে যায়- মুশফিক, সাকিব ও তামিমরা আবার বাড়তি চাপ নিয়ে ফেলেননি তো? মনের মাঝে এমন দুশ্চিন্তা বাসা বাঁধেনি তো? কেউ কেউ এমনও ভাবছেন।

আবার আরেক পক্ষর কথা, অস্ট্রেলিয়া সব সময়ই কঠিন প্রতিপক্ষ। সহজে হার মানতে চায় না। কী জানি ঢাকার হারের চাপ সামলে উল্টো চট্টগ্রামে যদি ঘুরে দাঁড়ায় স্মিথের দল? টাইগার-ভক্তদের এমন কৌতূহলী প্রশ্নমালা আর গুঞ্জন ও জল্পনা-কল্পনার জবাব দিয়েছেন মুশফিক নিজেই।

আজ দুপুরে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের কনফারেন্স হলে সাংবাদিক সন্মেলনে কথা বলতে এসে অনেক কথার ভিড়ে টাইগার অধিনায়ক পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, তার দল এখন ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে? কী ভাবছে? কী চিন্তা করছে? কেমন লক্ষ্য ও পরিকল্পনায় কাল সোমবার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বর্তমান সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট খেলতে নামবে?

কথায় পরিস্কার, লক্ষ্য একটাই- অজিদের ‘বাংলাওয়াশ।’

টাইগার অধিনায়কের কথার সারমর্ম এ রকম, তার দল প্রথম টেস্ট জিতে অাত্মহারা হয়নি। আত্মতুষ্টিতে ভোগার প্রশ্নই আসে না। বরং তারা মুখিয়ে আছেন সিরিজ জিততে। অস্ট্রেলিয়াকে প্রথমবার ২-০’তে হারাতে মানে তুলোধুনো করতে। আবার প্রত্যাশার চাপে নুয়েপড়ার উপক্রমও হয়নি। কোনোরকম বাড়তি চাপ এসে মাথায় ভর করেনি। সবার অনুভব একটাই- অস্ট্রেলিয়ার মতো পরাক্রমশালী দলকে নাস্তানাবুদ করার এ রকম সুযোগ বারবার আসে না। যে করেই হোক এ সুযোগ হাতছাড়া করা চলবে না। তা কাজে লাগাতে সামর্থের সবটুকু উজার করে দিতে হবে।

তাইতো টাইগার অধিনায়কের মুখে এমন কথা, ‘কোনোরকম চাপে ভুগছি না আমরা। প্রথম টেস্টে আমরা যেভাবে জিতেছি, অমন ফলের পর অনেকেই খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। কিন্তু আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগছি না। আমরা সব সময় বলে এসেছি, এ রকম সুযোগ আমাদের সব সময় আসে না। আবার এ রকম ফলও আসে না। এটা ভালো দিক যে আমরা ১-০ তে এগিয়ে আছি।’

এটুকু বলেই থেমে যাওয়া নয়। আরও আছে। যার পরতে পরতে সতর্কতা। সে কারণেই মুখে এমন কথা, ‘তারপরও অস্ট্রেলিয়া অনেক স্ট্রং টিম। তারা জানে যে চাপের মধ্যে কীভাবে খেলতে হয়।’

নিজ দলের প্রতি অধিনায়কের সাবধানী বানী আছে আরও। সে সাবধানী বাণীটা এ রকম, ‘জিতলেই যে সব উন্নতি হয়ে যায়, সব কাজ শেষ হয়ে যায় এমন নয়। আমাদের জন্য ম্যাচটি বেশ ত্রুশাল। আমরা ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে আছি। অস্ট্রেলিয়া দল এ রকম চাপের মধ্যে অনেক ম্যাচ খেলেছে। ওরা জানে যে চাপের মধ্যে কীভাবে বাউন্স ব্যাক করতে হয়। আমাদের সেটা মাথায় আছে। আমরা হোম কন্ডিশনে বেশ ভালো ক্রিকেট খেলছি। ফল আমাদের পক্ষে আসছে। এ কারণে আমাদের আত্মবিশ্বাস বেশ ভালো আছে।’

সিরিজকে ২-০ করতে সহযোগী ক্রিকেটারদের উদ্বুদ্ধ রাখতে অধিনায়ক ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে শেষ সিরিজের প্রসঙ্গ টেনে মুশফিক বলেন, আমরা এখন মানসিকভাবে অনেক উন্নতি করেছি। আমরা শেষ দুই সিরিজে প্রথম টেস্ট হারার পর তো ভালোভাবে দ্বিতীয় ইনিংসে বাউন্স ব্যাক করেছি। মানসিকভাবে আমরা কতটুকু ইমপ্রুভ করেছি এটাও কিন্তু তার প্রমাণ দেয়। আমরা অবশ্যই সেরা সাফল্যের চেষ্টা করব।’

সহযোগীদের অনুপ্রাণিত রাখতে টাইগার অধিনায়কের বার্তা, ‘প্রথম টেস্ট আমরা জিতেছি। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, এটা আমাদের একটা ফ্রেশ গেম। তাদেরকে বলা হয়েছে, সিরিজটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য এবং ২-০ তে সিরিজ জয়ের জন্য ম্যাচটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সেদিকে মুখিয়ে আছি। আমরা চাচ্ছি শতভাগ চেষ্টা করে রেজাল্ট আমাদের পক্ষে নিয়ে আসতে। ১-০ তে এগিয়ে যাওয়া অবশ্যই একটা অ্যাডভানটেজ। কিন্তু আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, এটা আরেকটি টেস্ট। এখানে সবকিছুই নতুন। সব নতুন করে শুরু করতে হবে। ঢাকায় আমাদের শুরুটা ভালো হয়নি। এবার সেটা ভালো করার চেষ্টা করব।’

এআরবি/বিএ/এমএস

আরও পড়ুন