চুক্তি ছাড়া বাংলাদেশ সফরে আসবে না অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটাররা
গতকাল থেকেই অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটাররা বেকার। তারা আর জাতীয় দলের ক্রিকেটার নন। শুধু জাতীয় দলের কেন, ‘এ’ দল থেকে শুরু করে পুরো দেশের প্রায় ২৩০’র বেশি ক্রিকেটার এখন বেকার। তারা আর অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার নন। চুক্তির বাইরে তারা শুধুই অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক। এ পরিস্থিতিতে ক্রিকেট সম্পর্কিত কোনো দেশ সফরে যাবে না বলে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াকে (সিএ) জানিয়ে দিয়েছে তারা।
পারিশ্রমিক সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ৩০ জুনের মধ্যে সিএ’র নতুন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেনি স্টিভেন স্মিথ-ডেভিড ওয়ার্নাররা। এর ফলে ১ জুলাই থেকেই তারা বেকার। ক্রিকেটারদের পক্ষে সমঝোতা চুক্তিতে (এমওইউ) স্বাক্ষর করার কথা অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশন। কিন্তু চুক্তি না হওয়ায় এখন ক্রিকেটাররা আর কোনো সফরে অংশ নেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।
ক্রিকেটারদের এই অনড় অবস্থানের কারণে হুমকিতে পড়ে গেছে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর। আগস্টের ১৮ তারিখ ঢাকা আসার কথা রয়েছে স্টিভেন স্মিথদের। তবে, বাংলাদেশ সফরের আগে সবচেয়ে ক্ষতির সম্মুখিন যে সফর, সেটা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ান ‘এ’ দলের দক্ষিণ আফ্রিকা সফর। সপ্তাহ খানেক পরই দক্ষিণ আফ্রিকা সফর ‘এ’ দলের।
কিন্তু ক্রিকেটাররা জানিয়ে দিয়েছে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করা ছাড়া তারা কোনো সফরে যাবে না। তবে, সোমবার থেকে ব্রিসবেনে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের উদ্দেশ্যে যে ট্রেনিং ক্যাম্প শুরু হচ্ছে, সেটাতে অংশ নেবে তারা। ট্রেনিং ক্যাম্পে অংশ নিলেও সফরে যাওয়া না যাওয়া এখন পুরোপুরি ভবিষ্যতের ওপর তুলে রাখলেন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা।
এই সিদ্ধান্তটা নিয়েছে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটি। তবে, চুক্তিতে স্বাক্ষর করা না করার বিষয়ে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে আজ বৈঠকে বসেছেন ক্রিকেটাররা। পুরুষদের সঙ্গে নারী ক্রিকেটাররাও অংশ নেন এই বৈঠকে। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট দলের অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ এখন ছুটি কাটাতে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। তিনি বৈঠকে ফোন কলের মাধ্যমে কথা বলেন।
বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল, দুই পক্ষই যেন খুব কম সময়ের মধ্যে মাঝামাঝি অবস্থানে এসে একটা সমাধানসূত্রে পৌঁছাতে পারে। এখানেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, চুক্তির ভেতরে যারা ছিল কিংবা যারা বাইরে ছিল- কেউই সমঝোতা স্মারক নিশ্চিত না হওয়া ছাড়া কোনো সফরে অংশ নেবে না।
বিভিন্ন রাজ্যের ক্রিকেটাররা অবশ্য জানিয়েছে, কোনো ক্রিকেট ম্যাচে অংশ না নিলেও তারা পুরনো চুক্তি অনুযায়ী ট্রেনিং ক্যাম্পগুলোতে অংশ নেবেন। সমঝোতা স্মারকে যেন ক্রিকেটাররা স্বাক্ষর করেন, সে জন্য শুক্রবার নতুন প্রস্তাব দিয়েছিল। সেই প্রস্তাবই ক্রিকেটারদের বৈঠকে আলোচনা করা হয়; কিন্তু আলোচনার ফল শূন্য। তাদের দাবি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াকে মানতেই হবে। না হয় তারা চুক্তিতে সই করবে না।
সঙ্কট মূলতঃ বেতন কাঠানো নিয়ে। দুই দশক ধরে চলে আসা বেতন কাঠামো অনুযায়ী বোর্ডের লভ্যাংশের একটা অংশ আনুপাতিক হারে বিভিন্ন স্তরে ভাগ করে দেওয়া হয় চুক্তিবদ্ধ জাতীয় ও ঘরোয়া ক্রিকেটারদের। কিন্তু পুরনো এই নিয়ম পরিবর্তন করে নতুন কাঠামোতে বেতন-ভাতা নির্ধারণের নতুন প্রস্তাব দেয় সিএ। লভ্যাংশের একটি অংশ ভাগ করে দেওয়া হবে শুধু কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা পুরুষ ও নারী ক্রিকেটারদের, যেটির সংখ্যা হবে মাত্র ২০ জন।
বোর্ডের মতামত হলো, ঘরোয়া ক্রিকেটাররা যেহেতু বোর্ডের আয়ে তেমন কোনো অবদান রাখতে পারে না, তাই লভ্যাংশের ভাগীদারও তারা হতে পারে না। ঘরোয়া ক্রিকেটারদের বদলে ওই টাকা বোর্ড খরচ করতে চায় তৃণমূল ক্রিকেটে। ক্রিকেটারদের আপত্তির জায়গা এখানেই। তাদের দৃষ্টিতে, এটি ঘরোয়া ক্রিকেটারদের জন্য অপমানজনক।
পুরনো নিয়মেই রাজস্ব আয়ের অংশ ঘরোয়া ক্রিকেটারদের মধ্যেও ভাগ করে দিতে হবে। তাহরে সবার সম্মানই রক্ষা হয়। নতুন প্রস্তাবে তারা তৃণমূল পর্যায়ে ব্যায় কমিয়ে ক্রিকেটারদের জন্য লভ্যাংশ ভাগ করার কথা বলা হয়। কিন্তু তাতেও রাজি নন ক্রিকেটাররা। ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশন বলছে, ‘আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে একটা ঐক্যমত্যে পৌঁছেছি। কোনো পুরুষ এবং নারী ক্রিকেটার চুক্তি স্বাক্ষরছাড়া অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলবো না। তাদের প্রস্তাবমতো হয়তো আমরা কয়েকজন চুক্তিতে আবদ্ধ হয়ে খেলবো, বাকিরা তো চুক্তির বাইরে চলে যাবে। এটা হতে পারে না। সিএ চায় ভাগ করো এবং শাসনকো নীতি। ক্রিকেটাররা সবাই আশাবাদী, বোর্ডের কর্মকর্তাদের মধ্যে সাধারণ চিন্তার উদয় হবে এবং ক্রিকেটারদের সবার স্বার্থ বিবেচনা করবে।’
আইএইচএস/এমএস