টাইব্রেকারে কেন শট নেননি রোনালদো?
ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের পর দেশকে প্রথমবারেরমত একটি বৈশ্বিক শিরোপা উপহার দেয়ার একেবারে দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েছিলেন বিশ্বসেরা ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। কিন্তু চিলির বিপক্ষে সেমিফাইনালে নির্ধারিত সময় এবং অতিরিক্ত সময়েও গোল করতে পারেননি তিনি এবং তার দল। প্রতিপক্ষও পায়নি গোলের দেখা। শেষ পর্যন্ত খেলা গড়াল টাইব্রেকারে।
ভাগ্য নির্ধারণের এই পর্যায়ে এসে পর্তুগালের হয়ে প্রথম শটটি নিতে আসেন রিকার্ডো কাওয়ারেসমা। তার শটটি ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ফিরিয়ে দেন চিলি গোল রক্ষক ক্লদিও ব্র্যাভো। দ্বিতীয় শটটি নেন হোয়াও মৌতিনহো। তিনিও একইভাবে ডান পাশে শট নেন। এবারও একইভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে শটটি ফিরিয়ে দিলেন ব্র্যাভো।
টানা দুটি শট ব্যর্থ। পর্তুগিজ সমর্থকরা ভেবেছিল প্রথম শটের পরই হয়তো দ্বিতীয় শটটি নিতে আসবেন রোনালদো। কারণ, প্রথমটি মিস হয়ে যাওয়া। দ্বিতীয় শটও নিতে আসলেন না সিআর সেভেন। এই শটটিও যখন মিস হলো, তখন সবাই ধরে নিয়েছিল- এই মুহূর্তে দলকে উদ্ধার করার জন্য হলেও তৃতীয় শটটি নিতে আসবেন রোনালদো।
কিন্তু না, সবাইকে অবাক করে দিয়ে লাইনেই দাঁড়িয়ে থাকলেন রিয়াল তারকা। শট নিতে আসলেন ন্যানি। এবার বাম পাশে শট নিলেন ম্যানইউর সাবেক এই ফুটবলার; কিন্তু এবারও ঝাঁপিয়ে পড়ে শটটি ফিরিয়ে দিলেন ব্র্যাভো। সঙ্গে সঙ্গেই বিজয়ের আনন্দে মেতে ওঠে চিলিয়ানরা। আর হতাশায় পুড়তে থাকে পর্তুগাল।
কেন রোনালদো শট নিতে আসলেন না? এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। টানা দুটি মিস হওয়ার পর তৃতীয় শটও নিতে না আসার পেছনে সমালোচকরা দেখছেন- রোনালদো যে সব সময় পঞ্চম এবং শেষ শটটি নেন এবং শেষ মুহূর্তের নায়কে পরিণত হন- এ লোভ থেকেই হয়তো নিজের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেননি তিনি। তাতে শট করার সুযোগই হারিয়েছেন সিআর সেভেন।
চারদিকে যখন রোনালদোর নামে সমালোচনায় মুখর, তখন কোচ ফার্নান্দো সান্তোস বললেন আসল রহস্যের কথা। তিনি জানালেন, কে শট নেবে না নেবে, কে কোন শটটি নিতে যাবে- সেটা সম্পূর্ণ তার সিদ্ধান্ত ছিল। এখানে অন্য কারও কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না।
গত বছর মার্সেইতে পোল্যান্ডের বিপক্ষে টাইব্রেকারে প্রথম শটটি নিয়েছিলেন রোনালদো। পর্তুগালও শেষ পর্যন্ত জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে। এবার প্রথম শটটি নিলেন না। দ্বিতীয়টিও না এমনকি তৃতীয়টিও না।
সান্তোস বলেন, ‘কে কখন শট নেবে- এটা ছিল আমার নির্দেশ। আমিই তালিকা তৈরি করে দিয়েছিলাম যে- কে কত নম্বর শটটা নেবে। যে তিনজন মিস করেছে, গত বছর পোল্যান্ডের বিপক্ষে তারা তিনজনই গোল করেছিল। এ কারণে, আমি এবার সেভাবেই তালিকা তৈরি করি। প্রথম দুটি মিস হওয়ার পরও তালিকা পরিবর্তনের বিষয়ে কোনো চিন্তা করিনি।’
কোচের কথার ওপর তো আর কেউ যেতে পারে না। ফার্নান্দো সান্তোস যদি চাইতেন, তাহলে দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় শটটি নিতে আসতেন রোনালদো। কোচই চাননি, তাই শট নেয়ার সুযোগই পাননি বিশ্বসেরা এই ফুটবলার।
ম্যাচের মূল্যায়ন করতে গিয়ে রোনালদোদের কোচ বলেন, ‘চিলি আমাদেরকে কোনো জায়গায়ই দেয়নি শট নেয়ার। জার্মানির বিপক্ষেও আমরা এটা দেখেছি। চিলি তাদের ওপর খুব প্রভাব বিস্তার করেছিল। যে কারণে ম্যাচটি ১-১ ড্র হয়েছিল।’
আমরা পরিকল্পনা করেছিলাম, ‘দুই উইং ধরে আক্রমণ সাজাবো। তারাও এই পরিকল্পনায় খেলে এবং গোল আদায় করে নেয়। আমরাও চিন্তা করেছি, তাদের ওপর চাপ তৈরি করবো এবং দ্রুত পাস বিনিময় করে গোলের সুযোগ বের করে আনবো। দু-একবার সফল হয়েছি যে তা নয়; কিন্তু নেটে বল জড়ানোর আসল কাজটাই কেউ করতে পারিনি।’
আইএইচএস/পিআর