শেষ চারে উপমহাদেশের প্রাধান্য
আইসিসি র্যাংকিংয়ে সেরা দুটি দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়া। তিন এবং চারে রয়েছে ভারত ও ইংল্যান্ড। এরপর পাঁচ নম্বরে নিউজিল্যান্ড। ছয়ে বাংলাদেশ। সাত-আটে শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তান।
র্যাংকিংয়ের এই অবস্থান অনেকেরই জানা। তবুও এখানে অবতারণা করার কারণ আছে। র্যাংকিংই যে সবকিছুর মানদণ্ড নয়, তা বুঝিয়ে দিয়েছে এবারের আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। শীর্ষে থাকা দুটি দেশ দক্ষিণ আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়া- এই দুটি দেশ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছে।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শেষ চারে যে চারটি দল জায়গা করে নিলো, তাদের মধ্যে উপমহাদেশেরই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের পর চতুর্থ দেশ হিসেবে এই লড়াইয়ে রয়েছে ইংল্যান্ড। এশিয়ার একমাত্র দেশ, শ্রীলঙ্কাকে বিদায় নিতে হয়েছে গ্রুপ পর্ব থেকে।
এক সময় উপমহাদেশের প্রাধান্য থাকার অর্থ ছিল, চার ভারত-পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা। এবার সেখানে যোগ হলো আরও একটি নাম, বাংলাদেশ।
‘এ’ গ্রুপে উপমহাদেশের দল ছিল কেবল একটি, বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মত দলকে বিদায় করে দিয়ে এই গ্রুপ থেকে শেষ চারে উঠেছে মাশরাফিরা। উপমহাদেশের বাকি তিন দল- ভারত, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা ছিল ‘বি’গ্রুপে। বাকি দলটি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। সেমিতে উঠবে দুটি দল। সেই দুটি জায়গা দখল করে নিল ভারত এবং পাকিস্তান। বিদায় নিয়েছে শ্রীলঙ্কা এবং দক্ষিণ আফ্রিকা।
একটি ম্যাচও জিততে পারেনি ক্রিকেটের সবচেয়ে সাফল্যমণ্ডিত দল অস্ট্রেলিয়া। প্রথমটি ছিল নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। হেরে যেতে পারতো অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু বৃষ্টি বাঁচিয়ে দিয়েছিল তাদেরকে। ১ পয়েন্ট এনে দিল। দ্বিতীয় ম্যাচ ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে। নিশ্চিত জয়ের ম্যাচ। কিন্তু এবারও বৃষ্টি। পয়েন্ট ভাগাভাগি করে দিল। শেষ ম্যাচে অবশ্যই জিততে হতো; কিন্তু ইংল্যান্ডের কাছে হেরে বিদায় নিতে হলো স্টিভেন স্মিথের দলকে।
দক্ষিণ আফ্রিকা সব সময়ই ‘চোকার্স’। বড় টুর্নামেন্ট আসলেই কেন যেন নিজেদের হারিয়ে ফেলে দলটি। তবুও সব সময় তারাই টপ ফেবারিট। এবারের টুর্নামেন্টে প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারাতে পারলেও দ্বিতীয় ম্যাচে এসে আচমকা হেরে বসে পাকিস্তানের কাছে। এরপর শেষ ম্যাচে হারলো ভারতের কাছে। সুতরাং, র্যাংকিংয়ে এক নম্বর দল হয়েও বিদায় নিতে হয়েছে তাদেরকে।
তিন নম্বরে থাকা ভারত এবারও টপ ফেবারিট। দুই সেরার বিদায়ে তো তাদেরকে ফেবারিট আরও বেশি বলা যায়। শ্রীলঙ্কার কাছে হারলেও বাকি দুই ম্যাচ জিতে অনায়াসেই শেষ চারে উঠে গেছে বিরাট কোহলির দল। চার নম্বরে থাকা ইংল্যান্ড এবারই সবচেয়ে বেশি ফেবারিট মনে হচ্ছে। কারণ, এখনও পর্যন্ত একমাত্র দল হিসেবে তারা অপরাজিত। তিন ম্যাচের সবগুলো জিতে তারা উঠেছে শেষ চারে।
পঞ্চম দল নিউজিল্যান্ডে প্রতিভার অভাব নেই। যে কোনো প্রতিষ্ঠিত দলকে চোখ বন্ধ করে দেয়ার মত শক্তি এবং সামর্থ্য রয়েছে তাদের। তবুও এই দলটি এবারের টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি ট্র্যাজিক। একটি ম্যাচ বৃষ্টিতে ভাসলো। ইংল্যান্ডের কাছে হারের পর অবিশ্বাস্যভাবে হেরে বসেছে বাংলাদেশের কাছে। সুতরাং বিদায়। গত বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট হিসেবে কোনো প্রভাবই বিস্তার করতে পারলো না তারা।
র্যাংকিংয়ে ছয় নম্বরে থাকা বাংলাদেশই সবচেয়ে বেশি সৌভাগ্যবান বলতে গেলে। প্রথম ম্যাচে ৩০৫ রান করেও হার। দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পুঁজি মাত্র ১৮১। নিশ্চিত পরাজয়। এ অবস্থায় বৃষ্টি এসে বাঁচিয়ে দিল বাংলাদেশকে। পয়েন্ট পেলো একটি। এই ম্যাচের পরই হিসাব-নিকাশ শুরু, কিভাবে সেমিতে যেতে পারে বাংলাদেশ। নিজেদের কাজ ছিল একটাই, নিউজিল্যান্ডকে হারানো। সেই কাজটা করে দিলেন মাহমুদউল্লাহ আর সাকিব। বাকি কাজগুলো ছিল নিয়তি নির্ভর। সেই নিয়তির খেলা শেষ পর্যন্ত গেলো বাংলাদেশের পক্ষেই। সেমি নিশ্চিত হয়ে গেলো মাশরাফিদের।
সপ্তম স্থানে থাকা শ্রীলঙ্কা প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরে গেলেও দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতের ৩২১ রানে বিশাল লক্ষ্যকে অবিশ্বাস্যভাবে টপকে যায়। লঙ্কানদের এই ম্যাচ জেতার কারণে ‘বি’ গ্রুপে নাটকীয়তা তৈরি হয়। তবে শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে হেরেই তাদের ম্যাজিক শেষ হয়ে যায়। বিদায় নিতে হয় গ্রুপ পর্ব থেকে।
আট নম্বরে থাকা পাকিস্তান, র্যাংকিংয়ের হিসেবে এবারের টুর্নামেন্টে সবচেয়ে নিচু সারির দল। বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কারও পেছনে। দলটির যে অবস্থা, কেউ বাজি ধরার সাহস পায়নি। তারওপর প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে বিধ্বস্ত হওয়ার পর তো পাকিস্তানিরা বিমানের টিকিটও রেডি করে ফেলেছিলেন প্রায়; কিন্তু ক্রিকেটে সব সময়ই আনপ্রেডিক্টেবল হিসেবে পরিচিত পাকিস্তান দ্বিতীয় ম্যাচে হারিয়ে দিলো দক্ষিণ আফ্রিকাকে। জমে উঠলো ‘বি’ গ্রুপ থেকে সেমিতে ওঠার লড়াই। শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কাকে শেষ ম্যাচে নাটকীয় পরিস্থিতিতে, সরফরাজ আর মোহাম্মদ আমিরের ব্যাটিং নৈপুন্যে সেমিতে জায়গা করে নিলো পাকিস্তান।
আইএইচএস/এমএস