সেমিতে শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তানের সঙ্গেও দেখা হতে পারে বাংলাদেশের!
প্রিয় জাতীয় দল প্রথমবার আইসিসির মেগা বা বিশ্ব ইভেন্টের সেমিফাইনালে। মাশরাফি, তামিম, মুশফিক, সাকিব ও মাহমুদউল্লাহদের এ অসামান্য কৃতিত্বে উদ্বেলিত গোটা জাতি। সারা দেশে আনন্দের ফলগুধারা। এর পাশাপাশি একটি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন সবার মনে উকি ঝুঁকি দিচ্ছে, ‘আচ্ছা সেমিফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ কে হবে? ১৫ জুন বার্মিংহামের এজবাস্টনে মাঠে সেমির যুদ্ধে টাইগাররা কার মুখোমুখি হবেন?
খালি চোখে দেখা যাচ্ছে, ভারত আর দক্ষিণ আফ্রিকার যে কোনো দলই হয়তো হবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী। কারণ এ মুহূর্তে বিরাট কোহলির দল আর এবি ডি ভিলিয়ার্স বাহিনীরই বি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
তার মানে, আজ মাঠে বিজয়ীই হয়তো হবে সেমির যুদ্ধে টাইগারদের প্রতিপক্ষ। কিন্তু আসলেই কি তাই? ভারত কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকাই কি শুধু সেমিতে বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ? খালি চোখে যতই মনে হোক এ মুহূর্তে পয়েন্ট টেবিলে ভারত যতই এ নম্বরে থাকুক, দক্ষিণ আফ্রিকা যতই তার পেছনে থাকুক না কেন- এই দুদলের কেউই যে বি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হবে, তারই বা নিশ্চয়তা কি?
কারণ ওই দু’দল যতই নেট রানরেটে এগিয়ে থাকুক না কেন, এখন পর্যন্ত বি গ্রুপের চার দলের পয়েন্ট সমান ২ করে।
অর্থাৎ যে কোনো দুই দলের ২+২ = ৪ পয়েন্ট হতে পারে। সেটা যেমন ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার যে কোনো এক দলের হতে পারে। আবার শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের যে কারোরও হতে পারে।
কারণ আজ যেমন ভারতীয় ও প্রোটিয়াদের লড়াই, কাল একইভাবে লঙ্কানরা লড়বে পাকিস্তানিদের সাথে। এ মুহূর্তে নেট রানরেটে ভারত (নেট রানরেট+১.২৭২) এক নম্বরে। কোহলিদের কাঁধেই নিঃশ্বাস ফেলা দক্ষিণ আফ্রিকার নেট রানরেট +১.০০০। তিন নম্বরে শ্রীলঙ্কা (রানরেট -০.৮৭৯)। সবার নিচে পাকিস্তান (-১.৫৪৪)।
খুব স্বাভাবিকভাবে গাণিতিক সমিকরণে এই চার দলের সমান সম্ভাবনা আছে সেমিফাইনাল খেলার। এখন বেশির ভাগ অনুরাগী ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকেই বি গ্রুপের সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন ধরে হিসাব কষছেন। তারা ধরে নিয়েছেন, যেহেতু ভারত ও দক্ষিন আফ্রিকা যেহেতু নেট রানরেটে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার চেয়ে ভালো অবস্থানে, তাই তাদের পারস্পরিক মোকাবিলায় যে জিতবে সেই দলকেই সম্ভাব্য এক নম্বর ভাবা হচ্ছে। কিন্তু একটু খুঁটিয়ে দেখছেন না সেটাই কি শেষ কথা?
নাহ সেটাই শেষ কথা নয়। আরও হিসাব-নিকাশ আছে। এবং সে হিসেব মোটেই জটিল নয়। খুবই সহজ ও সরল। সবার জানা এই গ্রুপের চার দলের পয়েন্ট এখন সমান। এখন যে কোনো দুই দলের আরও ২ পয়েন্ট করে বাড়তে পারে। প্রথম হিসেব ধরা হচ্ছে আজ ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার লড়াইয়ে এক দল তো জিতবেই। যেহেতু এই দুই দলের নেট রান রেট শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের চেয়ে বেশ ভালো, তাই এই দু দলের যে জিতবে তারাই হবে বি গ্রুপের এক নম্বর।
কাল পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বিজয়ী দলেরও পয়েন্ট হবে ৪। কিন্তু নেট রানরেটে পিছিয়ে থাকায় তাদের দ্বিতীয় স্থান পেয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। দ্বিতীয় হিসেবটা মাথায়ই আসছে না অনেকের। কিন্তু এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সামগ্রিক চালচিত্র পর্যালোচনা করলে আরও একটি হিসেব মাথায় আসবে।
তা হলো এই দুই ম্যাচের যে কোনো একটি বিশেষ করে আজ ভারত ও দ. আফ্রিকার ম্যাচ যে বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হবে না, তাই বা কি করে বলা? এ আসরে এখন পর্যন্ত দুুটি ম্যাচ বৃষ্টিতে পণ্ড হয়েছে। কাকতালীয়ভাবে দুটি খেলাই অস্ট্রেলিয়ার। একটি বাংলাদেশের সাথে। অন্যটি নিউজিল্যান্ডের সাথে।
আরও বেশ কয়েকটি ম্যাচে বৃষ্টি বাগড়া দিয়েছে। সেগুলোতেও ডাকওয়ার্থ লুইস ম্যাথড বা বৃষ্টি আইনে ভাগ্য নির্ধারিত হয়েছে। কে জানে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচও বৃষ্টিতে ধুয়ে মুছে যেতে পারে। বৃষ্টিতে পণ্ড হলে দু’দল সমান এক পয়েন্ট করে পাবে। তখন তাদের পয়েন্ট দাড়াবে ২+১ = ৩। আর কাল শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান ম্যাচ যদি ভালোয় ভালোয় শেষ হয় তাহলে বিজয়ী দলের সংগ্রহ দাঁড়াবে ২ + ২ = ৪। তখন আর নেট রানরেটের কোনই দরকার পড়বে না, ওই ম্যাচের বিজয়ী দলই পাবে গ্রুপের শীর্ষ স্থান।
যেহেতু এই আসরে দুটি ম্যাচ পণ্ড হয়েছে বৃষ্টিতে। তাই বৃষ্টির কথা ভুলে গেলে চলবে না। সেটাও বিবেচনায় রাখতে হবে। তবে বেশির ভাগ হিসেবকারীই এ চিন্তা মাথায় আনছেন না। তারা সোজাসুজি ভাবছেন। কিন্তু আরও একটা বিকল্প হিসেবও যে আছে, তা বেমালুম ভুলেই গেছেন।
আরও হিসেবে আছে। ধরা যাক আজকের খেলা ভালোয় ভালোয় শেষ হলো ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার যে কোনো দল জিতে চার পয়েন্ট পেয়ে সেমিতে চলে গেল। তারপরও বলা যাবে না, সেই দলই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। অপেক্ষায় থাকতে হবে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান ম্যাচের ফলের দিকে। সেখানে যে কোন দল এক তরফা বা অনেক বড় ব্যবধানে জিতবে না, তাই বা কি করে বলা?
ধরা যাক পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার যে কোনো এক দল ৩০০+ রান করে প্রতিপক্ষকে ১৫০ ‘র আশপাশে অলঅাউট করে দিল, তখন কি হবে? তখন তো এখন যে নেট রানটে আছে, তার চেহারাও পাল্টে যেতে পারে। মানে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের কোনো এক দলও নেট রানরেটে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে পারে।
এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে যেভাবে বৃষ্টি প্রতি পদে পদে বাঁধা হয়ে দাড়াচ্ছে, তাতে শুধু যে আজকের ম্যাচই পণ্ড হতে পারে, তাই বা কি করে বলা? কালকের ম্যাচও ধুয়ে মুছে যেতে পারে। কাজেই শেষ কথা হলো আগামী ১২ জুন শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান ম্যাচের আগে বি গ্রুপের জট খুলবে না।
শুধু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির কথা বলা কেন, বিশ্বের তাবৎ আসরেই সেমিফাইনাল হয় একটা নির্দিষ্ট ছকে। সেখানে এ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন খেলে বি গ্রুপের রানার্স-আপের সাথে। আর বি গ্রুপের এক নম্বর স্থান পাওয়া দলের সেমিতে প্রতিপক্ষ হয় এ গ্রুপের দ্বিতীয় স্থান পাওয়া দল।
এআরবি/এনইউ/পিআর