সাকিব-মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে অবাক তাকিয়ে বিশ্ব ক্রিকেট
কার্ডিফ যেন বাংলাদেশের জন্য রূপকথার এক ভেন্যু। সেখানে বাংলাদেশ খেলতে নামলেই যেন জয় অবধারিত। প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড যেই হোক। এক যুগ আগে এই মাঠেই অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল হাবিবুল বাশারের দল। দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করেছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল।
এবার সেই একই মাঠে এক যুগ পর আবারও ইতিহাস রচনা করলো টাইগাররা। নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশকে এনে দিলো অবিস্মরণীয় এক জয়। সাকিব আল হাসান আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অবিশ্বাস্য ২২৪ রানের জুটি বাংলাদেশকে জয় উপহার দিয়েছে।
৩৩ রানে ৪ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের পরাজয়ই সবাই নিয়তি ধরে নিয়েছিল। সবাই হয়তো অপেক্ষায় ছিল, কতটা সম্মানজনকভাবে হারা যায়- সেটা নিয়ে। এই অবস্থায় জয়ের চিন্তা তো কোনো পাগলও করবে না। কারণ, যেখানে জয়ের অবস্থা থেকেও অনেক ম্যাচে হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ এবং এটা নিয়মিত ঘটনা প্রায়, সেখানে পরাজয়ের অবস্থা থেকে জয় তো চিন্তাই করা যায় না।
এই অবস্থায় দাঁড়িয়ে অবিশ্বাস্য ব্যাটিং করলেন সাকিব আল হাসান আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তারা নিজেরাও হয়তো এতটা কল্পনা করতে পারেননি। জোড়া সেঞ্চুরি এবং বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবারেরমত ডাবল সেঞ্চুরির জুটি গড়ে ইতিহাস সৃষ্টি করলেন এই দুই মিডল অর্ডার।
এমন গৌরবময় কামব্যাক ইনিংস বাংলাদেশ তো দুরে থাক, ক্রিকেট বিশ্বও কী খুব একটা দেখেছে! এমন অবিশ্বাস্য ইনিংসও ক’জনই বা দেখেছে? চরম বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে জুটি গড়াই নয় শুধু অসাধারণ ব্যাটিং করে বাংলাদেশকে নিয়ে গিয়েছেন জয়ের দ্বারপ্রান্তে।
সত্যি সাকিব-মাহমুদউল্লাহর এই অসাধারণ জুটি বিস্ময়ে হতবাক করে দিয়েছে পুরো ক্রিকেট বিশ্বকে। সবারই একটা কথা, এটা অবিশ্বাস্য। এমন ব্যাটিং তো সচরাচর দেখা যায় না। অসাধারণ এক জুটি গড়েছেন দুই টাইগার ব্যাটসম্যান।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের সব সময়ের বন্ধু এবং গুনমুগ্ধ হিসেবে পরিচিত হার্শা ভোগলে টুইট করেছেন, ‘একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশ সফরে গিয়ে দলগুলো চাইত বাংলাদেশ আগে ব্যাটিং করুক। খেলাটা যাতে আগে শেষ হয়ে যায়। কী দারুণভাবেই না পরিস্থিতি পাল্টে গেছে।’
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাটিংয়ের আলাদাভাবে প্রশংসা করলেন তিনি। বললেন, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা দুই জয়ে একটা বিষয়ে দারুণ মিল- মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরি।’ সাকিবের ব্যাটিংয়ের প্রশংসা করে তিনি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটারের ব্যাট থেকে এল অন্যতম সেরা সেঞ্চুরিটি।’
শহিদ আফ্রিদি বাংলাদেশের রান তাড়া করে জয় দেখে অবাক। টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘দুর্দান্ত চেজ বাংলাদেশের। অসাধারণ কামব্যাক। সাকিব এবং মাহমুদউল্লাহর মধ্যে দুর্দান্ত পার্টনারশিপ। #CT17 মনে হচ্ছে এখনও জীবস্ত।’
ওয়েস্ট ইন্ডিজের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ড্যারেন স্যামিও অবাক। তিনি টুইটারে লিখেছেন, ‘কী অসাধারণ রান তাড়া টাইগারদের!’
নিউজিল্যান্ডের সাবেক অলরাউন্ডার এবং বর্তমানে ধারাভাষ্যকার স্কট স্টাইরিস উচ্চসিত প্রশংসা করলেন বাংলাদেশের। তিনি টুইটারে লিখেছেন, ‘টাইগারদের অভিনন্দন। দারুণ পারফরম্যান্স। বৃষ্টির কথা ভুলে যান। টানা তিনটি আপসেট যেন এটা। আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কেউ ফেবারিট নয়। যে কারও এই টুর্নামেন্ট।’
জেফ্রি বয়কট টুইটারে লিখেছেন, ‘কী চমৎকার পারফরমেন্স সাকিব আল হাসান আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। অবিশ্বাস্য। বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন অনেক উজ্জ্বল।’
সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক এবং ধারাভাষ্যকার তো যারপরনাই মুগ্ধ। তিনি বিশ্বাসই করতে পারছেন না সাকিব-মাহমুদউল্লাহ এমন একটি ইনিংস খেলে ফেলেছেন। এর আগে কখনও এমন কামব্যাক তিনি দেখেছেন কি না সন্দেহ। ভন লিখেছেন, ‘ওয়ানডে ক্রিকেটে এর চেয়ে সেরা জুটির কথা আমি মনে করতে পারছি না। ৩৩ রানে ৪ উইকেট নেই। বল সুইং করছে এমন পরিস্থিতিতে এই জুটি।’ মাইকেল ভন নিজের টুইটে এই জুটি নিয়ে ‘বেস্ট এভার’ কথাটি লিখে হ্যাশট্যাগ দিয়েছেন।
নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালাম বলেছেন, ‘প্রচণ্ড চাপের মুখেও মাথা নত করেনি বাংলাদেশ।’ অস্ট্রেলীয় লেগ স্পিন কিংবদন্তি শেন ওয়ার্ন এমন জয়ের পর টুইটারে অভিনন্দন জানিয়েছেন বাংলাদেশকে।
সঞ্জয় মাঞ্জরেকার মুগ্ধ সাকিব-মাহমুদউল্লাহর জুটিতে। বলেছেন, ‘এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ম্যাচজয়ী বেশ কিছু জুটি দেখলাম। সাকিব-মাহমুদউল্লাহর জুটি সেগুলোর অন্যতম।’
আকাশ চোপড়া টুইট করেছেন মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে। তিনি ভেবে পাচ্ছেন না এমন একজন ব্যাটসম্যান আইপিএলে কোনো দল পান না কীভাবে, ‘মাহমুদউল্লাহ- সুবহান আল্লাহ! তৃতীয় ওয়ানডে সেঞ্চুরি...। সবগুলোই আইসিসির প্রতিযোগিতাতে। অবাক লাগছে, আইপিএলের কোনো দল মাহমুদউল্লাহকে নেয়নি কেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটের অন্যতম সেরা দিন এটি।’
আইএইচএস/আরআইপি