‘তামিম একা ভালো খেললে চলবে না, দরকার টিম পারফরম্যান্স’
বৃষ্টি কি বাংলাদেশের ভাগ্য খুলে দিল? ভক্ত ও সমর্থকরা উদ্বেলিত। রোমাঞ্চিত। তাদের সবার একটাই কথা- প্রকৃতি মাশরাফি বাহিনীর পক্ষে? সে কথাবার্তাকে আবেগপ্রসূত সংলাপ বলা যাবে না। আসল সত্য হলো- প্রকৃতিই এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের অস্তিত্ব ধরে রেখেছে।
না হয় ইংল্যান্ডের সাথে ৩০৫ রানের বড়সড় স্কোর গড়ে আট উইকেটে হারের পরই বিদায় ঘণ্টা প্রায় বেজে গিয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার সাথে দ্বিতীয় ম্যাচেও হারের উপক্রম হয়েছিল। ১৮২ রানের মামুলি স্কোরে অলআউট হওয়া ম্যাচ বৃষ্টিতে ধুয়ে মুছে গেছে। জবাবে অসিরা বীরদর্পেই জয়ের পথে ছুটছিল।
১৬ ওভারে এক উইকেটে ৮৩ রানও তুলে ফেলেছিল। যা ডি/এল ম্যাথডে টার্গেটের চেয়ে অনেক বেশি। ডাকওয়ার্থ লুইস ম্যাথডে ২০ ওভারে অজিদের দরকার ছিল মোটে ৪৮ রান (এক উইকেটে)। সেখানে স্মিথের দল প্রায় দ্বিগুণ রান করে ফেলেছিল।
কাজেই ওই ম্যাচ পুরো কিংবা ২০ ওভার যতটুকুই হোক না কেন, অসিদের জয় ঠেকানোর পথ একরকম রুদ্ধ হয়েই ছিল। আর হারলে নিশ্চিতভাবেই বাদ পড়তে হতো। কিন্তু সেই ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হওয়ায় হঠাৎ সম্ভাবনার প্রদীপ জ্বলেছে। এখন হিসাব খুব পরিষ্কার।
শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে হারাতে হবে টাইগারদের। পাশাপাশি ইংল্যান্ডের কাছে অস্ট্রেলিয়ারও হারতে হবে। তবেই শেষ চারে পৌছে যাবে মাশরাফির দল। যেহেতু ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ পরে, তাই সবার চোখ বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড ম্যাচের দিকে। বাংলাদেশ জিতলে সেমির পথে এগিয়ে যাবে অনেকটা।
এখন বাংলাদেশ আর নিউজিল্যান্ডের পয়েন্ট সমান (দুই খেলায় এক করে)। ব্ল্যাক ক্যাপসদের হারাতে পারলে টাইগারদের পয়েন্ট দাঁড়াবে তিন খেলায় ৩। আর অস্ট্রেলিয়ার আছে দুই খেলায় ২। কাজেই নিউজিল্যান্ডকে হারাতে পারলে সেমির পথে অনেক দূর এগিয়ে যাবে মাশরাফি বাহিনী।
এখন আগামী ৯ জুন কার্ডিফে বাংলাদেশ আর নিউজিল্যান্ড গ্রুপ ম্যাচটি অঘোষিত কোয়ার্টার ফাইনাল হয়ে গেছে। তাতে জিততে পারবে বাংলাদেশ? কার্ডিফের খবর, টিম বাংলাদেশ আশাবাদী। অধিনায়ক মাশরাফিসহ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও পুরো দল আশার প্রহর গুণছে। তাদের বিশ্বাস ও আস্থা, নিউজিল্যান্ডকে হারানোর সামর্থ্য তাদের আছে।
এইতো ১৫ দিন আগে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে হারিয়ে এসেছি। এখন সেমিতে খেলতে আবার সে সাফল্যের পুনরাবৃত্তি প্রয়োজন। আমরা আবার কিউইদের হারাতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ভক্ত ও সমর্থকদের বড় অংশও আশার জাল বুনেছেন।
এদিকে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুও আশাবাদী। তারও বিশ্বাস, নিউজিল্যান্ডকে হারানোর সামর্থ্য আছে বাংলাদেশের। তার প্রমাণ গত মাসের শেষ সপ্তাহে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনেই দিয়েছে মাশরাফির দল। এবার কার্ডিফে সামর্থের সঠিক প্রয়োগ ঘটাতে পারলে কিউইদের হারানো সম্ভব।
আজ পড়ন্ত বিকেলে জাগো নিউজের সাথে আলাপে নিউজিল্যান্ডের সাথে ম্যাচ নিয়ে আলাপকালে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান প্রধান নির্বাচকের আশাবাদী উচ্চারণ, ‘আমি ড্রেসিংরুমে বসে দেখেছি, আমাদের ছেলেরা ব্যাটিং ও বোলিংয়ের সব শাখায় কিউদের চেয়ে বেটার ক্রিকেট খেলেই জিতেছিল। ওই ম্যাচেই প্রমাণ হয়েছে আমরা নিউজিল্যান্ডকে হারানোর সামর্থ্য রাখি।’
দলের সাথে আয়ারল্যান্ডের তিন জাতি টুর্নামেন্টে ছিলেন। ইংল্যান্ডের সাথে প্রথম ম্যাচটিও ওভালে বসে দেখেছেন।
দেশে ফিরেছেন পরশু রাতে। আজ জাগো নিউজের সাথে আলাপে অনেক কথার ভিড়ে মিনহাজুল আবেদিন তিনটি তাৎপর্যপূর্ণ কথা বলেছেন।
তার প্রথম কথা, ‘আমি বিশ্বাস করি এবং মন এবং বোধ ও অনুভব থেকেই মনে করি নিউজিল্যান্ডের সাথে জেতার যথেষ্ঠ শক্তি ও সামর্থ্য আছে আমাদের। তবে অবশ্যই জায়গামতো সে শক্তি ও সামর্থ্যের প্রয়োগ ঘটাতে হবে।
উইকেট সম্পূর্ণ ভিন্ন।’
তারপরও মিনহাজুল আবেদিন মনে করেন, ‘ডাবলিনের সেই পারফরম্যান্সটুকু হলেই চলবে। তারচেয়ে বেশি কিছু করার দরকার নেই। ওই ম্যাচে আমাদের বোলিং, ফিল্ডিং ও ব্যাটিং বেশ ভাল হয়েছিল। সেই পারফরম্যান্সটা কার্ডিফে হলেই হয়।’
প্রসঙ্গত, ডাবলিনের ক্লোনটার্ফ ক্রিকেট ক্লাব মাঠে কিউইদের বিপক্ষে সবার সম্মিলিত চেষ্টা আর টিম পারফরম্যান্সে ৫ উইকেটের এক দারুণ জয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন টাইগাররা। অধিনায়ক মাশরাফি আর বাঁহাতি স্পিনার সাকিব এবং অফস্পিনার নাসিরের সাড়াশি বোলিংয়ে ২৭০ রানে আটকে যায় কিউইরা।
এরপর ব্যাটিংয়ে ওপেনার তামিম ইকবাল (৮০ বলে ৬৫) আর ওয়ান ডাউন সাব্বির রহমানের (৮৩ বলে ৬৫) জোড়া হাফ সেঞ্চুরি । এরপর ষষ্ঠ উইকেটে দুই ভায়রা মুশফিকুর রহিম (৪৫ বলে ৪৫*) ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের (৩৬ বলে ৪৬*) চওড়া ব্যাটে ১০ বল আগে ৫ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যাওয়া।
মিনহাজুল মানছেন কন্ডিশন বেশ ভিন্ন। ডাবলিনের পিচ ছিল তুলনামূলক নরম। আর ইংল্যান্ডে উইকেট তুলনামূলক দ্রুত গতির। আর সবচেয়ে বড় কথা, আবহাওয়ার কারষে ক্ষণেক্ষণে চরিত্র বদলাচ্ছে। কখনো ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি। আবার বৃষ্টির পর সীমিং কন্ডিশন হয়ে যাচ্ছে। পেস বোলারদের বল এদিক-ওদিক ম্যুভ করছে।
কাজেই ইংলিশ কন্ডিশনকে খানিক কঠিনই মানছেন মিনহাজুল। এ কঠিন কন্ডিশনে তার প্রত্যাশা টিম পারফরম্যান্সের।
তার সোজাসাপটা কথা, ‘তামিম খুব ভালো ফর্মে আছে। দারুণ আস্থা, আত্মবিশ্বাস আর দায়িত্ব নিয়ে খেলছে। কিন্তু সে দুই ম্যাচ প্রায় একাই খেলেছে। ইংল্যান্ডের সাথে ম্যাচে মুশফিক সাপোর্ট দিলেও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তামিম একাই খেলেছে। বাকি সবাই ব্যর্থ। নিউজিল্যান্ডের সাথে কার্ডিফে ৯ জুন তা হলে চলবে না। তামিম একা খেললে হবে না। ব্যাটসম্যানদের সবার দায়িত্ব নিয়ে খেলতে হবে। যার যার ভূমিকা, দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে- তা যথাযথভাবে পালন করতে হবে। আর বোলিংটাও হতে হবে ধারাল।’
অন্যতম চালিকাশক্তি সাকিব নিজেকে মেলে ধরতে পারছে না। তার ব্যাট ও বল কথা বলছে না। এটা কি দলের পারফরম্যান্সের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে? প্রধান নির্বাচকের ব্যাখ্যা, ‘সাকিব আমাদের দলের অন্যতম নির্ভরতা। তার বোলিং-ব্যাটিং দুটিই আমাদের সম্পদ। তার ভালো খেলা অবশ্যই দলের পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলে।
তবে বাস্তবতা হলো, সবার সব সময় সমান যায় না। বিশ্বের সব ক্রিকেটারেরই খারাপ সময় যায়। হয়তো সাকিবেরও সময়টা তেমন ভালো যাচ্ছে না। সেটা অস্বাভাবিক নয়। তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সাকিব বিশ্বমানের ক্রিকেটার। বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ঠিক দেখবেন নিজেকে আবার খুঁজে পাবে। তার বল ও ব্যাট ঠিক জ্বলে উঠবে। হয়ত সময়ের ব্যাপার।’
আর সাকিব নিজেকে খুঁজে পেলে টিম পারফরম্যান্স আরও উজ্জ্বল হবে। প্রধান নির্বাচক একা নন। গোটা দেশ ও জাতিরও আশা তা-ই। সাকিব তার মতো খেলুন। বল হাতে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের মাথা ব্যাথার কারণ হন। আর ব্যাট আবার দ্যুতি ছড়াক।
এআরবি/এনইউ/পিআর