না ঘুমিয়ে মাঠে নেমেই সেঞ্চুরি নাসিরের
প্রথমে মনে হচ্ছিলো দ্বিতীয় ম্যাচে খেলতে পারবেন না। তারপর যখন প্রচণ্ড গরমের কারণে সুপার লিগের মাঝে একদিনের বদলে দু’দিনের বিরতি রাখা হলো তখন খোদ গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দীন আশাবাদি হয়ে ওঠেন। জাগো নিউজের কাছে গত সপ্তাহে দেয়া একান্ত এক সাক্ষাৎকারে জানান, ২৪ মে`র পর ২৭ মে দ্বিতীয় ম্যাচ হলে নাসির খেলতে পারবে।
কোচের সে আশা সত্য হয়েছে। আয়ারল্যান্ড থেকে ফিরে আজ শেখ জামালের বিরুদ্ধে গাজী গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচ ঠিকই খেলেছেন নাসির। শুধু খেলেননি, চরম সংকটে দারুণ এক সেঞ্চুরি উপহার দিয়েছেন। যার পরতে পরতে ছিল আস্থা, আত্ববিশ্বাস ও দৃঢ় সংকল্প। আমাকে ভালো খেলতেই হবে। আমি দল জিতিয়েই মাঠ ছাড়বো, এমন পণ করে ব্যাটিংয়ে নামা গাজী গ্রুপের অধিনায়ক সত্যিই সংগ্রামী শতক উপহার দিয়ে দল জিতিয়ে বিজয়ীর বেশে মাঠ ছেড়েছেন।
শেখ জামালের বিরুদ্ধে নাসিরের ১১৩ বলে হাফ ডজন ছক্কা আর সাত বাউন্ডারিতে সাজানো ১৩৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংসটির ওপর ভর করে সাড়ে তিনশো রানের নিরাপদ ও বড় সড় স্কোর পায় গাজী গ্রুপ। এর সঙ্গে ফর্মের চুড়োয় থাকা বাঁ-হাতি পেসার আবু হায়দার রনির ক্যারিয়ার সেরা বোলিং স্পেল (৩৫ রানে ৬ উইকেট) যোগ হলে শেষ পর্যন্ত ১৭৭ রানের বড় জয়ের দেখা পেয়েছে গাজী গ্রুপ।
এই যে নাসির আসলেন, খেললেন আর সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে সুপার লিগের প্রথম ম্যাচে মোহামেডানের কাছে হেরে যাওয়া দলকে আবার জয়ের পথ দেখালেন তা অবশ্যই নাসিরের মেধা, প্রজ্ঞা, ভালো খেলার প্রবল ইচ্ছে এবং দল জেতানোর দৃঢ় সংকল্পের কথা জানান দিয়েছে। কিন্তু সেটাই শেষ কথা নয়। গল্পের পিছনেও যেমন গল্প থাকে, নাসিরের আজকের ম্যাচ খেলার পেছনের আছে আরেক গল্প।
নাসিরের আজকের ম্যাচও খেলার কথা ছিল না। কারণ আয়ারল্যান্ডে তিন জাতি টুর্নামেন্ট শেষে বাংলাদেশ দলের গন্তব্য ছিল পাকিস্তানের সঙ্গে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম ওয়ার্ম আপ ম্যাচের ভেন্যু বার্মিংহামে। ডাবলিন থেকে জাতীয় দলের বহরের সঙ্গে বার্মিংহাম পৌঁছানোর পর নাসিরসহ যে কজনের দেশে ফেরত আসার কথা ছিল তাদের সবার রিটার্ন ফ্লাইট বুকিং করা ছিল বার্মিংহাম থেকে। এখন বার্মিংহাম থেকে লন্ডন হয়ে রাজধানী ঢাকার যে বিমানের টিকিট কনফার্ম ছিল, সেটায় আসলে নাসির ঢাকা পৌঁছাতেন আজ। কারণ সেই ফ্লাইট বার্মিংহাম থেকে ছাড়ার কথা ছিল ২৬ মে। ঐ ফ্লাইটে আসলে নাসির নির্ঘাত শনিবার শেখ জামালের সঙ্গে গাজী গ্রুপের দ্বিতীয় ম্যাচও পেতেন না।
এদিকে পয়েন্ট তালিকায় সবার ওপরে থেকে সুপার লিগ শুরু করে তুলনামূলক কম শক্তির মোহামেডানের কাছে প্রথম ম্যাচ হেরে চরম চিন্তায় গাজী গ্রুপ কর্তারা। নাসির ছাড়া অবস্থা বেগতিক দেখে ঢাকা থেকে গাজী গ্রুপ কর্মকর্তারা সরাসরি বার্মিংহাম থেকে নাসিরকে একদিন আগে দেশে ফেরার জন্য নতুন এয়ার টিকিটের ব্যবস্থা করেন। বোর্ডের বিশেষ অনুমতি নিয়ে ঠিক হয় সেই ফ্লাইট। যা বার্মিংহাম ছাড়ে ২৫ মে। আর নাসির তা চেপে দুবাই হয়ে রাজধানী ঢাকা পৌঁছান শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায়। বার্মিংহাম-লন্ডন ও দুবাই হয়ে ১৬/১৭ ঘন্টা দীর্ঘ বিমান ভ্রমণের ক্লান্তির পর বাসায় ফিরে কোথায় বিশ্রাম নেবেন, তার সুযোগ নেই। রাত পার করে কাকাডাকা ভোরে ছুটতে হলো ফতুল্লা। যে কারণে ক্লান্ত-অবসন্ন নাসিরের ঘুম হয়নি এক ফোটাও।
শনিবার সন্ধ্যার ঠিক আগে জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপে নাসির জানান, ‘বিশ্বাস করেন ভাই রাতে এক মুহূর্তও ঘুম আসেনি। কেন আসেনি, জানি না। ক্লান্তি, অবসাদ বেশি হলে নাকি ঘুম হয়, আমার দীর্ঘ বিমান ভ্রমণের পরও কেন ঘুম আসলো না, বুঝলাম না। এই রাতে না ঘুমিয়েও দলের কথা ভেবে মাঠে নামা।’
জাগো নিউজকে এ তথ্য দিয়ে নাসির বলেন, ‘গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স অফিসিয়ালরা আমার জন্য যা করেছেন, আমি চেষ্টা করেছি তার প্রতিদান দিতে। তারা আমাকে জাতীয় দলের ফ্লাইট সিডিউল পাল্টে নতুন ফ্লাইট বুকিং করে একদিন আগে বার্মিংহাম থেকে ঢাকা আনার ব্যবস্থা করেছেন। আমি যতটুকু জানি সেটা গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের নিজেদের অর্থ দিয়ে। তারা আমাকে যে বিশ্বাস ও আস্থা রেখে নিজেদের খরচে একদিন আগে দেশে ফিরিয়ে এনেছেন, আমি সে আস্থার মর্যাদা দিতে পেরেছি, এই ভেবে বেশি ভালো লাগছে।’
এআরবি/এমআর/আরআইপি