বাংলাদেশকে ২৭১ রানের লক্ষ্য দিল নিউজিল্যান্ড
ত্রিদেশীয় সিরিজের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন নিউজিল্যান্ডের তিন ব্যাটসম্যান। টম ল্যাথাম, নেইল ব্রুমের পর রস টেলর। এই তিন ফিফটিতে ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৭০ রান তুলেছে নিউজিল্যান্ড। জয়ের জন্য বাংলাদেশের সামনে ২৭১ রানের লক্ষ্য দিল কিউইরা।
ডাবলিনের ক্লনটার্ফ ক্রিকেট ক্লাবে গড়ানো ম্যাচটিতে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন মাশরাফি। নিউজিল্যান্ডকে পাঠান ব্যাটিংয়ে। বোলিংয়ে বাংলাদেশকে শুভসূচনা এনে দেন দুর্দান্ত ছন্দে থাকা মোস্তাফিজুর রহমান। নিউজিল্যান্ড শিবিরে সবার আগে আঘাত হানেন কাটার মাস্টার। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে লুক রনকিকে পরাস্ত করেন তিনি। চতুর্থ ওভারের চতুর্থ বলে মোস্তাফিজকে তুলে মারেন রনকি। এক্সট্রা কাভারে সাকিব আল হাসানের হাতে ধরা পড়েন কিউই এই উইকেটরক্ষক। বিদায়ের আগে ৫ বল খেলে রনকি করেছেন ২ রান।
শুরুর ধাক্কা সামলে ওঠে নিউজিল্যান্ড। দ্বিতীয় উইকেটে নেইল ব্রুমকে নিয়ে ১৩৩ রানের জুটি গড়েন টম ল্যাথাম। দারুণ জমে উঠেছিল এই জুটি। ক্রমশই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা নেইল ব্রুমকে ফেরালেন নাসির হোসেন। স্কোয়ার লেগে সুইপ করতে চেয়েছিলেন ব্রুম। কিন্তু বল সোজা চলে যায় মাশরাফির হাতে। বিদায়ের আগে ৭৬ বলে ৭টি চারে ৬৩ রান করেছেন কিউই এই ব্যাটসম্যান।
প্রথম ওভারের তৃতীয় বলেই সাজঘরে ফিরে যেতেন টম ল্যাথাম। মাশরাফির বলে স্কোয়ার লেগে সুইপ করতে চেয়েছিলেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক। বলটি গিয়ে আশ্রয় নিতে পারত নাসির হোসেনের হাতে। কিন্তু পারলেন না বাংলাদেশি এই ফিল্ডার। নাসিরের হাত ফসকে বল গড়ায় মাটিতে।
জীবন ফিরে পাওয়া লাথামকে আর রুখে কে? ঠাণ্ডা মাথায় ব্যাট করে ফিফটি করলেন। এগোচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকেই। কিন্তু ল্যাথামকে সেঞ্চুরি করতে দিলেন না সেই নাসিরই। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে কিউই দলনেতাকে বোল্ড করেন ৭ মাস পর একাদশে ফেরা এই অলরাউন্ডার। আউট হওয়ার আগে দলকে ভালো অবস্থানে রেখে গেছেন ল্যাথাম। ৯২ বলে ১১টি চারের সাহায্যে খেলেছেন ৮৪ রানের ইনিংস।
ব্যাট হাতে ঝড় তুলতে পারদর্শী কোরি অ্যান্ডারসন। বাংলাদেশের বিপক্ষেও হয়তো সেই ঝড় তোলার মিশনে নেমেছিলেন। উইকেটে এসে থিতু হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সাকিব আল হাসানের কাছে ধরাশায়ী হওয়ায় সেই ঝড় আর তোলা হয়নি অ্যান্ডারসনের। কিউই এই অলরাউন্ডারের দৌড় থেমেছে ২৪ রানে। সাকিবের বলে স্কোয়ার লেগে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে অ্যান্ডারসন ধরা পড়েন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাতে।
আগের ম্যাচে অলরাউন্ড পারফরম্যান্স দেখিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন জিমি নিশাম। ব্যাট হাতে ফিফটিও করেছিলেন। বাংলাদেশকে হতাশ করে নিউজিল্যান্ডের জয়ের নায়ক বনে গিয়েছিলেন তিনি। ব্যাট হাতে এবার পারলেন না। নিশামকে দ্রুতই থামালেন মাশরাফি। ৪২তম ওভারে মাশরাফির করা তৃতীয় বলটি হাওয়ায় ভাসিয়ে দেন নিশাম। ক্যাচটি লুফে নিতে ভুল করেননি মাহমুদউল্লাহ।
বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাট হাতেও হাল ধরতে পারেন মিচেল স্যান্টনার। তাকে সে কাজটা করতে দেননি সাকিব আল হাসান। হতাশই করলেন। স্যান্টনারকে রানের খাতাই খুলতে দেননি সাকিব। বোল্ডআউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন স্যান্টনার। নিউজিল্যান্ডের মারকুটে ব্যাটসম্যান কলিন মুনরোকে ব্যক্তিগত দ্বিতীয় শিকারে পরিণত করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে মুনরোকে মুশফিকুর রহীমের তালুবন্দি করান মাশরাফি। কিউই এই ব্যাটসম্যান করতে পেরেছেন মোটে ১ রান।
ম্যাট হেনরিকে (৫) ফেরান রুবেল হোসেন। ৭ রানে অপরাজিত ছিলেন জিতান প্যাটেল। চারে ব্যাট করতে নামা রস টেলর হার মানেননি বাংলাদেশি বোলারদের কাছে। ৫৬ বলে ৬টি চারের সাহায্যে ৬০ রানে অপরাজিত থাকেন টেলর।
বাংলাদেশের তিন বোলার নিয়েছেন দুটি করে উইকেট। মাশরাফি, নাসির ও সাকিব। ১০ ওভারে ৫২ রান খরচ করেছেন মাশরাফি। ৯ ওভারে নাসির দিয়েছেন ৪৭ রান। আর ৮ ওভার হাত ঘুরিয়ে সাকিব দিয়েছেন ৪১ রান। ১০ ওভারে ৪৬ রান দিয়ে একটি উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজ। রুবেল হোসেনও ১০ ওভার বোলিং করেছেন; ৫৬ রান খরচায় ঝুলিতে জমা করেছেন ১ উইকেট।
বাংলাদেশ একাদশ : মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান, মুশফিকুর রহীম (উইকেটরক্ষক), মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সাকিব আল হাসান, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, নাসির হোসেন, রুবেল হোসেন ও মোস্তাফিজুর রহমান।
নিউজিল্যান্ড একাদশ : টম ল্যাথাম (অধিনায়ক), লুক রনকি, রস টেলর, নেইল ব্রুম, কলিন মুনরো, কোরি অ্যান্ডারসন, ম্যাট হেনরি, জিমি নিশাম, মিচেল স্যান্টনার, হামিশ বেনেট ও জিতান প্যাটেল।
এনইউ/জেআইএম