আজই শেষ দিন মিসবাহ-ইউনিসের
ক্রিকেট বিশ্ব খুঁজলে তাদের দু’জনের মত অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আর পাওয়া যাবে। দু’জনের সম্মিলিত বয়সের যোগফল ৮০’র ওপর। মিসবাহ-উল হকের ৪৩ এবং ইউনিস খানের বয়স ৩৯ পেরিয়ে ৪০ চলছে। এই বয়সে বড়জোর তারা কোচিংয়ের দায়িত্ব পালন করতেন কিংবা হতেন কোনো কর্মকর্তা। তা না, ইউনিস খান এবং মিসবাহ-উল হক দিব্যি খেলে যাচ্ছেন।
সময়-স্রোত তো আর কারো জন্য অপেক্ষা করে না! দিন-মাস-বছর যায়, দুই প্রবীন ক্রিকেটারের বয়সও বাড়তে থাকে। নিয়তির নিয়ম মেনেই বিদায় বলে দেয়ার সময় হয়ে গেছে এই দু’জনের। বিদায় বলে দিলেনও তারা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজটাই দু’জনের শেষ আন্তর্জাতিক সিরিজ। সেটাও শেষ হয়ে এলো। তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজের আজই শেষ দিন। পাকিস্তানের জার্সি গায়ে আজই শেষ বারেরমত মাঠে নামবেন মিসবাহ-উল হক এবং ইউনিস খান।
২০১০ সালে কঠিন অমানিশার অন্ধকারে ঘুরপাক খাচ্ছিল পাকিস্তানের ক্রিকেট। দেশটিতে এমনিতে সব সময় ছিল নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব। তারওপর, লন্ডনগেট কেলেঙ্কারির কালো কালিমায় লিপ্ত হয়ে পুরো দেশের ক্রিকেটই ডুবতে বসেছিল। অধিনায়ক সালমান বাট, দুই দুর্ধর্ষ পেসার মোহাম্মদ আসিফ এবং মোহাম্মদ আমির- এই তিনজনের অপরাধে পুরো পাকিস্তানের ক্রিকেটই অন্ধকারে।
এমনই এক পরিস্থিতিতে ৩৬ বছর বয়সী মিসবাহ-উল হকের কাঁধে তুলে দেয়া হলো পাকিস্তানের নেতৃত্ব। উত্তাল সমূদ্রে ডুবতে বসা নৌকার হাল বজ্রকঠিন হাতে ধরলেন মিসবাহ। সঙ্গী হিসেবে তিনি পেয়েছেন আরেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ইউনিস খানকে। ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টিতে যাই হোক, ক্রিকেটের আসল জায়গা টেস্টে পাকিস্তানকে একটা জায়গায় নিয়ে এলেন মিসবাহ। তার অসাধারণ নেতৃত্ব, ভেঙে পড়া পাকিস্তানকে আবারও উজ্জীবিত করে তুলেছিল।
সেই মিসবাহ ৪৩ বছর বয়সে এসে বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেন। সিদ্ধান্ত নিলেন ব্যাট-প্যাড তুলে রাখার। ক্যারিয়ারের শেষ দিনে হয়তো পাকিস্তানের হয়ে ইতিহাসই সৃষ্টি করে যেতে পারবেন। প্রথমবারেরমত ক্যারিবিয়ানদের মাটিতে তাদেরকে সিরিজ হারাতে পারবেন মিসবাহ। আর তো মাত্র ৯টি উইকেট। তার বোলাররা, বিদায় বেলায় সে উপহারটুকু দেবেন, এ আস্থা এবং বিশ্বাস তো রাখতে পারেন মিসবাহ।
নেতৃত্ব দিতে গিয়ে বহু আগেই ইমরান খানকে ছাড়িয়ে দিয়েছিলেন মিসবাহ। ৪৮ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে সবার ওপরে ছিলেন ইমরান খান। তাকে ছাড়িয়ে মিসবাহ নেতৃত্ব দিচ্ছেন ৫৬তম টেস্টে। এর মধ্যে ২৫টিকে দেশকে জয় উপহার দিয়েছেন। ১৯টিতে হেরেছে তার দল। ড্র করেছে ১১টিতে। এরই মধ্যে পাকিস্তানকে প্রথমবারেরমত আইসিসি টেস্ট র্যাংকিংয়ে শীর্ষে নিয়ে আসতে পেরেছিলেন তিনি।
৭৫ টেস্ট খেলা মিসবাহ-উল হক ১৩২ ইনিংসে ৪৬.৯১ গড়ে রান করেছেন ৫২২২। এর মধ্যে সেঞ্চুরি ১০টি এবং হাফ সেঞ্চুরি ৩৮টি। সর্বোচ্চ রান অপরাজিত ১৬১। ওয়ানডে থেকে অবসর নিয়েছিলেন আগেই। ১৬২ ওয়ানডে খেলে রান করেছিলেন ৫১২২। কোনো সেঞ্চুরি নেই তার। হাফ সেঞ্চুরি রয়েছে ৪২টি।
ইউনিস খান ক্যারিয়ারে নিজেকে এমন এক জায়গায় নিয়ে গেছেন, যেখানে আর কোনো পাকিস্তানির পৌঁছানো আদৌ সম্ভব নয়। কেউ পারলেও, ইউনিস খানের এই রেকর্ড টিকে থাকবে অন্তত কয়েক যুগ। পাকিস্তানের হয়ে টেস্টে একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি ১০ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ১১৮ টেস্টে ইউনিসের রান ৫২.০৫ গড়ে ১০০৯৯। সর্বোচ্চ ইনিংস ৩১৩।
আবার পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৪টি সেঞ্চুরির মালিক ইউনিস খান। তার পেছনে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন ইনজামাম-উল হক। ব্যবধান ৯ সেঞ্চুরির। ইনজামামের সেঞ্চুরি ২৫টি। বর্তমান দলে থাকা আজহার আলি অবশ্য ইতিমধ্যেই ১৪টি সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন। এই ধারাবাহিকতা এবং মিসবাহ-ইউনিসের মত দীর্ঘ সময় খেলতে পারলে তার পক্ষেও ইউনিস খানকে ছোঁয়া সম্ভব। টেস্টে ইউনিস খানের সেঞ্চুরি হাফ সেঞ্চুরির চেয়েও বেশি। তার হাফ সেঞ্চুরির সংখ্যা ৩৩টি।
ক্যারিয়ারের শেষ বেলায় একেবারে শেষ টেস্টে এসে ব্যাট হাতে কিছুটা হলেও অবদান রাখতে পেরেছিলেন মিসবাহ উল হক। প্রথম ইনিংসে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৫৯ রান। ১৪৮ বলে খেলা ইনিংসটি ৬টি বাউন্ডারি এবং ১টি ছক্কায় সাজানো ছিল। প্রথম ইনিংসে ইউনিস খান আউট হন মাত্র ১৮ রান করে। দ্বিতীয় ইনিংসে ইউনিস খান ৩৫ রান করলেও মিসবাহ আউট হন মাত্র ২ রানে।
উইকেট থেকে বিদায় বেলায় মিসবাহ-ইউনিস দু’জনই সতীর্থদের কাছ থেকে পেলেন গার্ড অব অনার। ব্যাট উঁচিয়ে গেটের মত করে তৈরি করলেন সতীর্থ ক্রিকেটাররা। বিদায় সম্ভাষণ জানালেন জীবনের শেষ ইনিংসটি খেলে ফেলার জন্য। আজ টেস্টের শেষ দিন। আজই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারে পাকিস্তানের জার্সি গায়ে শেষবারেরমত মাঠে নামবেন মিসবাহ-ইউনিস। বিদায় বেলায় কী দুই গ্রেটকে বিজয় উপহার দিতে পারবেন পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা?
আইএইচএস/পিআর