শান্ত-লিটনের সেঞ্চুরিতে আবারও আবাহনীর রানের পাহাড়
আচ্ছা মোহামেডান-আবাহনী দ্বৈরথ কেন বিকেএসপিতে? ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে নয় কেন? গতকাল রোববার থেকে আজ সকাল পর্যন্ত লাখ ক্রিকেট অনুরাগীর মনে এ কৌতূহলী প্রশ্নই ঘুরপাক খেয়েছে। এখনো খাচ্ছে। যদিও মাঠ বরাদ্দ দেয় সিসিডিএ এবং প্রিমিয়ার লিগ কমিটি। তারপরও বলা, আবাহনী হয়তো আগামীতেও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডানের সঙ্গে ম্যাচ বিকেএসপির তিন কিংবা চার নম্বর মাঠেই খেলতে চাইবে। কেন?
উত্তর দিচ্ছে ইতিহাস ও পরিসংখ্যান। ইতিহাস পরিষ্কার সাক্ষী দিচ্ছে মোহামেডানের সঙ্গে বিকেএসপিতে খেলা মানেই আবাহনীর হিমালয় সমান স্কোর গড়া। এক জোড়া সেঞ্চুরি আর সাড়ে তিনশো টপকে পৌনে চারশোর মত রান পাহাড় গড়া যেন আকাশী শিবিরেরর রীতি হয়ে গেছে।
ইতিহাস জানাচ্ছে, আগেরবারও এই বিকেএসপিতে সাদা কালোদের বিরুদ্ধে লিটন দাস ও ভারতের দীনেশ কার্তিকের জোড়া সেঞ্চুরিতে ৩৭১ রানের পাহাড়সম ইনিংস সাজিয়েছিল আবাহনী। আজ এক বছর পর আবার সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। এবারো মোহামেডানের বিরুদ্ধে আবাহনীর রান পাহাড় (৫ উইকেটে ৩৬৬)। এবং যথারীতি একজোড়া সেঞ্চুরি। সেঞ্চুরিয়ান লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্ত।
আবাহনীর ইনিংসের তখনো ১৭ ওভার বাকি। মোহামেডানের অনিয়মিত স্লো মিডিয়াম বোলার শামসুর রহমান শুভর বলে ডিপ মিড উইকেটে সীমানার খুব কাছে ক্যাচ দিয়ে আউট আবাহনী ওপেনার লিটন দাস। ফেরার পথে বিকেএসপির চার নম্বর মাঠে থাকা আবাহনীর জন পঞ্চাশেক সমর্থকের মুহুর্মুহু করতালি আর অকুণ্ঠ প্রশংসা জুটলো। লিটনও ব্যাট উঁচিয়ে তার জবাব দিতে দিতেই সাজঘরের পথে। জাতীয় দলের বাইরে থাকা এ ওপেনার সাজঘরে ঢোকার মুহূর্ত থেকে বিকেএসপির দুই মাঠেই চললো লিটন বন্দনা। আবাহনী সমর্থকরাতো বটেই মোহামেডান ভক্তদের মুখেও রাজ্যের প্রশংসা ‘ কি দারুণ ব্যাটিংটাই না করলো লিটন।’
লিটন অমন প্রশংসা ধন্য হতেই পারেন। সত্যিই দারুণ ব্যাটিং করেছেন লিটন। আউট হবার আগে দুইবার মাত্র ভুল শট খেলেছেন। এছাড়া পুরো ইনিংসে ‘ভুলের ‘ভ’‘ও ছিল না। যে বোলারকে যেখান দিয়ে খেলতে চেয়েছেন তাই পেরেছেন। এর মধ্যে মোহামেডান পেসার ইবাদত হোসেনের এক ওভারে তিন বাউন্ডারিসহ ১৫ রান তুলে প্রথম ঝড় তোলা। তারপর ৩৩ ওভারের প্রথম ডেলিভারির আগে আর সে ঝড় থামেনি। ৩৩ বলে আট বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করা লিটন একই গতিতে ১০০তে পৌঁছান ৭৯ বলে (১৪ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায়)। আর শেষ পর্যন্ত ১৩৫ রান করেন ১০৩ বলে।
এদিকে শুধু লিটন দাসের কথা বলা কেন, আজ বিকেএসপিতে মোহামেডান-আবাহনী দ্বৈরথের প্রথম অংশে আরেকজন সহ-নায়ক আছেন। তিনি নাজমুল হোসেন শান্ত। এ তরুণের ব্যাট থেকেও এসেছে দুর্দান্ত শতক। অন্যদিকে নাজমুল হোসেন শান্ত পঞ্চাশ করেন ৫৪ বলে (দুই বাউন্ডারি আর দুই ছক্কায়)। ১০০ পূর্ণ হয় ৯৪ বলে। চারের দ্বিগুণ ছয় ছক্কায় মাঠ গরম করা শান্ত আউট হন ১১০ রানে।
শেষ পরিণতি যাই হোক, এবারের দ্বৈরথের প্রথম অংশ যেন এক বছরর আগে এই বিকেএসপি মাঠে দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচের রিমেক। গতবার প্রিমিয়ার লিগে আবাহনীর স্কোর, ইনিংসের চালচিত্রর সাথে আজকের সাদা কালো আর আকাশী হলুদ জার্সির লড়াইয়ের পুরো মিল। বিকেএসপির মাঠ লিটন দাসের জ্বলে ওঠা আর প্রতিপক্ষ মোহামেডানের বিরুদ্ধে আবাহনীর রান পাহাড় গড়া যেন রীতিতে পরিণত হয়েছে।
বাড়াবাড়ি ভাবার আর আবেগতাড়িৎ সংলাপ মনে করার কোনই কারণ নেই। ইতিহাস ও পরিসংখ্যান সে সত্যই জানান দিচ্ছে। বিকেএসপি চার নম্বর মাঠটি তুলনামূলক আকারে ছোট। লম্বায় যেমন তেমন পাশে গড়পড়তা ৭/৮ গজের মত ছোট। কিন্তু এই মাঠে বাড়তি স্পিনার নিয়ে খেলার বদলে আজ মোহামেডান মাঠে নামলো তিন পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বি, সাজেদুল ইসলাম ও ইবাদত হোসেনকে নিয়ে। স্কোয়ারে সীমানা তুলনামূলক ছোট, সেখানে পেসারদের চেয়ে বরং স্পিনাররা কার্যকর হতে পারতেন বেশি।
কারন স্পিনারদের উড়িয়ে মারতে হলে লং অন ও লং অফের ওপর ও আশপাশ দিয়েই মারতে হয় বেশি। আর পেসারদের বলে বরং স্কোয়ার অফ দ্যা উইকেটে খেলা যায় বেশি। উল্টো পথে হেঁটে চরম মাশুল গুনেছে রকিবুল বাহিনী। তিন পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বি (১০ ওভারে ৭৮), সাজেদুল (১০ ওভারে ৭৮) ও ইবাদত (৪ ওভারে ৩৪) তিনজন মিলে ২৪ ওভারে দিয়েছেন ১৯৩ রান।
পাশে ছোট মাঠে স্কোয়ার অফ দ্যা উইকেটে দক্ষ লিটন দাস, সাদমান ইসলাম, নাজমুল হোসেন শান্ত ও শুভগত হোম পয়েন্ট, স্কোয়ার লেগ ও মিড উইকেটের আশপাশ দিয়ে গণ্ডায় গণ্ডায় বাউন্ডারি হাকিয়েছেন। তাদের মারের তোড়ে শুরু থেকেই ব্যাকফুটে মোহামেডান। শুধু প্রথম ৫ ওভারে আবাহনীর রান ছিল পাঁচের আশপাশে ( ২৬/০)। এরপর তড়তড়িয়ে বাড়তে থাাকে আবাহনীর রান। ১০ ওভারে বিনা উইকেটে ৭০ আর ১৫ ওভারে রান গিয়ে ঠেকে ১০১ ‘এ। আগের দুই ম্যাচে ৪+৬ = ১০ উইকেট পাওয়া মোহামেডান বোলিংয়ের আশা ভরসা তাইজুল, লিটন দাসের হাতে ছক্কা খেলেও শেষ পর্যন্ত মোহামেডানের সবচেয়ে সফল বোলার (১০ ওভারে ৫৭/৩ )। মোহামেডানের অপর স্পিনার আসালাঙ্কাও চরম মার খেয়েছেন। এ লঙ্কান অফস্পিনার ১০ ওভারে দিয়েছেন ৭০। ইবাদত হোসেন যেহেতু মাত্র ৪ ওভার বল করেছেন, তাই এ পেসারের ১০ ওভারের কোটা পূরণ করতে শামসুর রহমান শুভকে দিয়ে ৬ ওভার বল করাতে বাধ্য হন অধিনায়ক রকিবুল। ঐ ৬ ওভারে ওঠে ৪৫।
এআরবি/এমআর/এমএস