‘আজ আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে’
খেলাটা যখন বুঝতে শিখেছেন তখন থেকেই মোহামেডানের ভক্ত; কিন্তু মেহেদী হাসান মিরাজের কখনোই দেখা হয়নি তার প্রিয় ক্লাবটিকে। যে ক্লাবকে ঘিরে মনের ভেতর থাকা তার স্বপ্নটা ডালপালা মেলে বিশাল হয়েছে, সেই ক্লাবে মিরাজ প্রথম আসলেন শুক্রবার দুপুরে। ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে ক্যারিয়ারের প্রথম দুই মৌসুম কাটিয়েছেন কলাবাগান ক্রিকেট একাডেমিতে। এবার মিরাজ তারই স্বপ্নের সাদা-কালো শিবিরে। মোহামেডানে নাম লিখেয়ে একটি ম্যাচ খেলে ফেলেছেনও; কিন্তু একবারও ঢুঁ মারা হয়নি মতিঝিলের ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটিতে। শুক্রবার প্রথম পা রেখেই মিরাজ বললেন, ‘আজ আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।’
শুনেছি, আপনি মোহামেডানের ভক্ত। এ ক্লাব কখনো আসার ইচ্ছে জাগেনি? ‘তাতো অবশ্যই। যখন খেলা, ক্লাব বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই মোহামেডানের ভক্ত আমি। টিভিতে মোহামেডানের খেলা দেখেছি। আমি যখন জাতীয় যুব দলের খেলোয়াড় তখন একবার মিরপুর স্টেডিয়ামে মোহামেডানের একটি ম্যাচ দেখেছিলাম। ওইটি ছিল আমার মাঠে বসে প্রথম মোহামেডানের ম্যাচ দেখা। আজ আমি সেই ক্লাবেরই খেলোয়াড়।’
মোহামেডানে নাম লিখিয়ে নিশ্চয়ই আপনি ক্লাবে আসার জন্য অপেক্ষা করছিলেন? ‘এটা আমার প্রিমিয়ার লিগে তৃতীয় মৌসুম। লোকমান স্যার (মোহামেডানের ডাইরেক্টর ইনচার্জ লোকমান হোসেন ভু্ঁইয়া) এবং ওয়াসিম ভাই (ক্লাবের ক্রিকেট ম্যানেজার ওয়াসিম খান) আমাকে মোহামেডানে খেলার প্রস্তাব দিতেই আমি রাজী হয়ে যাই। ক্রিকেট খেলা শুরুর পর থেকেই মনের মধ্যে একটি স্বপ্ন লালন করে আসছিলাম, কবে মোহামেডানে খেলবো। এবার সে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আর স্বপ্ন পূর্ণতা পেলো ক্লাবে আসার পর। আজ সত্যিই আমার স্বপ্ন পূরণ হলো’- মোহামেডান একাডেমির ছাত্রদের খেলা দেখতে দেখতে বলছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
মোহামেডানে শুরুটাতো ভালো হলো না। লিগের প্রথম ম্যাচেই হেরে গেছেন, ‘হ্যাঁ, ব্যাডলাক। তবে এ নিয়ে হতাশার কিছু নেই। লিগটা অনেক লম্বা। অনেক রং বদলাবে। দেখবেন মোহামেডান এবার ভালো করবে’- বলছিলেন মিরাজ।
প্রথম ম্যচে তো তামিম ছিল না। পরের ম্যাচেই তাকে পাচ্ছে দল। নিশ্চয় ঘুরে দাঁড়াবেন আপনারা? ‘হ্যাঁ। তামিম ভাইকে পরের ম্যাচে পাচ্ছি এটা অনেক ভালো খবর। তার মতো একজন ক্রিকেটার দলে থাকা মানে আমাদের জন্য অনেক অনুপ্রেরণার’- তামিমের উপস্থিতি তাদের চাঙ্গা করবেন বলেই মনে করেন এ অলরাউন্ডার।
পুরো লিগে এবার কেমন করবে মোহামেডান? দলই বা কেমন হয়েছে? মেহেদী হাসান মিরাজ প্রথম ম্যাচটি হারকে নিজেদের সতর্কতা হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘আমাদের দলটা ভালো হয়েছে। যদিও প্রথম ম্যাচে সমর্থকদের জয় উপহার দিতে পারিনি। তবে এক দিক দিয়ে ভালোই হয়েছে। দেখুন লিগে সব দল সব ম্যাচ নাও জিততে পারে। এমনও তো হতে পারতো প্রথম ম্যাচ জিতে আমরা বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে যেতাম। এখন আমরা সতর্ক হলাম। প্রতিটি ম্যাচ খেলতে নামার আগে সতর্ক থাকবো আমরা।’
প্রথম ক্লাবে এসে ক্ষুদে ক্রিকেটারদের খেলা দেখে বেশি ভালো লেগেছে দেশের অন্যতম জনপ্রিয়া এ তারকার, ‘এক সময় এমন অবস্থায় আমিও ছিলাম। আমি ছোটদের সবসময় ভালোবাসি। যে কারণে ওদের অনেক সময় দিলাম। এরাই দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যত। এদের মধ্যে থেকেই তো বেরিয়ে আসতে পারে নতুন নতুন তারকা। ওরা আমাকে দেখে এতটা উচ্ছ্বসিত হয়েছে যে আমি মুগ্ধ।’
প্রথম আগমনে পুরো ক্লাবটিই ঘুরে দেখেন মিরাজ। কোন কক্ষে সভাপতি বসেন, কোন কক্ষে ডাইরেক্টর ইনচার্জ- এসব ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন মোহামেডানের ক্রিকেট ম্যানেজার ওয়াসিম খান। পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন ক্লাবের কর্মকর্তা ও সদস্যদের সঙ্গে। খেলোয়াড়রা কোথায় খাওয়া দাওয়া করেন, কেমন কক্ষে থাকেন, কোথায় নামাজ পড়েন কোনো কিছু দেখা বাদ রাখেননি ‘মোহামেডানভক্ত’ মিরাজ।
কেমন লাগলো ক্লাব? ‘খুব ভালো লেগেছে। আমি তো আগে কল্পনায় ক্লাব আবিস্কার করেছি। আজ প্রথম চোখে দেখলাম। পরিবেশও তো অনেক ভালো। আগেই বলেছি, আজ আমার স্বপ্ন পূরণ হলো। সত্যিই তাই’- ঠোটে সারল্যের হাসি মাখিয়ে বলছিলেন মোহামেডানের মিরাজ।
আরআই/আইএইচএস/পিআর