সিরিজ জয়ের মিশনে কেমন হবে বাংলাদেশের একাদশ
ভালো পারফরম্যান্স আর জয়ে কত কিছুই না বদলে যায়! ২৫ মার্চ প্রথম ম্যাচের আগে একাদশ নিয়ে রাজ্যের কৌতূহল। রাজধানী ঢাকা থেকে টেলিফোন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অগণিত কৌতূহলি প্রশ্ন, ‘আচ্ছা বলতে পারেন, প্রথম ওয়ানডেতে টিম কম্বিনেশন কেমন হবে, কোন ১১ জন খেলবেন?’
কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচের আগে আর ওই কৌতূহল নেই। বেশির ভাগ অনুরাগী ধরেই নিয়েছেন অমন আলো ছড়ানো পারফরম্যান্স আর জয়ের পর কি আর দলে রদবদল হবে? কিন্তু তাদের জন্য খবর, অধিনায়ক মাশরাফি নিজেই দলে রদবদলের ইঙ্গিত দিয়েছেন। কোনোরকম ভনিতা না করে এমনও বলে দিয়েছেন, ‘একই দল পরপর দুই ম্যাচে খেলাতে হবে, এমন কথা নেই।’
৭২ ঘণ্টা আগে এই রনগিরিতে ৩২৪ রানের বড়সড় স্কোর গড়া। আর ২৯ বল আগে ২৩৪ রানে শ্রীলঙ্কার সব উইকেটের পতন ঘটিয়ে ৯০ রানের জয়। এর চেয়ে উড়ন্ত সূচনা আর কি হতে পারে? সমর্থক-ভক্তরা খুশি। দল নিয়ে কারো কোনো অভিযোগও নেই। কিন্তু অধিনায়ক মাশরাফি সব হিসাব ওলট-পালট করে দিয়েছেন।
প্রেস কনফারেন্সে অনেক কথার ভিড়ে টাইগার অধিনায়ক এক পর্যায়ে বলে বসেন, ‘আমরা শেষ দুই বছর কখনই উইনিং কম্বিনেশন নিয়ে ভাবিনি। বরং সব সময় উইনিং কম্বিনেশন ভেঙ্গে এসেছি। আগের ম্যাচের কম্বিনেশন নিয়ে কাল নাও নামতে পারি। কালকের খেলার উইকেট এক নাও হতে পারে।’
মাশরাফি সব সময়ই সোজা-সাপটা কথা বলেন। উইনিং কম্বিনেশন ভাঙা যাবে না, অগের ম্যাচে যে দল জিতিছে, সেই দলকেই পরের ম্যাচে খেলাতে হবে- মাশরাফি আসলে এই মানসিকতা চিন্তার বিরোধী। তার মানে কিন্তু এই নয় যে, ২৫ মার্চ যে দল বিজয়ীর বেশে সাজঘরে ফিরেছে, সেই দলে পরিবর্তন আসবেই।
মাশরাফি আসলে বোঝাতে চেয়েছেন, পরিবেশ-প্রেক্ষাপট ও পরিস্থিতি দেখে বুঝেই আসলে একাদশ সাজানো হয়। আগামীকালও তাই হবে। যেহেতু উইকেটে কিছু ঘাসের অস্তিত্ব দেখা গেছে, তাই মাশরফি সতর্ক ও সাবধানে পা ফেলতে আগ্রহী। তাই প্রেস কনফারেন্সে বলে গেছেন, ‘উইকেট দেখে সেরা কম্বিনেশন সাজানো ও একাদশ নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেব।’
সোমবার রাতে (বাংলাদেশ সময় তখন পৌনে নয়টা) জাগো নিউজের সাথে আলাপে ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজনও অমন ইঙ্গিতই দিলেন। তিনিও জানালেন, আজ রাতে একাদশ চূড়ান্ত হবে না। খেলার আগে মাঠে এসে উইকেট দেখে তারপর ১১ জন ঠিক করা হবে।
তবে অধিনায়ক মাশরাফি যতই উইকেট দেখে ১১ জন চূড়ান্ত করার কথা বলেন না কেন, কঠিন বাস্তবতা হলো- উইকেট যথসামান্য ঘাস থাকলেও বাংলাদেশ তো আর রাতারাতি কম্বিনেশন পাল্টে রনগিরির উইকেটে নিশ্চয়ই চার পেসারে দল সাজানো হবে না?
বাংলাদেশ তো আগের ম্যাচেই তিন পেসার (মাশরাফি, মোস্তাফিজ ও তাসকিন) নিয়ে খেলেছে। আর সাথে ছিলেন দুই স্পিনার; বাঁহাতি সাকিব ও অফব্রেক মেহেদী হাসান মিরাজ। এর বাইরে কিছু করতে গেলে হয় মিরাজকে বাদ দিয়ে একজন পেসার ঢোকাতে হবে। না হয় মোসাদ্দেক-মাহমুদউল্লাহর কাউকে বসিয়ে আরেক পেসারের অন্তর্ভুক্তি ঘটাতে হবে।
যার কোনটাই বাস্তবে সম্ভব না। কারণ তখন আবার ব্যাটিং শক্তি যাবে কমে। একজন ব্যাটসম্যান কম নিয়ে চার পেসার খেলানোর মতো বড় ঝুঁকি কি বাংলাদেশ নেবে? আর সবচেয়ে বড় কথা, পিচে আজ যেটুকু ঘাস চোখে পড়েছে, কাল সকালে পানি দেয়ার পর ভারি রোলার ব্যবহারে সেই ঘাস আসলে কতটুকু থাকবে সেটাই প্রশ্ন।
আজ যে ঘাস দেখা গেছে, এক রাতে তা বাড়ার কোনোই সুযোগ নেই। বরং কমে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কাজেই বাংলাদেশের কম্বিনেশনও শেষ পর্যন্ত না ভাঙার সম্ভাবনাই বেশি। পরিবর্তন যদি আসেই তাহলে পেসারদের মধ্যে কাউকে বাদ দিয়ে আরেকজনকে নেয়া হতে পারে। সেই কাটা পড়া পেসার নিশ্চয়ই অধিনায়ক মাশরাফি কিংবা কাটার মাস্টার মোস্তাফিজ নন।
বাদ পড়লে পরবেন তাসকিন। কিন্তু সেটাই বা কেন? আগের ম্যাচে তো খারাপ বল করেননি এ দ্রুত গতির বোলার। কাজেই তাকেও বাদ দেয়া কঠিন। কাজেই ধরে নেয়া যায় অনেক হিসাব-নিকাশের পর শেষ পর্যন্ত আগামীকালও প্রথম ম্যাচের দল নিয়েই মাঠে নামবে বাংলাদেশ।
তার মানে, সেই মাশরাফি (অধিনায়ক), তামিম, সৌম্য, সাব্বির, মুশফিক, সাকিব, মাহমুদউল্লাহ, মোসাদ্দেক, মিরাজ, মোস্তাফিজ ও তাসকিনই আবার?
এআরবি/এনইউ/আরআইপি