উৎসবের পর্বটা আপাতত তুলে রেখেছে বাংলাদেশ
শততম টেস্টে অবিস্মরণীয় জয়ের পরও উঠেছিল এ কথা, ‘আচ্ছা এমন ঐতিহাসিক জয়ের পর কেমন জয়োৎসব হলো? বাংলাদেশের টিম হোটেল তাজ সমুদ্র কী উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল? রাত কটা পর্যন্ত চলেছে উৎসব? উৎসবের ধরণটাই বা কেমন ছিল?
নানা কৌতুহলি প্রশ্ন ছিল সবার মনে। একই অবস্থা কাল ডাম্বুলায় প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ জেতার পরও। রাজধানী ঢাকা থেকে ফোন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেরই কৌতুহলি প্রশ্ন , ‘শনিবার লঙ্কানদের হারানোর পর জয়োৎসবটা কেমন হলো টাইগারদের? ড্রেসিং রুম আর টিম হোটেলে কি আনন্দের বন্যা বয়ে গেছে?’
মাশরাফি, তামিম, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, সৌম্য, সাব্বির, মোসাদ্দেক, মোস্তাফিজ, মিরাজ ও তাসকিনরা হোটেলে ফিরে বুঝি উল্লাসে মেতে উঠেছিলেন? নিশ্চয়ই টিম হোটেলে কেক কেটে পাটি-টার্টি হয়েছে বেশ?
শুনে অবাক হবেন, শততম টেস্টের পরও যেমন সে অর্থে কিছু হয়নি। শনিবার রাতে উপুল থারাঙ্গার দলকে হারানোর পরও মাশরাফির দল কোনই উৎসব করেনি। ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন আজ দুপুরেই জানালেন, ‘উৎসব’ বলতে যা বোঝায়, তার কিছুই হয়নি। এক সঙ্গে হই চই পর্যন্ত করেনি ক্রিকেটাররা।
হই চই আর উৎসব করার আসলে সময়ও ছিল না। খেলা শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান এবং প্রেস ব্রিফিংয়ের পর বাংলাদেশের টিম বাস যখন রণগিরি স্টেডিয়াম ছাড়ল তখনই স্থানীয় সময় রাত ১২টা। মানে বাংলাদেশে সাড়ে বারোটা।
রাতে হোটেলে ফিরতে ফিরতে বেজে গেছে বাংলাদেশ সময় রাত ১টা। আসলে তখন চিৎকার চেঁচামেচির সময়ও ছিল না। কারণ একই হোটেলে তো শ্রীলঙ্কা টিমও রয়েছে। ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজনের কথারই প্রতিধ্বনিত হলো অভিষেক হওয়া মেহেদী হাসান মিরাজের কন্ঠে।
আজ বিকেলে হোটেল লবিতে বসে নিজ দেশের প্রচার মাধ্যমকে মিরাজ জানিয়ে দিলেন, ‘না ভাই কোনরকম উৎসব হয়নি। আমরা বরং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তামিম ভাইয়ের ১০ হাজার পূর্ণ হওয়ায় তাকে সবাই অভিনন্দন জানিয়েছি। তাকে ভালবাসার আলিঙ্গনে জড়িয়েও নিয়েছি সবাই।’
শনিবার শ্রীলঙ্কার সাথে ৯০ রানের বড় জয়ের পর বাংলাদেশ দল কোন উৎসব করেনি। টিম হোটেল আলিয়া রিসোর্টে কোন রকম আনন্দ উল্লাস হয়নি। এ সত্যের মাঝে লুকিয়ে আছে একটা বড়-সড় বার্তা। দলের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য মেহেদী হাসান মিরাজই তা জানালেন।
রোববার বিকেলে নিজ হোটেল লবিতে বসে দেশের প্রচার মাধ্যমের সাথে কথা বলতে গিয়ে মিরাজ একটি তাৎপর্র্য্যপূর্ণ কথা বলেছেন। তার মুখ থেকে হঠাৎ বেরিয়ে এলো, ‘জেতার পর আমাদের অনেক ভাল লেগেছে; কিন্তু আমরা কোন উৎসব করিনি।’
কেন করেননি? ‘ভাই এখনো তো খেলাই শেষ হয়নি। একটা ম্যাচ জিতেই যদি আমরা খুশি হয়ে যাই, তাহলে আর সামনে এগোতে পারবো না। সিরিজ নিশ্চিত হলেই আমরা উদযাপন করবো। মূল প্রত্যাশা অবশ্যই সিরিজ জেতা।’
ধরে নেয়াই যায়, এটা মিরাজের একার কথা নয়। পুরো দলের ইচ্ছে, মনোভাবই এখন এমন। তার মানে হলো, উৎসব তুলে রাখা আছে। এখন অপেক্ষা সিরিজ নিশ্চিত করার। সিরিজ নিজেদের হয়ে গেলেই বিজয় উৎসব হবে। মাত্র ১৯ বছর বয়সী মিরাজও বুঝে গেছেন, খেলাটা তিন ম্যাচের। হোক প্রথম, তারপরও এক ম্যাচ জিতে আনন্দ উল্লাস করা যায় না। তাতে বরং আত্মতুষ্টি চলে আসতে পারে।
তাই সিরিজ নিশ্চিতের পরই উৎসবের চিন্তা। এখন নয়। অতিবড় বাংলাদেশ সমর্থকও নিশ্চয়ই এমন চিন্তা-ভাবনাকে স্বাগত না জানিয়ে পারবেন না। প্রিয় জাতীয় দলের কাছ থেকে ঠিক এমন মানসিকতাই প্রত্যাশা গোটা জাতির।
আসলে এটাই সময়ের সাথে সাথে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ দলের সত্যিকার চিত্র। একটা সময় ছিল, যখন একটি ওয়ানডে জয়ের জন্য তীর্থের কাকের মত অপেক্ষায় থেকেছে গোটা বাংলাদেশ। অনেক দিন পর পর একটি জয়ের দেখা মিলতো। আর তাকে রাজ্য জয়ের মত বড় প্রাপ্তি ও অর্জন ধরে উৎসবে মেতে উঠতেন সবাই। তাতে করে একটা অস্ফুট আত্মতুষ্টি চলে আসতো। যার ফলে পরের ম্যাচে গিয়েই নিজেদের হারিয়ে ফেলতেন টাইগাররা।
এখন আসলে সে দিন নেই। টেস্টে না হলেও ওয়ানডেতে প্রায় নিয়মিতই জয়ের মধুর স্বাদ পান মাশরাফি, তামিম, সাকিব, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহরা। এখন আর একটি জয় নয়, লক্ষ্য-পরিকল্পনায় থাকে সিরিজ বিজয়। তাই তো ডাম্বুলাার রণগিরি স্টেডিয়ামে ২৫ মার্চ রাতে জিতেও উৎসব না করে তাকে তুলে রাখা হলো।
এটাই বদলে যাওয়া বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের বর্তমান রূপ। বোঝাই যাচ্ছে, তাদেও আত্মবিশ্বাস আছে পুরোপুুরি, ‘সিরিজ জেতার পর্যাপ্ত সামর্থ্য আমাদের আছে। জায়গামত সামর্থ্যরে প্রয়োগ ঘটাতে পারলেই হয়ে যাবে। ২৫ মার্চের পূনরাবৃত্তি ঘটাতে পারলেই ব্যস। সিরিজ হয়ে যাবে আমাদের। যত আনন্দ-উল্লাস আর উৎসব উদযাপন তখনই হবে।’
এই বোধ ও অনুভব মানেই হলো, সাফল্যের পূনরাবৃত্তির দৃঢ় সংকল্প ভিতরে। আর সেটাই হতে পারে সাফল্যর চাবিকাঠি।
এআরবি/আইএইচএস/জেআইএম