পওলিনহোর হ্যাটট্রিকে উরুগুয়েকে বিধ্বস্ত করলো ব্রাজিল
এমনিতেই ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল নেইমারের ব্রাজিল। লাতিন আমেরিকান অঞ্চলে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে ১২ ম্যাচে ২৭ পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপরে ছিল সেলেসাওরা। দ্বিতীয় স্থানে থাকা উরুগুয়ের সঙ্গে ব্যবধান ৪ পয়েন্টের। এবার সেই ব্যবধান ৭ পয়েন্টে নিয়ে গেলো তিতের ব্রাজিল। উরুগুয়ের মাঠে গিয়েই স্বাগতিকদের ৪-১ গোলে বিধ্বস্ত করে এসেছে নেইমারের ব্রাজিল।
মিডফিল্ডার পওলিনহো করেছেন দুর্দান্ত এক হ্যাটট্রিক। ১৯, ৫২ এবং ৯২ মিনিটে গোল তিনটি করেন তিনি। বাকি গোলটি এলো তারকা ফুটবলার নেইমারের পা থেকে। অথচ উরুগুয়েকে পেনাল্টি থেকে ৯ মিনিটেই এগিয়ে দিয়েছিলেন এডিনসন কাভানি। ঘরের মাঠে উরুগুয়ের বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে টানা ১৪ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ডটা ভেঙে গেলো নেইমারের ব্রাজিলের সামনে। ২০০৯ থেকে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে এ ম্যাচের আগ পর্যন্ত কোনো ম্যাচ হারেনি উরুগুয়ে।
কোচ তিতে আর তারকা ফুটবলার নেইমারের যুগলবন্দীতে যেন আকাশে উড়ছে ব্রাজিল। দলের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে ব্রাজিলকে অন্য জায়গায় নিয়ে গেছেন তিতে। জিতেছে টানা আটটি ম্যাচ। এখন তার কাছে জয়ের চেয়ে যেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেই ব্রাজিলীয় ছন্দ, জোগো বোনিতো ফিরিয়ে আনা। কারণ পয়েন্ট টেবিলে এখন যে অবস্থায় আছে, এ অবস্থায়ও বিশ্বকাপ খেলা প্রায় নিশ্চিত। উরুগুয়ের বিপক্ষে তাই তিতের দলের জয়ের সঙ্গে ছন্দময় ফুটবল দিয়েও সবার মন কেড়ে নেয়ার লক্ষ্য ছিল বেশি।
একই সঙ্গে তিতের সামনে আরেকটি চ্যালেঞ্জও ছিল। সেটা হচ্ছে গ্যাব্রিয়েল জেসুসের বিকল্প খুঁজে বের করা। কারণ ম্যানসিটির এই স্ট্রাইকার ইনজুরির কারণে খেলতে পারেননি। এ কারণে, তার পরিবর্তে মাঠে নামানো হয়েছে লিভারপুল ফরোয়ার্ড রবার্তো ফিরমিনোকে। যদিও শেষ মুহূর্তে তার পরিবর্তে মাঠে নামানো হয়েছিল দিয়েগো সুজাকেও।
মন্টেভিডিওর সেন্টেনারিও স্টেডিয়ামে লড়াইটা ছিল পয়েন্ট টেবিলের দুই শীর্ষ দলের। যদিও নেইমারদের বিপক্ষে নিষেধাজ্ঞার কারণে মাঠে নামতে পারেননি উরুগুয়ের বার্সা স্ট্রাইকার লুইস সুয়ারেজ। তার পরিবর্তে শুরু থেকে উরুগুয়ের আক্রমণ শানানোর দায়িত্ব ছিল এডিনসন কাভানির ওপর। দিয়েগো রোলানের সঙ্গে তিনি ছিলেন শুরু থেকে আক্রমণের দায়িত্বে। নিষেধাজ্ঞার কারণে উরুগুয়ে মাঠে নামাতে পারেনি নিয়মিত গোলরক্ষক ফার্নান্দো মুসলেরাকেও। ৪ গোল হজম করে যার খেসারত দিতে হলো উরুগুয়েকে।
খেলার ৯ মিনিটে পেনাল্টি পেয়ে যায় স্বাগতিক উরুগুয়ে। বক্সের ভেতর ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক অ্যালিসন কাভানিকে ফাউল করে বসেন। সঙ্গে সঙ্গেই পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। স্পট কিক নেন কাভানি। সেটিই অ্যালিসনকে ফাঁকি দিয়ে গিয়ে প্রবেশ করে ব্রাজিলের জালে।
১০ মিনিট পরই ব্রাজিলকে সমতায় ফেরান চাইনিজ লিগে গুয়াংজু এভারগ্রান্ডের হয়ে খেলা মিডফিল্ডার পওলিনহো। নেইমারের পাস থেকে বল পেয়ে যান তিনি। এরপর বক্সের বাইরে থেকে ডান পায়ের জোরালো এক শট নেন তিনি। উরুগুয়ে গোলরক্ষক মার্টিন সিলভাকে ফাঁকি দিয়ে সমতায় ফেরে ব্রাজিল।
প্রথমার্ধ শেষ হলো ১-১ সমতা দিয়েই। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই আবার গোল। এবারও গোলদাতা পওলিনহো। ৫২ মিনিটে ফিলিপ কৌতিনহোর পাস থেকে বল পেয়ে রবার্তো ফিরমিনো বাম পায়ের শট নেন। কিন্তু উরুগুয়ে গোলরক্ষক সেই শট ফিরিয়ে দিলে ফিরতি বলটিই পেয়ে যান পওলিনহো। এবার তার শট ফেরাতে পারলেন না সিলভা।
এরই মাঝে এডিনসন কাভানি দারুণ এক ফ্রি কিকে চেষ্টা করেন উরুগুয়েকে সমতায় ফেরানোর; কিন্তু তার শট ফিরিয়ে দেন ব্রাজিল গোলরক্ষক কাভানি। ৭৪ মিনিটে মিরান্দার কাছ থেকে বল পেয়ে ডান পায়ের দারুণ এক শটে উরুগুয়ের জালে বল জড়ান নেইমার। খেলার নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে চলছিল ইনজুরি টাইমের খেলা। এ সময় আবারও গোল দিয়ে বসেন পওলিনহো। দানি আলভেজের ক্রস থেকে বল পেয়ে খুব কাছ থেকে উরুগুয়ের জালে বল জড়ান তিনি।
আইএইচএস/এমএস