মাথা ব্যাথা নিয়েও ভর দুপুরে নিবিড় অনুশীলনে মাশরাফি
ওয়ানডে সিরিজের অধিনায়ক হিসেবে ১৮ মার্চ বিকেলেই কলম্বো পৌঁছে যান মাশরাফি। ১৯ মার্চ মুশফিক বাহিনী যখন লঙ্কানদের হারানোর প্রাণপন চেষ্টায়; কিন্তু কিছুতেই সাফল্যর দেখা মিলছিল না, ঠিক সেই লাঞ্চের আগের সময়টায় মাশরফি ছিলেন প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে প্র্যাকটিসে ব্যস্ত।
ঠিক লাঞ্চের পর মাশরাফি যখন সাজঘরে ঢোকেন তখনই লঙ্কানরা ব্যাকফুটে যেতে শুরু করে। মোদ্দা কথা, শততম টেস্টে পাওয়া জয়টা নিজ চোখেই দেখেছেন তিনি। আজ (সোমবার) সকাল থেকে তাজ সমুদ্র হোটেল রুমে বিশ্রাম নিয়েছেন। কারণ খানিক মাথা ব্যাথায় কষ্ট পাচ্ছেন। তাই বলে প্র্যাকটিস বাদ দেননি।
সব সময় প্র্যাকটিসে সিরিয়াস মাশরাফি আজ প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের পাশেই ম্যাক্স একাডেমির প্র্যাকটিস কমপ্লেক্সের নেটে প্রথম মিনিট বিশেক ব্যাটিং করলেন। এরপর অল্প সময় বিশ্রাম নিয়ে চার পাঁচ ওভার বোলিংও করলেন। তারপর আসলেন মিডিয়ার সামনে।
কলম্বোয় সূর্য্য কিরণ লম্বালম্বি ঠিক মাথার ওপর পড়ছিল তখন। তাই গরমের তীব্রতা ছিল খুব বেশি। সবচেয়ে বড় কথা ঘাম হয় প্রচুর। বোলিং শেষে প্র্যাকটিস কমপ্লেক্সের এক কোনে মাশরাফি যখন ক্লান্ত শরীরে এসে বসলেন, তখন ‘রবির’ লোগো সম্বলিত আকাশী আর নীলাভ রঙ্গের ফুল স্লিভস প্র্যাকটিস জার্সি ভিজে একদম গায়ের সাথে লেপ্টে ছিল। মুখ দিয়ে দরদর করে ঘাম ঝরছিল।
এর মধ্যে ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন এসে জিজ্ঞেস করলেন কিরে শরীর খারাপ লাগছে? মাশরাফির নীচু স্বরে জবাব, ‘মাথাটা একটু ধরে আছে।’ সেটা প্র্যাকটিসে আসার আগেই ছিল; কিন্তু সে মাথা ব্যাথা নিয়েও প্র্যাকটিসে চলে আসা। ভর দুপুরে সহকারি কোচ রিচার্ড হ্যালসলের কঠিন ফিল্ডিং প্র্যাকটিসটা খুব মনোযোগ দিয়ে করলেন। তারপর নেটে ব্যাটিং ও বোলিং শেষে মিডিয়ার সাথে কথা বললেন।
ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন মাথা ব্যাথার কারণে মাশরাফিকে বিশ্রামে রেখে অন্য কারো সাথে উপস্থিত সাংবাদিকদের কথা বলার ব্যবস্থা করে দিতে চাচ্ছিলেন। সাংবাদিকদের কাছে মাশরাফির মাথা ব্যাথার কথা বলে আর কাউকে দেয়ার প্রস্তাবও আসলো; কিন্তু মাশরাফি নিজেই বললেন, ভাই পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আসছি।
এই যে মাথা ব্যাথা নিয়ে প্রচন্ড গরমে স্থানীয় সময় বেলা তিনটার আগে প্র্যাকটিসে চলে আসলেন এবং সব কিছুই নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সাথে সম্পাদন শেষে আবার ক্লান্ত-অবসন্ন শরীরে মিডিয়ার সামনে এসে দাঁড়ালেন, সৌজন্যতা বিনিময়- কোন পর্বই আর বাদ থাকলো না। মাশরাফি বুঝি এমনই!
একজন মানুষ নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের পাশাপাশি সবাইকে কিভাবে খুশি করে চলতে পারেন, মানুষকে সন্তুষ্ট রাখতে পারেন, সেটা মাশরাফির চেয়ে ভালো আর কে জানে? তাই তো তিনি সবার নেতা। তার উপস্থিতিতে ড্রেসিং রুম চাঙ্গা হয়। দল হয় উজ্জীবিত। ভাল খেলতে হয় অনুপ্রাণিত।
এটাই নড়াইল এক্সপ্রেসের বৈশিষ্ট্য। এর মধ্যে প্র্যাকটিস শুরুর আগে প্রেমাদাসার ভিতরে সেন্টার উইকেটে প্র্যাকটিস করার ফাঁকে লাসিথ মালিঙ্গাও আসলেন স্টেডিয়ামের গা ঘেঁষে তৈরি ম্যাক্স একাডেমি কমপ্লেক্সে মাশরাফির সাথে দেখা করতে। দুজনে হাত মেলালেন। কুশল বিনিময় হলো। খানিকক্ষণ কথাও বললেন। হাসি ঠাট্রাও চললো।
এআরবি/আইএইচএস/এমএস