প্রয়োজন একটি বড় ইনিংস, আর একটি লম্বা পার্টনারশিপ
‘ভাই সারা দিন জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে চিল্লাইলাম। সাবাশ সাবাশ- কইয়া গলা ফাটাইয়া ফালাইলাম। আর শেষ বিকালে এইটা কি হইলো?’
অনেক কষ্ট করে প্রিয় জাতীয় দলের টানে সুদুর কলম্বো ছুটে আসা ‘টাইগার শোয়েবের’ আক্ষেপ। বেঙ্গল টাইগারের রুপ। হলুদ রংয়ের মাঝে লাল ডোরাকাটা মেকআপ ঠিকই ছিল। বাঘের গর্জনটাই শুধু নেই।
পড়ন্ত বিকেলে টাইগার শোয়েবের ধরা গলার আকুতি- ‘ভাই আমরা কি লিড নিতে পারুম? নাকি কাছাকাছি গিয়া থাইমা যামু? আবার কালকা সকালে সব আশা শেষ হইয়া যাইবোনা তো?’
এমন প্রশ্ন শুধু টাইগার শোয়েবের না। প্রতিটি বাংলাদেশ ভক্তর। আজ পড়ন্ত বিকেলের দায়িত্বহীন ব্যাটিং জন্ম দিয়েছে অনেক প্রশ্নের। যে দলের ২ উইকেটে ১৯২ থেকে ৫ উইকেটে ১৯৮ হয়ে যায়, তাও কোন বোলারের বিধ্বংসী কিংবা জাদুকরি স্পিন বোলিংয়ের মুখে নয়। নিজেদের ভুলে- সেই দলকে নিয়ে আশা করতে গিয়ে রাজ্যের দ্বিধা প্রায় সবার মনেই।
বরং সবার শঙ্কা বাসা বেধেছে, শততম টেস্টে জয়ের স্বপ্ন ভেঙ্গে টুকুরো টুকরো হয়ে যাবে? তা হবে কি হবে না, তা সময়ই বলে দেবে। তবে আজ দ্বিতীয় দিন শেষে খেলার যে অবস্থা তাতে, এখনই সব হারানোর শঙ্কায় ডোবার কোন কারণ নেই।
সে অর্থে বাংলাদেশ কিন্তু ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়েনি। অংকের হিসেবে লঙ্কানদের প্রথম ইনিংস থেকে এখনো ১২৪ রান দুরে। স্বাগতিকরা শেষ ৩ উইকেটে ১৪৩ রান যোগ করেছে। বাংলাদেশ ইনিংসের অর্ধেকটা হাতে রেখে তারচেয়ে ২০ রান কম করতে পারবে না?
একজন দায়িত্ব নিয়ে একদিক আগলে রাখলে আর একটি বড় পার্টনারশিপ হলেই শ্রীলঙ্কাকে ছুঁয়ে ফেলা সম্ভব। পাঁচ পাঁচজন ব্যাটসম্যান আউট হয়ে গেলেও দলের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য দুই ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীম আর সাকিব আল হাসান এখনো ক্রিজে।
সাকিব যদিও আজ শেষ বিকেলে টি-টোয়েন্টি স্টাইলে ব্যাট চালিয়ে ভক্তদের বিরাগভাজন হয়েছেন, তারপরও এটাতো চরম সত্য- বড় ইনিংস খেলার পর্যাপ্ত সামর্থ্য আছে তার। এইতো মাস দেড়েক আগে ওয়েলিংটনে এর চেয়ে অনেক প্রতিকুল কন্ডিশন আর শক্তিশালী ও ধারালো বোলিংয়ের বিরুদ্ধে ডাবল সেঞ্চুরি করে এসেছেন।
মুশফিকতো নির্ভরতার প্রতীক। এর চেয়ে খারাপ অবস্থায় মুশফিক-সাকিবের ওয়েলিংটনে ৩৫৯ রানের বিশাল ও রেকর্ড জুটি আছে। কাজেই আশা ও হাল ছাড়ার মত অবস্থা এখনো হয়নি। পিচ আজ শেষ বল পর্যন্ত মোটামুটি ঠিক আছে। লঙ্কান সেঞ্চুরিয়ান দিনেশ চান্দিমাল আর বাংলাদেশ ব্যাটিং কোচ সামারাবিরা খেলা শেষে সে কথাই জানালেন।
বল ব্যাটে আসছে। পেসাররা সে অর্থে সুইং পাচ্ছেন না। স্পিনারদের বলও ঘুরছে না। এমন ব্যাটিং বান্ধব পরিবেশে দরকার মাথা ঠান্ডা রেখে বলের মেধা ও গুনাগুণ বিচার করে খেলা। চান্দিমাল যদি দুই বোলার হেরাথ ও লাকমালকে নিয়ে অষ্টম ও নবম উইকেটে ৫৫ রানের দু’ দুটি কার্যকর জুটি তৈরি করতে পারেন, তাহলে সাকিব-মুশফিক কেন এক পার্টনারশিপে ১০০ বা তার বেশি রান করতে পারবেন না?
আসল কথা হলো, খেলতে হবে হিসেব কষে। উত্তেজনার বশে কিংবা উচ্চাভিলাষী শট খেলা যাবে না। চান্দিমাল দেখিয়ে গেছেন, ধৈর্য্য ধরে ভাল বলকে সমীহ দেখানো, বাইরে বল ছেড়ে দেয়া আর আলগা বলগুলো থেকে রান করার চেষ্টা থাকলেই বড় ইনিংস খেলা সম্ভব।
তবে একটা কথা, সাকিব-মুশফিককে আগামীকাল প্রথম ৩০ মিনিট খেলতে হবে সর্বোচ্চ সতর্ক ও সাবধানতা দিয়ে। ওই সময় দুজন আউট হলেই শেষ। অন্তত একজন থাকলেও শ্রীলঙ্কাকে ছুঁয়ে ফেলার সম্ভাবনা থাকবে।
কারণ এরপরও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত আর মেহেদী হাসান সিরাজ থাকবেন। যারা ধরে খেলতে পারেন। মোসাদ্দেকের প্রথম টেস্ট। তারওপর বাড়তি দায়িত্ব অর্পন করা হবে বাড়াবাড়ি। তবে তাকেও খেলতে হবে অনেক ভেবেচিন্তে।
মুশফিক-সাকিবের দুজন দাড়িয়ে গেলে কথাই নেই। লিডও হয়ে যেতে পারে। অন্তত একজন যদি একদিক আগলে রাখতে পারেন, তার সাথে মোসাদ্দেক-মিরাজের কেউ সঙ্গ দিতে পারলেই হয়ত বাংলাদেশ লিডও নিয়ে নিতে পারে।
কিন্তু মুশফিক-সাকিবের অন্তত একজনকে চান্দিমালের মত শেষ পর্যন্ত থাকতে হবে। শততম টেস্টকে স্মরনীয় সাফল্যে গেঁথে রাখতে তাদের ওই ভূমিকা নেয়া যে খুব দরকার!
এআরবি/আইএইচএস/বিএ