শততম টেস্ট খেলা নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন সাব্বির!
‘ভাই শততম টেস্ট নিয়ে দেশে হৈ চৈ। উৎসব উৎসব ভাব। কলম্বোয়ও বেশ সাড়া পড়ে গেছে। লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড প্রধান সোমাথিপালা নিজ হাতে শততম টেস্টে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের বরণ করে নেবেন। তাদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দনের স্মারক পদক পড়িয়ে দেবেন। আপনার অনুভূতি কি?’
পি সারার সবুজ ঘাসে বসে এক তরুণ সম্ভাবনাময় মেধাবী ক্রিকেটারের ধরা গলার জবাব, ‘কি আর বলবো ভাই। একাদশে থাকলে অনুভূতি হত একরকম। খেলতে পারলে বলতাম জান লড়িয়ে দিব। সামর্থের সবটুকু উজাড় করে খেলবো। কিন্তু তাতো আর হচ্ছে না। মাঠের বাইরে বসে পানি টেনে আর ড্রেসিং রুমে বসেই কাটাতে হবে। কাজেই শততম টেস্টের অনুভূতি নাইবা বললাম।’
বলুন তো কার অভিব্যক্তি এটা? এখন যারা খেলা দেখে এ লেখা পড়ছেন, তারা পুরোটা না শুনে নির্ঘাত বলবেন এ কি করে সম্ভব? তারপরও বলা ওপরের কথাগুলো সাব্বির রহমান রুম্মনের।
মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশ দল যখন পি সারায় নেটে যাবার আগে স্ট্রেচিং করছিল, ঠিক তখন জাগো নিউজের সঙ্গে এমন হতাশাই ব্যক্ত করেছিলেন সাব্বির। চোখ-মুখ বিসন্ন। আশা ভঙ্গের বেদনা পরিষ্কার। একটু খটকা লাগছে তাই না। সাব্বির তো খেলছেন। তাহলে অমন কথা বলা কেন? বলা এই কারণে যে, কাল অনুশীলনে একাদশ চূড়ান্ত হয়নি। সাব্বির জানতেনই না তিনি শততম টেস্ট খেলছেন। জানার কথাও না।
কারণ কিপার লিটন দাস ইনজুরিতে ছিটকে পড়ায় ভাগ্য খুলেছে সাব্বির রহমানের। না হয় নির্ঘাত ড্রেসিং রুমে রিজার্ভ বেঞ্চেই বসে কাটাতে হত। সাব্বির রহমান একা নন। প্রথম টেস্ট শেষে ঢাকা থেকে উড়ে আসা ওপেনার ইমরুল কায়েস আর মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ছাড়া বেশ কজন ক্রিকেটারের কোন ধারণাই ছিল না কি হতে যাচ্ছে? নেটে ইমরুল, মেহেদী হাসান মিরাজ ও অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম সবার আগে ব্যাট করেছেন।’
তাদের সঙ্গে প্যাড পড়ে চার নম্বরে ব্যাটিং করেছেন মোসাদ্দেক সৈকত। সেখানে মুমিনুল হককে দেখা গেছে বোলারের ভূমিকায়।
আর সাব্বির রহমান রুম্মনকে সে অর্থে খুঁজেই পাওয়া যায় নি। তার খেলার কথা ছিল না। ব্যাটসম্যানদের মধ্যে শুধু ইমরুলই শতভাগ নিশ্চিত ছিলেন। আর মোসাদ্দেকও তেমন কনফিডেন্ট ছিলেন না। জাগো নিউজের সঙ্গে শততম টেস্ট নিয়ে কিছু বলতে বলা হলে মোসাদ্দেকও কিছু বলতে চাননি। বরং মুমিনুল বেশ আস্থার সঙ্গেই বলেছিলেন, ‘এমন কিছু করে দেখাতে চাই, যাতে সবাই আমাকে মনে রাখে।’
একই অবস্থা পেসার তাসকিন আহমেদেরও। মঙ্গলবার অনুশীলনে শততম টেস্টের ভাবনা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তাসকিন বেশ আস্থার সঙ্গে বলেছিলেন, ‘নিজেকে বেশ সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে। এত অল্প বয়সে দেশের হয়ে শততম টেস্ট খেলার সৌভাগ্য, বিরাট ব্যাপার। আমি সামর্থ্যের সেরাটা উপহার দিতে মরিয়া। আমার পারফরমেন্সে যদি দল উপকৃত হয়, সাফল্যর ভীত গড়ে ওঠে, এর চেয়ে ভালো লাগার আর কি হতে পারে?
একই প্রশ্নর মুখোমুখি হয়ে নিরব মোস্তাফিজ। শততম টেস্ট ভাবনা জিজ্ঞেস করা হলে কি বলবেন, ভেবে পাচ্ছিলেন না কাটার মাস্টার। পাশে দাঁড়ানো তাসকিনকে দেখিয়ে বলে উঠলেন, ‘তাসকিনের কথাটা খুব সুন্দর হয়েছে। আমি অত গুছিয়ে বলতে পারবো না। তবে তার কথা আমার মনে ধরেছে। ওটা আমারও কথা।’
কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাসকিন ছিটকে পড়েছেন। নিউজ্যিান্ডে অভিষেক হওয়া এ ফাষ্টবোলার জায়গা পাননি একাদশে। তার যে শততম টেস্ট খেলা হবে না স্বপ্নেও তা ভাবেননি। ভাবলে ২৪ ঘন্টা আগে মিডিয়ার সামনে অমন আস্থার বাণী শোনাতেন না।
অন্যদিকে সাব্বির রহমান রুম্মনের অবস্থা ঠিক বিপরীত। স্বপ্নেও ভাবেননি, ১১ জনে জায়গা হবে। ভাবার কথাও না। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের জায়গায় ঢুকবেন মোসাদ্দেক। আর ইমরুলের জায়গা হবে মুমিনুলের জায়গায়। তখনো লিটন দাসের ইনজুরিতে খেলতে না পারার খবর চাওর হয়নি। ঘুরিয়ে বললে তার বুকের এমআরআইয়ের রিপোর্ট আসেনি। সেটা এসেছে কলম্বো সময় সন্ধ্যার পর। বাংলাদেশ সময় প্রায় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে।
কাজে লিটন দাসকে ধরলে ব্যাটসম্যানের কোটায় সাব্বিরের খেলার কোনই সম্ভাবনা ছিল না। তামিম, ইমরুল, সৌম্য, মুশফিক, সাকিব, মোসাদ্দেক ও লিটন দাস এই সাতজন খেলতেন। লিটন শেষ মুহুর্তে ইনজুরির কারণে বাইরে পড়ায় ভাগ্য খুললো সাব্বিরের। যে শততম টেস্ট খেলার জন্য মুখিয়ে ছিলেন। স্রষ্টা সে আশা পূর্ণ করলেন। একেই বলে ভাগ্য।
এআরবি/এমআর/পিআর