টেস্টে বাংলাদেশের আট জয়
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল স্ট্যাটাস লাভ করে ২০০০ সালে। তারিখ- ২৬ জুন। দশম টেস্ট খেলুড়ে দেশ হিসেবে লাভ করে আইসিসির সদস্যপদ। ভারতের বিপক্ষে প্রথম টেস্টেই গোটা ক্রিকেট দুনিয়াকে চমকে দিয়েছিল বাংলাদেশ। আমিনুল ইসলাম বুলবুলের (১৪৫) দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরিতে প্রথম ইনিংসে চারশো রান তুলেছিলেন টাইগাররা। তবে টেস্টে জয় পেতে বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয় পাঁচটি বছর। ২০০৫ সালের জুনে বহুকাঙ্ক্ষিত জয় ধরা দেয় টাইগারদের। এখন ২০১৭ সাল। এ পর্যন্ত মোট আটটি জয় পেয়েছে বাংলাদেশ দল। জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য সংক্ষেপে তা তুলে ধরা হলো-
বাংলাদেশের প্রথম শিকার জিম্বাবুয়ে:
২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে গড়ালো প্রথমটি। তাইবুর নেতৃত্বাধীন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে হাবিবুল বাশারের ৯৪, রাজিন সালেহর ৮৯, মোহাম্মদ রফিকের ৬৯ রানে ভর করে ৪৮৮ রান তোলে বাংলাদেশ। জবাবে জিম্বাবুয়ের ইনিংস থামে ৩১২ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে ৯ উইকেটে ২০৪ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। আর এনামুল হক জুনিয়রের ঘূর্ণিতে এই ইনিংসে ১৫৪ রানেই শেষ জিম্বাবুয়ে। ফল- ২২৬ রানে জয়ী বাংলাদেশ। টাইগারদের টেস্ট জয়ের শুরু সেখান থেকেই।
তামিম-মাহমুদউল্লাহ নৈপুণ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বধ :
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেই জয়ের পর কেন যেন জয়টা আবারও সোনার হরিণে পরিণত হয়। ২০০৯ সালের জুলাইয়ে মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে টেস্টে দ্বিতীয় জয় পায় বাংলাদেশ। ক্যারিবিয়ান ওই দলে অবশ্য ছিল বড় তারকাদের অনুপস্থিতি। তারপরও প্রথম ইনিংসে ২৩৮ রানেই অলআউট টাইগাররা! দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে পৌঁছে তামিম ইকবালের সেঞ্চুরিতে; খেলেছেন ১২৮ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস। বাংলাদেশ সংগ্রহ পায় ৩৪৫ রানের। বল হাতে তাণ্ডব চালান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৫১ রানে পাঁচ উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৮১ রানে গুটিয়ে দেন তিনি। আর তাতে বাংলাদেশ পায় ৯৫ রানের জয়।
সাকিবের ১০ উইকেট ও বাংলাদেশের তৃতীয় টেস্টে জয়:
টেস্টে প্রথম ও দ্বিতীয় জয়ের ব্যবধান চার বছর। কিন্তু তৃতীয় টেস্ট জয়টা পরের ম্যাচেই। প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজই। ইনজুরির কারণে ওই ম্যাচে খেলতে পারেননি মাশরাফি। দায়িত্ব বর্তায় সাকিব আল হাসানের ওপর। দলকে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দেন। ব্যাটে-বলেও রাখেন অনন্য অবদান। ব্যাট হাতে দুই ইনিংসে সাকিবের রান সংখ্যা ১৬ ও ৯৬*। এরপর বল হাতে ৫+৫=১০ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরাও সাকিব। ফল- চার উইকেটে জয়ী বাংলাদেশ।
মুশফিকের হাত ধরে চতুর্থ জয় :
২০১৩ সালে। তখন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। ওই বছর এপ্রিলে দুই ম্যাচের সিরিজ। প্রথমটিতে জিম্বাবুয়ের কাছে পরাস্ত হয় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় টেস্টে ঘুরে দাঁড়ানোর পালা টাইগারদের। পেরেছেনও। অধিনায়কের মতোই খেলেছেন মুশফিক। ব্যাট হাতে দুই ইনিংসেই ফিফটি তুলে নেন (৬০ ও ৯৩)। মুশফিক নৈপুণ্যে জিম্বাবুয়েকে ১৪৩ রানে হারায় বাংলাদেশ। ১-১ সমতায় সমাপ্তি হয় সিরিজের।
তাইজুলের ঘূর্ণিতে কুপোকাত জিম্বাবুয়ে:
পরের বছরই (২০১৪) বাংলাদেশ পেল পঞ্চম জয়। আর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৩ উইকেটের এই জয়টি এলো তাইজুল ইসলামের অসাধারণ বোলিং নৈপুণ্যে। প্রথম ইনিংসে মাত্র ১ উইকেট নেন। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে ৮ উইকেট নিয়ে জিম্বাবুয়েকে ১১৪ রানের বেঁধে ফেলেন তিনি। ৭ উইকেট হারিয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের ষষ্ঠ টেস্ট জয়ের নায়ক সাকিব :
সাকিব আল হাসান কী পারেন; তা অজানা নয় কারোরই। ব্যাট হাতে যেমন প্রতিপক্ষ বোলারদের শাসন করতে পারেন; তেমনি বল হাতে কড়া শাসনে রাখেন প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের। ২০১৪ সালের ওই একই সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১৩৭ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন সাকিব। বল হাতে দুই ইনিংস মিলে ১০ উইকেট (৫+৫) নিয়ে বাংলাদেশের ষষ্ঠ টেস্ট জয়ের নায়ক সাকিব। জয়টা ১৬২ রানের।
মুমিনুলের ব্যাটে এলো সপ্তম জয় :
পরের ম্যাচেই আসে টেস্টে বাংলাদেশের সপ্তম জয়। দুই ইনিংসেই হাসে তার ব্যাট। প্রথম ইনিংসে করেন ৪৮ রান। আর দ্বিতীয় ইনিংসে তার ব্যাট থেকে আসে ১৩১* রানের মূল্যবান এক ইনিংস। মুমিনুল নৈপুণ্যে জিম্বাবুয়েকে ১৮৬ রানে হারায় বাংলাদেশ। এর মধ্য দিয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করেন টাইগাররা।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের নায়ক মিরাজ :
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে স্বপ্নের অভিষেক হয়েছিল মেহেদী হাসান মিরাজের। বল হাতে দুর্দান্ত পারফর্ম করেন তিনি। প্রথম ইনিংসে নেন ৬ উইকেট; দ্বিতীয় ইনিংসে আরও একটি উইকেট। এরপর দ্বিতীয় টেস্টে তো আরও উজ্জ্বল। দুই ইনিংসেই নেন ৬টি করে উইকেট। তার হাত ধরেই প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে ১০৮ রানে জয় পায় বাংলাদেশ। দুই টেস্টে ১৯ উইকেট নিয়ে সিরিজ সেরা মিরাজ। এর মধ্য দিয়ে অনন্য এক রেকর্ডও গড়েন ১৯ বছরের যুবা।
এনইউ/পিআর