লায়নের হাতেই ধ্বংসস্তুপে পরিণত ভারত
পুণে টেস্টে একবার ১০৫ আরেকবার ১০৭ রানে অলআউট হওয়ার পর বেঙ্গালুরু টেস্ট নিয়ে দারুণ সতর্ক ছিল ভারত। ব্যাটিং শক্তি বাড়াতে জয়ন্ত যাদবকে বাদ দিয়ে নেয়া হয়েছিল ট্রিপল সেঞ্চুরিয়ান করুণ নায়ারকে। বিরাট কোহলিরা প্রতিশ্রকি দিয়েছিলেন পুণে কাণ্ড ভুলে গিয়ে নতুন করে শুরু করতে চান তারা।
কিন্তু সব প্রতিশ্রুতিই কাগুজে। বাস্তবতার সঙ্গে দারুণ অমিল। ব্যাটিংয়ে কোনো উন্নতিই করতে পারেনি ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। এবার সেই স্পিনেই শেষ হলো ভারত। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ান ডান হাতি অফ স্পিনার নাথান লায়নের হাতেই ধ্বংসস্তুপে পরিণত হলো বিরাট কোহলি অ্যান্ড কোং।
ব্যাঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামীতে ২২.২ ওভার বল করে মাত্র ৫০ রান দিয়েই ৮ উইকেট নিয়েছেন নাথান লায়ন। লোকেশ রাহুল যদি ৯০ রান না করতেন, তাহলে পুণে টেস্টের মতোই ১০০ কিংবা ১০৫ রানের মধ্যে প্যাটেক হয়ে যেতো ভারত। লোকেশ রাহুলের কারণেই ১৮৯ রান করদতে সক্ষম হলো তারা।
তবুও, নাথান লায়ন হালকা সবুজ উইকেটেও যেভাবে বল ঘোরালেন তা রীতিমত অবিশ্বাস্য। একাই আটটি উইকেট নিলেন! পুণে টেস্টের নায়ক স্টিভেন ও`কিফ নিয়েছেন মাত্র ১টি উইকেট। বাকিটা নিয়েছেন মিচেল স্টার্ক।
পুণে টেস্টে বিপর্যয়ের জন্য দোষারোপ করা হচ্ছিল পিচ কিউরেটরকেই। এমনকি আইসিসি পর্যন্ত পুনের উইকেটকে `পুওর` আখ্যা দিয়েছিলেন। ধারণা করা হচ্ছিল, বেঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের উইকেট তাই বদলে ফেলা হবে। ভারতের ব্যাটসম্যানদের উপযোগি করেই গড়ে তোলা হবে। স্পিনাররা এই উইকেট থেকে খুব একটা সুবিধা আদায় করতে পারবে না হয়তো।
উইকেটে হালকা সবুজ ঘাস দেখে তেমনটা মনে হওয়াই ছিল স্বাভাবিক। তবুও ভারতীয় মিডিয়াগুলো লিখছিল, সবুজ থাকলেও অশ্বিন-জাদেজাদের বল ঘুরতে পারে। যদিও তা হওয়ার সম্ভাবনা তৃতীয় দিন থেকে।
কিন্তু প্রথম দিনই বাজিমাত করে দেখালেন অস্ট্রেলিয়ার মূল স্পিনার নাথান লায়ন। পুণে টেস্টে নায়ক ছিলেন স্টিভেন ও`কিফ। এবার নায়ক পরিবর্তণ হয়েছে শুধু; কিন্তু দৃশ্যপট একই। ও`কিফের জায়গা নিয়েছেন লায়ন। ৮ উইকেট একাই ধ্বস নামিয়েছেন ভারতীয় ইনিংসে।
সকালে উইকেট দেখে ব্যাটসম্যান বাড়িয়ে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি। লোকেশ রাহুলের সঙ্গে ইনিংস ওপেন করতে নামেন ২০১১ সালের পর টেস্ট দলে ফেরা অভিনব মুকুন্দ। ইনজুরির কারণে টেস্ট থেকে ছিটকে গিয়েছেন মুরালি বিজয়।
কিন্তু ইনিংসের ১১ রানের মাথায় ব্যক্তিগত শূন্য রানে মিচেল স্টার্কের বলে এলবির ফাঁদে পড়েন অভিনব। ব্যাটিং অর্ডারে ভাঙনের শুরু হলো ব্যাটিংয়ে নামার পরপরই। চেতেশ্বর পুজারা আর লোকেশ রাহুল মিলে হ্যাজলউড, মিচেল মার্শ, মিচেল স্টার্ক আর স্টিভেন ও`কিফদের ভালো সামাল দিচ্ছিলেন।
কিন্তু লাঞ্চে যাওয়ার আগ মুহূর্তেই পুজারার উইকেট হারায় ভারত। আউট হয়ে যান পুজারা। বিরাট কোহলি প্রথম টেস্টে ব্যর্থ হওয়ার পর সবাই ভেবেছিল, বুঝি দ্বিতীয় টেস্টে এসে ঘুরে দাঁড়াবেন তিনি; কিন্তু না ১৭ বলে ১২ রান করার পর নাথান লায়নের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হলেন তিনি।
এরপরই বোঝা হয়ে গিয়েছিল ভারতের ইনিংসের কী অবস্থা হতে যাচ্ছে। স্টিভেন ও`কিফের হাতে ২৬ রান করা করুণ নায়ার উইকেট দিয়েছিলেন শুধু। বাকি ব্যাটসম্যানরা শুধু আসা-যাওয়ার মধ্যে ছিলেন নাথান লায়নের ঘূর্ণি সামলাতে না পেরে। লোকেশ রাহুল আশার প্রদীপ হয়ে থাকলেও তিনিও ৯ নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হয়ে যান লায়নের বলে রেনশর হাতে ক্যাচ দিয়ে।
আইএইচএস/আরআইপি/জেআইএম