কাজটা কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়
টেস্টে এমনিতেই বাংলাদেশের ট্র্যাক রেকর্ড ভালো না। সবার জানা, সীমিত ওভারের ফরম্যাটে দল হিসেবে মোটামুটি দাঁড়িয়ে গেলেও দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে এখনো অনেক পেছনে মুশফিক, তামিম, সাকিব-মাহমুদউল্লাহরা। তাদের টেস্ট অ্যাপ্রোচ অ্যাপ্লিকেশন প্রত্যাশিত মানে পৌঁছেনি।
আর দ্বিতীয় ইনিংসের পরিসংখ্যান আরও খারাপ। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসের অবস্থা খুব খারাপ। খুব বেশি দূর যেতে হবে না। নিউজিল্যান্ডে দুই টেস্টের সিরিজেও দ্বিতীয় ইনিংসে টাইগারদের পারফরম্যান্স চরম অনুজ্জ্বল।
ওয়েলিংটনে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৫৯৫ রানের পাহাড় সমান ইনিংস গড়ার পর দ্বিতীয়বার ১৬০ রানে অলআউট। এরপর ক্রাইস্টচার্চে প্রথম ইনিংসে ২৮৯ রানের পর আবার ১৭৩ রানে সব উইকেট খুইয়ে বসা। সেই দল এবার এক বিরাট অগ্নি-পরীক্ষায়।
হায়দরাবাদে ভারতের সাথে পরাজয় এড়াতে লড়ছে মুশফিকের দল। এক টেস্টের সিরিজে হার এড়াতে টাইগারদের সামনে এখন একটিই পথ- আগামীকাল শেষ দিন পুরো সময় উইকেটে কাটিয়ে দেয়া। ৪৫৯ রানের টার্গেট সামনে রেখে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা মুশফিক বাহিনীর আজ চতুর্থ দিন শেষে সংগ্রহ ৩ উইকেটে ১০৩। প্রথম ইনিংসে ৮২ রানের আক্রমণাত্বক ইনিংস খেলা সাকিব (২১*) আর ফর্ম ফিরে পাওয়ার জোর লড়াইয়ে ব্যস্ত মাহমুদউল্লাহ (৯*) ক্রিজে।
শুধু নিউজিল্যান্ডের মাটিতেই নয়, ইতিহাস সাক্ষী দিচ্ছে টেস্টে বাংলাদেশ বরাবরই দ্বিতীয় ইনিংসে খারাপ খেলে। এই ভারতের সাথে ১৬ বছর আগে অভিষেক টেস্টে প্রথম ইনিংসে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের শতরানসহ ১৪৫ আর হাবিবুল বাশারের ৭১ রানের ওপর ভর করে ৪০০ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৯১ রানে গুড়িয়ে যাওয়া দিয়ে সেই যে খারাপের ধারা শুরু হয়েছে তা এখনো বহাল আছে।
তবে ইতিহাস সাক্ষী দিচ্ছে হাতেগোনা কয়েকবার দ্বিতীয় ইনিংসেও ভালো খেলে ম্যাচ ড্র করেছেন টাইগাররা। এক্ষেত্রে বড় অনুপ্রেরণার প্রতীক হতে পারে ২০১৫ সালের ২৮ এপিল-২ মে খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের সাথে হওয়া ম্যাচটি।
যে ম্যাচের চালচিত্রের সাথে হায়দরাবাদের ম্যাচের দৃশ্যপটের খানিক মিল আছে। পার্থক্য একটাই, ওই ম্যাচে বাংলাদেশ আগে ব্যাট করেছিল আর এখানে ভারতীয়রা প্রথম ব্যাটিং করেছে। তারপরও প্রথম ইনিংসে পিছিয়ে পড়ার হিসেবটাও খুব কাছাকাছি।
২০১৫ সালে খুলনায় পাকিস্তানিদের প্রথম ইনিংসে করা ৬২৮ রানের বিশাল স্কোরের জবাবে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস শেষ করে ৩৩২ রানে। হায়দরাবাদে যেমন বিরাট কোহলি ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন, ওই ম্যাচে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন পাকিস্তারে মোহাম্মদ হাফিজ (২২৪)।
২৯৬ রানে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশের সামনে ম্যাচ বাঁচানোর পথ একরকম বন্ধই ছিল। কারণ মুশফিক বাহিনীকে ম্যাচ বাঁচাতে চতুর্থ দিন লাঞ্চের ১৫ মিনিট আগে থেকে শেষ দিন পুরো সময় উইকেটে টিকে থাকতে হতো। মোদ্দাকথা, পুরো ৫ সেশন ব্যাটিং করা ছাড়া ড্রয়ের পথ ছিল না।
শেষ দুদিন প্রায় পুরো সময় উইকেটে কাটানো, তা-ও ২৯৬ রানের বড় ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে। এতবড় মানসিক চাপ নিয়েও সে ম্যাচ কৃতিত্বে সঙ্গে ড্র করার রেকর্ড আছে। তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েসের উদ্বোধনী জুটিতে গড়া ৩১২ রানের রেকর্ড পার্টনারশিপেই হার এড়ানো প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়।
প্রথম ইনিংসে ৩৩২ রান করা মুশফিকের দল দ্বিতীয় ইনিংসেও তোলে ৫৫৫ রান। ঠিক এসেই রকম অবস্থায় হায়দরাবাদ টেস্ট। এবার অবশ্য আর তামিম ও ইমরুল কেউই নেই। ইমরুল দলেই নেই। আর তামিম আউট হয়ে গেছেন। ওদিকে উইকেটের চরিত্র গেছে পাল্টে। ব্যাটিং সহায়ক পিচ হয়ে গেছে স্পিন ফ্রেন্ডলি।
এখানে শেষ দিন পুরো সময় টিকে থাকা খুব কঠিন। তবে খুলনার ওই ম্যাচকে অনুপ্রেরণা ভেবে চেষ্টা করলে ক্ষতি কি?
কে জানে, তাতে সাফল্যর দেখা মিলতেও পারে। সাকিব, মাহমুদউল্লাহ, মুশফিক আর সাব্বির- এই চারজন মিলে যদি প্রথম দুটি সেশন কাটিয়ে দিতে পারেন, তাহলে ম্যাচ বাঁচানো অসম্ভব নয়।
নিউজিল্যান্ডে অনভ্যস্ত ও প্রতিকুল উইকেটে সাকিব ও মুশফিক ৩৫৯ রানের বিরাট পার্টনারশিপ গড়েছেন। সেটা প্রথম ইনিংসে। সাকিব ডাবল সেঞ্চুরি আর মুশফিক দেড়শোর ঘরে পা রেখেছিলেন। এবার ম্যাচ বাঁচাতে ইতিহাস গড়তে ঠিকৎ অমন একটি জুটি দরকার।
কাল সাকিব-মাহমুদউল্লাহ আর মুশফিক-সাব্বিররা মিলে অমন একটি না হোক দেড়শো রানের দুটি জুটি গড়ে তুলতে পারলেও চলবে। তা করতে হলে ইতিহাস পাল্টাতে হবে। বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে ভালো খেলে না- এ ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সেটা কঠিন। কিন্তু অসম্ভব নয়।
এনইউ/আরএস