দুর্ভাগ্য, ডিআরএস এবং সাকিব-মুশফিকের দৃঢ়তা
লাঞ্চের আগের শেষ ওভার। ইশান্ত শর্মা বল করছিলেন। মিডঅনে দাঁড়িয়ে ফিল্ডিং করছেন বিরাট কোহলি। তার একটু নড়া-চড়াতেই নড়ে-চড়ে ওঠে গ্যালারি। ফিল্ডিং করার জন্য একটা দৌড় দিলেই কেঁপে ওঠে গ্যালারি। চারদিক থেকেই ‘বিরাট’ ‘বিরাট’, ‘কোহলি’ ‘কোহলি’ চিৎকার।
লাঞ্চের আগে শেষ ওভারটায় বাংলাদেশের আরেকটি উইকেট পাওয়ার আশায় নিজেই গ্যালারি কাঁপিয়ে তুললেন বিরাট কোহলি। তিনি নিজেই ইশারা করলেন দর্শকদের। উৎসাহ যোগালেন। হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মত যেভাবে চাইলেন সেভাবেই গগনবিদারি চিৎকারে পুরো স্টেডিয়াম কাঁপিয়ে তুললো দর্শকরা।
তাতে ব্যাটসম্যানদের যদি মনসংযোগে কোনো ব্যাঘাত ঘটানো যায়! ইশান্ত শর্মার প্রতিটি বলেই এ কাজটা করে গেলেন কোহলি। উত্তেজিত গ্যালারির সামনেই ইশান্ত শর্মাকে পুরো ওভার মোকাবেলা করে কাটিয়ে দিলেন মুশফিক। কোহলির প্রলোভন বা গ্যালারির চিৎকারে কোনো নজরই দিলেন না।
রান পাহাড়ের নিচে চাপা পড়ার পর দ্বিতীয় দিন বিকালেই সৌম্য সরকারের উইকেট হারিয়ে মোটামুটি বিপদে বাংলাদেশ। শেষ বিকালে সংবাদ সম্মেলনে মেহেদী হাসান মিরাজ এসে শুনিয়ে গিয়েছিলেন আশার বাণী। নিউজিল্যান্ডে করা ৫৯৬ রানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে জানালেন, আমাদেরও সামর্থ্য আছে ভালো ব্যাটিং করার।
কিন্তু সকালেই দুর্ভাগ্যের শিকার বাংলাদেশ। দুর্ভাগ্য না বলে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মানসিক চাপের কথাই বলা শ্রেয় এখানে। দিনের তৃতীয় ওভারে বল করছিলেন ভুবনেশ্বর কুমার। তার তৃতীয় বলে স্কয়ার লেগে ঠেলে দিয়ে অনায়াসে এক রান নিয়ে নিলেন মুমিনুল। দ্বিতীয় রান নেয়ার কোনো প্রয়োজনই ছিল না। উমেশ যাদবকে বাউন্ডারি বাঁচানোর জন্য দৌড়াতে দেখে দ্বিতীয় রান নেয়ার জন্য দৌড় দিলেন তামিম-মুমিনুল। আবার ফিল্ডারের হাতে বল দেখে মাঝ পথেই দু’জন থমকে দাঁড়ান। এরপর আবার দৌড় শুরু করলেন। এই যে সিদ্ধান্তহীনতা। তাতেই তারা ক্রিজে পৌঁছানোর আগে বল পৌঁছে গেলো এবং নন স্ট্রাইকিং প্রান্তে স্ট্যাম্প ভেঙে দিল তামিমের।
ভারতীয় বোলিংয়ের বিপক্ষে সব সময়ই স্বাচ্ছন্দ্য তামিমের ব্যাট। এবারও তেমন ইঙ্গিত মিলছিল; কিন্তু বড় ম্যাচে ছোট ছোট ভুলগুলোই যে অনেক সময় বড় হয়ে দাঁড়ায়, সেটার দারুণ প্রদর্শনী চলছে হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে। ভারতের বিপক্ষে ফিল্ডিংয়ে এমন অনেক ছোট ছোট ভুলকে এড়াতে পারেনি বাংলাদেশের ফিল্ডাররা।
ব্যাটিংয়ে নেমেও সেই একই ভুলের পুনরাবৃত্তি। সৌম্য সরকার ব্যাটের খোঁচা দিয়ে আউট হলেন। আগের দিন বিকালে উমেশ যাদবের বলে উইকেটের আবেদনই করেনি ভারতীয় ফিল্ডাররা। আম্পায়ারও আউট দেননি; কিন্তু উইকেটরক্ষক ঋদ্ধিমান সাহার সাথে কথা বলে স্রেফ সন্দেহ বশতঃ রিভিউ নিলেন বিরাট কোহলি। তাতেই কপাল পুড়লো সৌম্য সরকারের এবং বাংলাদেশেরও। ভাগ্য বুঝি একেই বলে। ভারতীয়রা আন্দাজে ঢিল ছোঁড়ার মত রিভিউ চাইলেই পেয়ে যায়, আর বাংলাদেশের ফিল্ডারদের আবেদনে আম্পায়ার সাড়া দিলেও সেটা রিভিউতে বাতিল হয়ে যায়।
তৃতীয় দিনের শুরুটাও এমনই দুর্ভাগ্য দিয়ে শুরু হলো। তবে অবশ্যই কাঠগড়ায় উঠে যাবে, কেন তামিম-মুমিনুল দ্বিতীয় রানটি নিতে গেলেন। এটা টি-টোয়েন্টি কিংবা ওয়ানডে নয় যে দ্রুত রান তুলতে হবে। এটা টেস্ট ম্যাচ বলের পর বল খেয়ে উইকেট আঁকড়ে থাকাই হবে মূল কাজ। সেখানে দ্রুত রান নিতে গিয়ে রান আউট হওয়াটা বেশ দুঃখজনক।
মুমিনুলের আউটটাও মেনে নেয়ার মত নয়। উমেশ যাদবের জোরালো আবেদনে আম্পায়ার জোয়েল উইলসন আঙ্গুল তুলে দিলেন। অথচ মুমিনুল খেয়ালই করলেন না বলটা স্ট্যাম্প ছেড়ে বেরিয়ে যেতে পারতো। সুতরাং, রিভিউ নিলে বেঁচেও যেতে পারতেন তিনি। রিভিউ নিলেন না, সোজা হেঁটে চলে গেলেন প্যাভিলিয়নে।
মাহমুদউল্লাহর আউটটাকেও দুর্ভাগ্য না বলে উপায় নেই। কারণ, ইশান্ত শর্মার বলে এলবির আবেদনে সাড়া দিলেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়েছিলেন তিনি; তাতেও বাঁচতে পারলেন না। কারণ, ডান হাতি বোলার। লাইনের বাইরে পিচ করলেও আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত আউট। স্ট্যাম্প মিস করার সম্ভাবনা থাকলেও আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত সঠিক বলেই রায় দিল রিভিউ।
১০৯ রানে চার উইকেট হারানোর পর ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশকে টেনে তোলার দায়িত্ব বর্তালো সাকিব আল হাসান আর মুশফিকুর রহীমের ওপর। যদিও সাকিব আল হাসান মাঠে নামার পর বিপজ্জনক কিছু শট খেলে আউটের সম্ভাবনা তৈরি করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত নিজেকে সামলে নিয়ে হাফ সেঞ্চুরিটাও পূরণ করে ফেললেন সাকিব। মুশফিককে নিয়ে ইতিমধ্যে গড়েছেন ৫২ রানের জুটি। এ দু’জনের ওপরই এখন যত আশার আলো। তারা একটু ধরে খেলতে পারলে হয়তো বা বাংলাদেশও কিছু একটা করে দেখাতে সক্ষম হবে।
আইএইচএস/এমআর/জেআইএম