বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ভারতের
হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামের উইকেট পুরোপুরি রান প্রসবিনী। বোলারদের বল খুব সহজেই ব্যাটে আসছিল। বোলারদের জন্য বলতে গেলে কিছুই নেই। এর মধ্যেও বাজে ফিল্ডিংয়ের মহড়া দিলো বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। সহজ রান আউটের সুযোগ, ক্যাচ মিস, বাউন্ডারি ছেড়ে দেয়া- কী করেনি বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। এর সঙ্গে পেসারদের শর্ট বল, হাফ ভলি, লুজ বল, স্পিনারদের ধারহীন স্লো বল- রান তোলার জন্য যত উপকরণ প্রয়োজন সবই মেলে ধরলো ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের সামনে।
এরই সদ্ব্যবহার করলেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। রীতিমত রান উৎসবে মেতেছে তারা। বিরাট কোহলি ডাবল সেঞ্চুরি করলেন। সেঞ্চুরি উপহার দিলেন মুরালি বিজয়, ঋদ্ধিমান সাহা। ৮০’র ওপর রান করেছেন আজিঙ্কা রাহানে এবং চেতেশ্বর পুজারা। ৬০ রান করেছেন রবিন্দ্র জাদেজা। ভারতের ইনিংস শেষ পর্যন্ত ঘোষণা হলো ৬ উইকেটে ৬৮৭ রানের পাহাড়ে পৌঁছার পর। বাংলাদেশের বিপক্ষে যা টেস্টে ভারতের সর্বোচ্চ রানের ইনিংসের রেকর্ড।
ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট বলা হচ্ছে এই ম্যাচটিকে। টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার প্রায় ১৭ বছর পর এই প্রথম ভারতের আমন্ত্রণ পেলো বাংলাদেশ। এ কারণেই বলা হচ্ছিল ঐতিহাসিক টেস্ট ম্যাচ। তার ওপর দু‘দেশের সাম্প্রতিক ক্রিকেট সম্পর্কের উষ্ণতা এই ম্যাচেও দারুণভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে; কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে এই উষ্ণতা যে বেশিক্ষণ স্থায়ী হওযার মত নয় তা বেশ ভালোভাবেই বোঝা যাচ্ছিল। ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা তা আরও বুঝিয়ে দিলেন।
হায়দরাবাদের পিচ দেখেই বোঝা গিয়েছিল ব্যাটিং উইকেট। টস ছিল তাই খুব গুরুত্বপূর্ণ। টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং বেছে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে তাই দ্বিতীয়বার চিন্তা করতে হয়েনি কোহলিকে। যদিও বাংলাদেশকে সূচনাটা দারুণ এনে দিয়েছিলেন তাসকিন আহমেদ। প্রথম ওভারের চতুর্থ বলেই লোকেশ রাহুলকে বোল্ড করে সাজঘরে ফেরত পাঠালেন তিনি।
প্রথম সূর্য্য যে সব সময় সারা দিনের পূর্বাভাস দেয় না, সেটা আবারও প্রমাণ করে দিল ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের ফিল্ডারদের বাজে ফিল্ডিং। সুতরাং, প্রথম দিন শেষেই বোঝা গিয়েছিল, রানের পাহাড়ে চড়তে যাচ্ছে ভারত। কোহলির সেঞ্চুরি করে অপরাজিত থাকাটা সেই ধারনাকে আরও পোক্ত করে তুলেছিল।
দ্বিতীয় দিন সকাল থেকে প্রচুর পরিমাণে দর্শকের আগমণ জানান দিচ্ছিল, তারা কোহলির কাছ থেকে আরও স্পেশাল কিছু দেখার আসায় গ্যালারিতে উপস্থিত হচ্ছেন। কোহলিও হতাশ করেননি। ক্যারিয়ারের চতুর্থ ডাবল সেঞ্চুরি উপহার দিলেন তিনি। টানা চারটি সিরিজে চারটি ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়লেন তিনি। রীতিমত অবিশ্বাস্য ব্যাপার।
অধিনায়ক যখন চূড়ান্ত ফর্মে থাকেন, তখন তার দলও পিছিয়ে থাকার কথা নয়। তার সতীর্থরাও যে যার জায়গা থেকে চেষ্টা করেছেন দলের জন্য অবদান রাখতে। যে কারণে দুটি সেঞ্চুরি এবং আরও তিনটি ফিফটির বেশি ইনিংসের দেখা মিলল। ১০৮ রান করেছেন মুরালি বিজয়। ১০৬ রানে অপরাজিত থাকলেন ঋদ্ধিমান সাহা। ৬০ রানে অপরাজিত রবীন্দ্র জাদেজা। ৮৩ রান করলেন চেতেশ্ব পুজারা আর ৮২ রান আসলো আজিঙ্কা রাহানের ব্যাট থেকে। অশ্বিন করেছেন ৩৪ রান। অথ্যাৎ লোকেশ রাহুল ছাড়া অন্য সব ব্যাটসম্যানের ব্যাট থেকেই রান এসেছে।
বাংলাদেশের বিপক্ষে এটাই ভারতের সবচেয়ে বড় রানের ইনিংস। ২০০০ সালে বাংলাদেশ নিজেদের অভিষেক টেস্টটা খেলেছে ভারতের বিপক্ষে। এরপর থেকে এ নিয়ে খেলছে ৯ম টেস্ট। এর মধ্যে ২০০৭ সালেই ঢাকায় সর্বোচ্চ ৩ উইকেটে ৬১০ রান করে ইনিংস ঘোষণা করেছিল রাহুল দ্রাবিড় নেতৃত্বাধীন ভারত। ওই টেস্টে বাংলাদেশ হেরেছিল ইনিংস ও ২৩৯ রানের বিশাল ব্যবধানে। এছাড়া ২০১০ সালে করা ৫৪৪ রান ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ২০০৪ সালে চট্টগ্রামে ভারত করেছিল ৫৪০ রান।
এবার আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গিয়ে বাংলাদেশের সামনে ৬৮৭ রানের বিশাল স্কোর দাঁড় করিয়ে দেয় ভারত। যা ভারতের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে পঞ্চম সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। গত ডিসেম্বরেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চেন্নাইতে ভারত নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বোচ্চ ৭ উইকেটে ৭৫৯ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে।
বাংলাদেশের বিপক্ষে ৬৮৭ রান করে ভারত আরও একটি রেকর্ড গড়েছে। টেস্ট ক্রিকেটে এই প্রথম দল হিসেবে টানা তিন টেস্টে ৬০০ প্লাস রান করেছে বিরাট কোহলির নেতৃত্বাধীন দলটি। সদ্য সমাপ্ত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের চতুর্থ টেস্টের প্রথম ইনিংসে মুম্বাইতে করেছিল ৬৩১ রান। চেন্নাইতে সিরিজের পঞ্চম এবং শেষ টেস্টে করেছেন নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ৭৫৯ রান। এরপর বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতে নেমে টানা তৃতীয় টেস্টে ৬০০ প্লাস রান করলো ভারত।
আইএইচএস/এমআর/পিআর