ভারতীয়দের জয়ের রথ থামাতে পারবে মুশফিকের দল?
টেস্ট র্যাংকিয়ে সবার ওপরে ভারত। পারফরমেন্সে ধারাবাহিকতাও প্রচুর। সবচেয়ে বড় কথা দেশের মাটিতে ভারতীয়রা দুর্বার। দুর্মনীয়। সর্বশেষ আট টেস্টে সাত জয় সে সত্যই জানান দিচ্ছে। এই তো গত বছর শেষ দিকে ইংল্যান্ডের সঙ্গে পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ৪-০ তে জিতেছে বিরাট কোহলির দল। রাজকোটে প্রথম টেস্টই ড্র হয়েছে শুধু। এরপর বিশাখাপত্তমে ২৪৬ রানে, মোহালিতে ৮ উইকেট, মুম্বাইতে ইনিংস ও ৩৬ রান এবং সর্বশেষ চেন্নাইতে ইনিংস ও ৭৫ রানে বিজয়ী হয়েছে ভারতীয়রা।
তারও আগে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ঘরের মাঠে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজেও ভারতের সাফল্য ছিল একচেটিয়া। ৩ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়ে গেছে কিউইরা। কানপুরে প্রথম টেস্টে ১৯৭ রানে, কলকাতায় ১৭৮ রানে এবং ইন্দোরে ইনিংস ও ৩২১ রানে বিজয়ী হয় ভারত। ভারতীয়দের সাফল্যের সাতকাহন আরও লম্বা। আজ যে মাঠে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারত টেস্ট, হায়দরাবাদের সেই রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে গত পাঁচ বছরে যে তিনটি মাত্র টেস্ট হয়েছে, তার দুটিতেই জিতেছে ভারত। বাকি একটি ম্যাচ ড্র থেকে গেছে।
২০১০ সালের ১২-১৬ নভেম্বর হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ড-ভারত প্রথম টেস্ট ম্যাচটি অমিমাংসিত থেকে যায়। কিউদের দুই ইনিংসে করা ৩৫০ ও ৪৮৮ রানের জবাবে ভারত প্রথম বার ৪৭২ ও দ্বিতীয় ইনিংসে বিনা উইকেটে ৬৮ রান করলে খেলা ড্র থেকে যায়। ঐ টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি হাকান ব্ল্যাক ক্যাপ্স তারকা ব্র্যান্ডন ম্যাকুলাম (২২৫)। কিন্তু একই মাঠে পরের দুই টেস্টে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া হালে পানি পায়নি। ভারতীয়দের সামনে দাঁড়াতেই না পেরে অজি ও কিউরা হারে ইনিংসে।
২০১২ সালের ২৩-২৬ আগষ্ট নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ভারত জয়ী হয় ইনিংস ও ১১৫ রানে। আর অফস্পিনার রবীচন্দন অশ্বিন ১২ উইকেট (৬/৩১ ও ৬/৫৪)। আর একই মাঠে শেষ টেস্ট হয় ২০১৩ সালের ২-৫ মার্চ অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ঐ ম্যাচে ভারত জয়ী হয় ইনিংস ও ১৩৫ রানে। মোদ্দা কথা ইতিহাস-পরিসংখ্যান ভারতের পক্ষে।
তাই ভাবা হচ্ছে এ টেস্টে বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো ফল হতে পারে ড্র। সে পরাজয় এড়ানোর কাজটিও সহজ হবে না টাইগারদের এক ইনিংসে ভালো খেললে চলবে না। এক সেশনে ভালো করে পরের সেশনে ছন্দ হারিয়ে ফেললে সর্বনাশ। পাঁচদিন প্রতিটি সেশনে ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলার বিকল্প নেই। সেই কাজটি করে দেখাতে হবে। মুশফিক, তামিম, সাকিব ও মাহমুদউল্লাহরা কি তা পারবেন?
তারা যে একদমই পারেন না, কখনো পারেননি। তাও নয়। পারেন। তবে কালে ভদ্রে। হায়দরাবাদে সেই কম পারা কাজটিই করে দেখাতে হবে। ব্যাটিং-বোলিং ও ফিল্ডিংয়ের তিন শাখায় একটা ভারসাম্য ধরে রাখতে হবে। প্রথম ইনিংসে ভালো খেলাই শেষ কথা নয়। সে শিক্ষা হয়েছে নিউজিল্যান্ডে। এখানে ভারতের জয় রথ থামাতে দরকার উভয় ইনিংসে নজর কাড়া পারফরমেন্স। সবার মত, আসল কাজটা করতে হবে ব্যাটসম্যানদের। তামিম, সৌম্য, মুমিনুল, মুশফিক, সাকিব, মাহমুদউল্লাহ ও সাব্বিরদের দায়িত্বও বেশি। ১৫ সেশনের অন্তত ৯ সেশন মানে তিন দিন ব্যাটিং করতে হবে। তারা যদি সে কাজটি করতে পারেন, তাহলে স্পিনাররা লড়াই করার পুঁজি ও সাহস পাবেন। আগে ব্যাটসম্যানদের সে কাজটি করে দেখাতে হবে।
পরিবেশ-পরিস্থিতি একদম অনুকূল। নিউজিল্যান্ডের মত বাড়তি বাউন্স থাকার সম্ভাবনা নেই। বল হঠাৎ বুকে, মুখে ও মাথায় আসবে না। একটু দেখে ও ধৈর্য্য ধরে খেলতে পারলে লম্বা সময় উইকেটে থাকা সম্ভব। দীর্ঘ ইনিংস খেলার পথে বাঁধা হবেন দুই স্পিনার রবিচন্দন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজা। নিউজিল্যান্ডের উইকেটের পাশাপাশি শরীর বাঁচাতে লড়াই করতে হয়েছে। মাথায় বল লেগে হাসপাতালেও যেতে হয়েছে আর হায়দরাবাদে লড়াই করতে হবে ঘূর্ণি বলের বিরুদ্ধে। ধরেই নিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ের বড় সময় বল করবেন ভারতীয় স্পিনাররা। উইকেট কিপার হুমরি খেয়ে পড়বেন উইকেটের ওপর। সঙ্গে ছাতার মত ক্রিজে থাকবে ফরোয়ার্ড শর্ট লেগ, সিলি মিড অফ, সিলি মিড অন, সিলি পয়েন্ট, লেগ গ্যালি। ক্লোজ ইন পজিসনে তিন-চারজন ফিল্ডারের অস্তিত্ব ধরে নিয়ে ধৈর্য্য ধরে ব্যাট চালাতে পারলেই কেবল লম্বা ইনিংস গড়া সম্ভব। তেড়ে ফুড়ে অতি আক্রমনাত্তক হতে গেলেই বিপদ। দেখা যাক তামিম, সৌম্য, মমিনুল, মুশফিক , সাকিব , মাহমুদউল্লাহ ও সাব্বিররা কি করেন ?
এআরবি/এমআর/জেআইএম