গল, চট্টগ্রাম ও খুলনা ফিরে আসবে হায়দরাবাদে?
ভারতের মাটিতে প্রথম টেস্ট খেলতে নেমে কি করবে বাংলাদেশ? বিরাট কোহলি, মুরালি বিজয়, চেতেশ্বর পূজারা ও আজিঙ্কা রাহানের গড়া দুর্দান্ত ব্যাটিং এবং ইশান্ত শর্মা, উমেশ যাদব এবং রবিচন্দন অশ্বিন, রবিন্দ্র জাদেজার ধারালো বোলিংয়ের বিরুদ্ধে কি করবে মুশফিকের দল? তামিম, সৌম্য, মুমিনুল, মুশফিক, সাকিব, মাহমুদউল্লাহ ও সাব্বিরের ব্যাটে প্রতিরোধের দেয়াল গড়ে তোলা সম্ভব হবে? তাসকিন, কামরুল ইসলাম রাব্বি ও সাকিব-মিরাজরা ভারতীয়দের রান পাহাড় গড়া থেকে বিরত রাখতে পারবেন? নানা কৌতুহলি প্রশ্ন সামনে রেখেই শুরু হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের ঐতিহাসিক টেস্ট।
হায়দরাবাদের রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে এ টেস্টের ভবিষ্যত এবং বাংলাদেশের সম্ভাবনা ও পরিণতি নিয়ে কথা বলতে যাবার আগে সবার চোখ আপনা আপনি চলে যাচ্ছে পরিসংখ্যানের দিকে। পরিসংখ্যান জানিয়ে দিচ্ছে ভারত পরিষ্কার ফেবারিট। সবার জানা, ওয়ানডের তুলনায় এমনিতেই টেস্টে বাংলাদেশের রেকর্ড তত সমৃদ্ধ নয়। সীমিত ওভারের ফরম্যাটে নিজেদের শক্তি-সামর্থ্য জানান দিতে পারলেও দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটে বাংলাদেশ এখনো দূর্বল দল হিসেবেই পরিগণিত।
ওয়ানডে জেতার কৌশলটা রপ্ত হয়ে গেছে। কিন্তু পাঁচ দিনের টেস্টে ব্যাটিং-বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে সমানভাবে ভালো খেলার অভ্যাসটা তৈরি হয়নি। এক সেশন বা ইনিংসে ভালো খেলার পরই ঘটছে ছন্দপতন। মনোযোগ- মনঃসংযোগ ধরে রাখা এবং প্রতিটি সেশন অনুযায়ী পরিবেশ-পরিস্থিতির আলোকে পারফরম করাটাই হচ্ছে না। সে কারণে পারফরমেন্সে ধারাবাহিকতাও কম।
গত মাসে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে দুই টেস্টের সিরিজেও ঠিক একই চিত্র। ওয়েলিংটনে উল্কার বেগে শুরু। সাকিব আল হাসানের দুর্দান্ত ডাবল সেঞ্চুরি, অধিনায়ক মুশফিকের বিগ হান্ড্রেড, ওপেনার তামিম ও বাঁহাতি মুমিনুল হকের জোড়া হাফ সেঞ্চুরিতে ৫৯৫ রানের হিমালয় সমান স্কোর। কিন্তু ঠিক পরের ইনিংসেই ছন্দপতন। ৬০০ রানের দোরগোড়া থেকে ১৬০`এ নেমে আসা। ক্রাইষ্টচার্চে দ্বিতীয় টেস্টেও প্রায় একই ঘটনা। ২৮৯ রানের পর ১৭৩`এ থেমে যাওয়া। তাই বলে বাংলাদেশ যে কখনই টেস্টে ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলতে পারেনি, বা দু`ইনিংসে ভালো খেলেনি, তা নয়। খেলেছে। তবে সেটা সংখ্যায় বেশি নয়, কম।
টেস্টে পাঁচদিন টানা ভালো খেলা এবং পারফরমেন্সে ধারাবাহিকতা বজায় রাখার রেকর্ডটা দূর্বল ও জীর্ণ হলেও গত তিন বছরে বাংলাদেশ কয়েকবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এবং দেশে ও বাইরে বীরের মত লড়েই টেস্ট ড্র করেছে। তার প্রথম নজিরটি ২০১৩ সালের মার্চে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে। গলে লঙ্কানদের প্রথম ইনিংসে করা ৫৭০ রানের বড় সড় স্কোরে ভরকে না গিয়ে মুশফিকুর রহীম ( ২০০), মোহাম্মদ আশরাফুল ( ১৯০) ও নাসির হোসেনের ( ১০০) দৃঢ়তায় উল্টো ৬৩৮ রানের হিমালয় সমান স্কোর গড়ে টেস্ট ড্র করার কৃতিত্ব আছে টাইগারদের।
একই দলের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে ফেব্রুয়ারিতে আবার কৃতিত্বপূর্ণ ড্র। এবার ঘরের মাঠে। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম ইনিংসে ১৬১ রানে পিছিয়ে পড়েও শেষ পর্যন্ত ম্যাচ হার এড়ানোর কাজটি ভালো মতই করে দেখায় টাইগাররা। প্রথম ইনিংসে ইমরুল কায়েস ও শামসুর রহমান শুভর জোগা শতক আর পরের ইনিংসে মমিনুল হকের শতরানে ড্র করে ফেলা।
বীরের মত টেস্ট ড্র`র শেষ কৃতিত্বটিও ঘরের মাঠে। সেটা ২০১৫ সালের এপ্রিল-মে`র ঘটনা। খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েসের রেকর্ড ৩১২ রানের ওপেনিং পার্টনারশিপে বীরের মত লড়াই করে ম্যাচ হার এড়ায় মুশফিকের দল। তামিম ইকবালের ডাবল হান্ড্রেড (২০৬) আর ইমরুলের ব্যাট থেকে আসে ১৫০ রান।
এ তিন তিনটি বীরোচিত ড্র জানান দিচ্ছে বাংলাদেশও পারে। তবে কালেভদ্রে। হায়দরাবাদে কি সে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটানো সম্ভব হবে? টাইগাররা কি তা পারবেন?
এআরবি/এমআর/আরআইপি