‘হায়দরাবাদের ঐতিহাসিক জয়টিই মোড় ঘুরিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের’
মাঠ ভিন্ন, প্রতিপক্ষ ভিন্ন। এমন কি ভিন্ন ক্রিকেটের ফরম্যাটও। তবে অভিন্ন শহরটির নাম হায়দরাবাদ। ভারতের যে শহরে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম জয়ের কেতন উড়িয়েছিল বাংলাদেশ, ১৯ বছর পর সেই শহরেই আরেকটি ঐতিহাসিক মুহূর্তের সামনে দাঁড়িয়ে। বৃহস্পতিবার হায়দরাবাদ দিয়ে আরেকটি অধ্যায় যোগ হচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে। রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে ‘অন্যরকম অভিষেক’ হচ্ছে বাংলাদেশের। সে অভিষেক ভারতের মাটিতে টেস্ট খেলার। ২০০০ সালে ঢাকায় যাদের বিপক্ষে বাংলাদেশ খেলেছিল অভিষেক টেস্ট। ১৭ বছর পর সেই ভারতের মাটিতে টেস্টের ময়দানে দাঁড়িয়ে টাইগাররা’।
১৯৯৮ সালের ১৭ মে। হায়দরাবাদের লাল বাহাদুর শাস্ত্রী স্টেডিয়ামে দিবা-রাত্রির ম্যাচে প্রতিপক্ষ কেনিয়া। ২১টি ম্যাচ খেলে কোনো জয় না পাওয়া ক্ষুধার্থ টাইগারদের সামনে স্টিভ টিকোলো, মরিস ওদুম্বে ও হিতেশ মোদিরা। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা কেনিয়ার এ ক্রিকেটাররা ম্যাচ শেষে মাঠ ত্যাগ করেছিলেন মাথা নিচু করে। মোহাম্মদ রফিক নামের এক টাইগারের থাবায় ক্ষত বিক্ষত হয়েছিলেন তারা। বল হাতে ৩ উইকেট, ব্যাট হাতে দলীয় সর্বোচ্চ ৭৭ রান দেশকে প্রথম জয় উপহার দিয়ে বুক চিতিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন মোহাম্মদ রফিক।
বাংলাদেশের প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ জয়ের নায়ক মোহাম্মদ রফিক আরেকটি ঐতিহাসিক দিন সামনে রেখে স্মৃতিচারণ করলেন দেড় যুগেরও অধিক সময় আগের ওই ম্যাচটিকে, ‘হায়দরাবাদ নামটি বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসের সঙ্গে মিশে আছে। সেখানেই আমরা জিতেছিলাম প্রথম ওয়ানডে। একদিন বাংলাদেশের নামের পাশে ৫০০ ম্যাচ ১০০০ ম্যাচ জয়ের কথা লেখা হবে। কিন্তু ১৯৯৮ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে ওই ম্যাচ একটি ইতিহাস। আপনি যতই জিতেন, প্রথম জয়ের স্বাদই ভিন্ন। ওই ম্যাচ জয়ের পরই কিন্তু মোড় ঘুরে যায় বাংলাদেশের ক্রিকেটের। বৃহস্পতিবার হায়দরাবাদে যে ম্যাচটি খেলতে নামছে বাংলাদেশ সেটাও ঐতিহাসিক। ভারতের মাটিতে প্রথম টেস্ট। একটু ভালো করতে পারলেই নতুন ইতিহাস।
অনেকে হয়তো বলবেন সে ভালোটা কি? আমাদের ক্রিকেটাররা পেশাদার। তারা জানে কখন কি করতে হবে। বাংলাদেশ ও ভারতের কন্ডিশনের পার্থক্য নেই তেমন। ওখানেই সবাইকে মন খুল খেলতে হবে। মাথায় রাখতে হবে কিভাবে ৫ দিন ভালো খেলা যায়। জয়-পরাজয় নয়, মাথায় রাখতে হবে ভালো খেলার চিন্তা। আরেকটি বিষয় হলো পজিটিভ মনোভাব রাখতে হবে। আমি পজিটিভ ক্রিকেট পছন্দ করি।
কেনিয়ার বিপক্ষে ওই ম্যাচের আগে টিম ম্যানেজমেন্টের সবাই বলেছিলেন, আমরা ভারতের সঙ্গে হয়তো পারবো না। কেনিয়া যেহেতু আছে তাদের হারানোর চেষ্টা করতে হবে। যদিও ওই সময় কেনিয়া ছিল বেশ শক্তিশালী। ওরা যখন প্রথমে ব্যাট করে ২৩৬ স্কোর করে ফেলে তখন মাঠ থেকেই সিদ্ধান্ত হয় আমাকে ওপেনিংয়ে নামানোর। পাওয়ার প্লে কাজে লাগাতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। আমি হাত খুলে খেলেছিলাম। শুরু থেকেই আমার লক্ষ্য ছিল বড় স্কোর করা। শটস আমার মুখস্তই ছিল।
আমাকে ওপেনিংয়ে নামানোর আরেকটা কারণ ছিল। সত্যি কথা বলতে কি ওই সময় আমরা পেস বোলারদের ভয় পেতাম। আমাদের যারা ওপেনার গিয়েছিলেন তাদের কেউ ভয়েও ওপেনিংয়ে খেলেননি। তাই কোচ আমাকে তখন ওপেনিংয়ে পাঠান।
আমি ফিফটি পূরণ করেছিলাম ছক্কা মেরে। পরে কোচ আমাকে বলেছিলেন-ওই সময় ওই শট খেলেছি কেন? আমার মনে একটা চিন্তা ছিল স্কোর বড় করতে হবে। আমার স্কোর বাড়লে দলের স্কোরও বাড়বে। আমার এখন ভাবলেও ভালো লাগে। দেশের প্রথম জয়ের ম্যাচের সেরা পারফরমার ছিলাম। এটা ভাগ্যের ব্যাপার।
আমি চাইবো ঐতিহাসিক এ টেস্টটিকেও যেন স্মরণীয় করে রাখতে পারে বাংলাদেশ। ম্যাচের আগেই সব পরিকল্পনা করে ফেলতে হবে। পরিকল্পনাটা হবে ৫ দিন কিভাবে খেলবে তার। যেহেতু একটি টেস্ট, তাই বোঝার আগেই শেষ হয়ে যাবে। তাই যা কিছু পরিকল্পা আগে থেকে তৈরি করতে। ক্রিকেটটাকে উপভোগ করতে হবে।’
আরআই/এমআর/এমএস