‘সাফল্য পেতে কষ্টকে জয় করতে হবে’
কাজটা কঠিন। তারপরও বাংলাদেশের কোনো পর্যায়ের ফুটবল দলের সামনে এত বড় হাতছানি আগে কখনও আসেনি। সে হাতছানি যে বিশ্বকাপে খেলার। এমন সম্ভাবনায় দুয়ারে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী ফুটবল দল। আগামী সেপ্টেম্বরে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হবে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপ, যা ২০১৮ সালে উরুগুয়েতে অনুষ্ঠিতব্য ফিফা অনূর্ধ্ব-১৭ নারী বিশ্বকাপের এশিয়ার বাছাই পর্ব। ৮ দলের মধ্যে সেরা তিনে নাম লেখাতে পারলে বিশ্বকাপের টিকিট দেশের খেলাধুলায় যোগ হবে নতুন অধ্যায়।
এ বছর ৯ থেকে ২৩ সেপ্টেম্বর থাইল্যান্ডে বিশ্বকাপে ওঠার লড়াইয়ে আছে নারী ফুটবলে এশিয়ার সুপার পাওয়ার জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, উত্তর কোরিয়া। আছে অস্ট্রেলিয়া, চীন, থাইল্যান্ড ও লাওস। এদের বিরুদ্ধে লড়াই করে সেরা তিনে থাকার মতো শক্তি এখনো হয়ে ওঠেনি বাংলাদেশের। তবে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দল হিসেবে এশিয়ার সেরা আটে খেলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ফুটবলে নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। নারী ফুটবলের ঐতিহ্য আর অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকা ভারতও পারেনি শেষ আটে উঠতে।
এটা সত্য, থাইল্যান্ডের ওই আসরে বাংলাদেশের কিছু হারানোর নেই। পাওয়ার আছে অনেক। গত বছর ঢাকায় যে ফুটবলশৈলী উপহার দিয়ে বাছাই পর্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ, চূড়ান্ত পর্বে তেমন সুন্দর খেলা প্রত্যাশা করছেন সবাই। কিন্তু বাস্তবতা হলো দুই আসরের পার্থক্য নদী আর সাগরের মতো।
থাইল্যান্ডে মেয়েরা যাতে ভালো ফুটবল খেলতে পারে, শক্তিশালী দলগুলোর বিরুদ্ধে নেমে খেই হারিয়ে না ফেলে সেভাবেই তাদের তৈরি করছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। সে চেষ্টাটা শুধু পরিকল্পনায়ই নয়, বাস্তবেও। মেয়েদের অভিজ্ঞতা বাড়াতে জাপান সফর করিয়েছে বাফুফে। আগামী মাসে সিঙ্গাপুর পাঠানোর পরিকল্পনাও আছে। স্থানীয় দুই কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন ও মাহবুবুর রহমান লিটুর পাশে বিদেশি কোচিং স্টাফকে মেয়েদের অনুশীলনে কাজে লাগাচ্ছে।
যদিও জাপান যাওয়ার কয়েকদিন আগে বিদেশি আর স্থানীয় কোচদের মধ্যে তৈরি হওয়া দ্বন্দ্বে ছন্দপতন হয়েছিল নারী দলের অনুশীলনে। বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন সে সমস্যাটা বেশি দূর এগুতে দেননি, মিটিয়ে ফেলেছেন ২৪ ঘন্টার মধ্যেই। বাফুফে সভাপতি বলেছেন, ‘মেয়েরা যে পর্যায়ে খেলে প্রতিপক্ষকে হালি হালি গোল দিয়েছে, থাইল্যান্ডের টুর্নামেন্ট তার চেয়ে অনেক উঁচু পর্যায়ের। এখানে আমি মেয়েদের ভালোভাবে প্রস্তুত না করে পাঠাতে পারি না। ওদের ট্রেনিংটা তাই বেশি হচ্ছে, পরিশ্রম বাড়ছে। এজন্য কেউ কেউ ছোটখাটো অভিযোগের কথা বলছে। কিছুদিন পর সব ঠিক হয়ে যাবে।’
পরিশ্রম বাড়ছে তা স্বীকার করেছেন অনূর্ধ্ব-১৬ নারী দলের অধিনায়ক কৃষ্ণা রানী সরকারও। তবে তিনি বাস্তবতাও মেনে নিয়েছেন। বরং আরো কঠোর পরিশ্রম করতে নিজেদের তৈরি করার প্রতিজ্ঞা করেছেন। জাপানের জে-গ্রীন সাকাই নারী ফেস্টিভাল ফুটবলে অংশগ্রহণ শেষে দেশে ফিরে মঙ্গলবার বিকেলে জাগো নিউজকে কৃষ্ণা রানী বলেছেন, ‘সামনে আমাদের আরো বড় বড় দলের বিপক্ষে খেলা। থাইল্যান্ডের টুর্নামেন্ট অনেক বড়। ওই ধরনের টুর্নামেন্টে খেলতে যাওয়ার আগে আমাদের ফিটনেস বাড়াতে হবে, স্পিড বাড়াতে হবে। সাফল্য পেতে কষ্টকে আমাদের জয় করতেই হবে।’
জাপান সফরের অভিজ্ঞতা আগামীতে কাজে লাগবে উল্লেখ করে অনূর্ধ্ব-১৬ দলের অধিনায়ক বলেছেন, ‘যে খেলাগুলো হয়েছে সেখান থেকে অনেক কিছু শিখেছি। ওদের স্কিল, পাসিং, স্পিড- সব কিছু থেকেই শেখার আছে। সেপ্টেম্বরের টুর্নামেন্টে আমাদের জাপান, থাইল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে খেলা। তাই ওদের সাথে যদি বার বার প্রীতি ম্যাচ খেলি তাতে আরো শেখা যাবে, অভিজ্ঞতা বাড়বে। ওরা কীভাবে খেলে, কীভাবে বল পাস দিচ্ছে, কীভাবে রিসিভ করছে, দূর থেকে শট নিচ্ছে। আবার আমরা নিলে ওদের গোলরক্ষক কীভাবে তা ধরছে, প্রতিহত করছে, স্ট্রাইকাররা কীভাবে বল নিয়ে যায়- বারবার খেললে এগুলো আমাদের মাথায় ঢুকে যাবে।’
জাপানে অনেক ঠান্ডা ছিল। বাংলাদেশের মেয়েরা এত ঠান্ডায় খেলতে অভ্যস্ত নয়। তারপও ঠান্ডায় কোনোভাবেই কাবু হয়নি কৃষ্ণারা। ঠান্ডা প্রসঙ্গে অধিনায়ক কৃষ্ণা রানী বলেছেন, ‘আমরা এত ঠান্ডায় খেলায় অভ্যস্ত ছিলাম না, তা ঠিক। তবে সকাল ৬টায় আমরা অনুশীলন করেছি। ঠান্ডা মানিয়ে নিয়েছি। আর যখন মাঠে নামি তখন চিন্তা থাকে ফুটবল। আমাদের গোল বের করতে হবে, জিততে হবে। তখন ঠান্ডা-গরম যাই থাক, মনের মধ্যে থাকে জয়ের চিন্তা।’
আরটি/জেএইচ/আরআইপি