জয় না পেলেও নিউজিল্যান্ডে ভালো খেলেছে বাংলাদেশ
১৯৯৮ সালে অধিনায়ক হিসেবে নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়েছিলাম। ওই সময় খেলেছিলাম চারদিনের প্রথম শ্রেণির ম্যাচ। তখন পরিস্থিতি ছিল, আমরা চার দিনের ম্যাচে তিনদিনই ফিল্ডিং করতাম। তখনকার সময়ে ওই কন্ডিশনে আমরা কিছুতেই নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে পারিনি। মনে পড়ে, তখনকার সিরিজটা আমাদের জন্য কত কঠিন ছিল।
তখনকার সময়ের সঙ্গে যদি তুলনা করি, তাহলে বলবো, এবার কিন্তু আমাদের ছেলেরা দুর্দান্ত খেলেছে। আমরা শুধুমাত্র ম্যাচ জিততে পারিনি। এছাড়া পুরো সিরিজে ভালো খেলেছে বাংলাদেশ। বোলিংয়ে আমরা অনেক প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছি তাদের ওপর। ব্যাটিংয়েও ব্যক্তিগতভাবে অনেক ভালো ভালো পারফরম্যান্স দেখা গেছে। যদিও ফিল্ডিংটা ভালো হয়নি আমাদের।
সব মিলিয়ে একটা জিনিস, আমি লক্ষ্য করছি এই সিরিজে, বাংলাদেশ কিন্তু অনেক উন্নতি করেছে। কম-বেশি তিনটি বিভাগেই। বোলিং-ব্যাটিং এবং ফিল্ডিং। যদিও আগের সেই সময়ের তুলনায় নিউজিল্যান্ডও অনেক উন্নতি করেছে। তবুও, তাদের কন্ডিশনে গিয়ে বাংলাদেশ যে এতো ভালো খেলবে, সেটা আমার চিন্তারই বাইরে ছিল।
ব্যাটিং-বোলিংয়ের তুলনায় ফিল্ডিংটাই খারাপ হয়েছে। ফিল্ডিং আমাদের কেন খারাপ হয়েছে তার চেয়ে বলবো, ফিল্ডিং কিন্তু ওদেরও খারাপ হয়েছে। আমাদের চেয়ে যে খুব বেশি ভালো ছিল তা নয়। সমস্যা হলো, ওখানকার আবহাওয়া। প্রচুর বাতাস আর কনকনে ঠাণ্ডা। ফিল্ডিং খারাপের এটাও একটা কারণ হতে পারে।
ওয়েলিংটন টেস্টের প্রথম ইনিংসের কথা বলবো, আমরা অনেক ভালো খেলেছি। এটাই আসলে আমাদের স্ট্যান্ডার্ড। আমরা নিজেদের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী খেলেছি। এ পর্যায়ে এসে বলতে হয়, টেস্টে ভালো করতে হলে তিনটা পার্টেই ভালো খেলতে হবে। যদিও দ্বিতীয় ইনিংসে, গিয়ে আমরা ব্যাটিংটা ভালো করতে পারিনি। যেহেতু ভালো করতে হলে তিনটা পার্টেই ভালো খেলতে হয়। টেস্ট এমন একটা খেলা, যেখানে কোনো পার্টেই খারাপ করা যাবে না। তাহলে যে কোনো সময় পরিস্থিতি পাল্টে যেতে পারে; কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে গিয়ে আমরা ব্যাটিংয়ে খারাপ করার কারণে হেরে গিয়েছি।
তবে আমার মতে ওয়েলিংটনে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে খারাপ করার পেছনে মূল কারণটা হলো, আমাদের দু’জন মূল ব্যাটসম্যান ইনজুরিতে পড়ে গিয়েছিল। মুশফিক এবং ইমরুল। তারা দু’জনই দলের জেনুইন ব্যাটসম্যান। ব্যাট করতে নেমেছিল তারা; কিন্তু ভালোভাবে ব্যাট করতে পারেনি।
অনেকেই প্রশ্ন তুলছে, ২০০০ সালে আমাদের অভিষেক টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৪০০ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে গিয়ে করেছি মাত্র ৯০ রান। ১৬-১৭ বছর পর এসেও আমরা প্রথম ইনিংসে প্রচুর রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ভালো করতে না পারার কারণে টেস্ট হারতে হলো। তাহলে এত সময় পার হওয়ার পর কী পরিবর্তন আসলো? এ ক্ষেত্রে আমার বক্তব্য হলো, আমরা তো দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তান, ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও দ্বিতীয় ইনিংসে ভালো খেলেছি। তাছাড়া নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশন এমনিতেই সফরকারী দলগুলোর জন্য কঠিন। সেখানে তো আমরা ভালো খেলেছি।
যারা প্রশ্ন তুলতেছে, তারা যদি যুক্তি টানে তাহলে অনেক কিছুকেই যুক্তি হিসেবে টেনে নিয়ে আসতে পারবে। ওয়েলিংটনে আমরা দ্বিতীয় ইনিংসে খারাপা করেছি, এটা ঠিক আছে। আমরা যদি খারাপ না করতাম, তাহলে ম্যাচটা ড্র হতো; কিন্তু খারাপের পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ তো ছিল ইনজুরি সমস্যা। মুশফিক যদি ওভাবে ইনজুরিতে না পড়তো, ইমরুল যদি ভালোভাবে ব্যাট করতে পারতো, তাহলে পরিস্থিতি ভিন্নও হতে পারতো। এছাড়া ব্যাটসম্যানদের কিছু শট সিলেকশনও অবশ্যই দায়ী।
ক্রাইস্টচার্চ টেস্টেও ভালো খেলছে বাংলাদেশ। ইতিমেধ্যে বৃষ্টিতে একদিন চলে গেলো। তবে আমার মনে হয়, এখানে দিন কোনো ফ্যাক্টর নয়। সেশন বাই সেশন ভালো খেলতে হবে বাংলাদেশকে। যদি এই ম্যাচে অন্তত ড্র করতে চাই, তাহলে ব্যাটিংটা অবশ্যই ভালো করতে হবে বাংলাদেশকে। ম্যাচ কিন্তু এখনও ওপেন। আমরা ভালো খেললে আমরাও জিততে পারি। ওরা ভালো খেললে ওরাও জিততে পারে। আবার দু’দলই যদি ভালো খেলে, তাহলে টেস্ট ড্র হবে।
ক্রাইস্টচার্চে বোলাররা খুব ভালো বল করেছে। শুধু ক্রাইস্টচার্চ কেন, আমি তো মনে করি ওয়েলিংটনেও খুব ভালো বল করেছে বোলাররা। পুরো সিরিজেই তারা ভালো বল করেছে। যদিও কন্ডিশনটা খুবই কঠিন। কারণ, বাতাসের বিপক্ষে বল করাটা খুবই কঠিন। তবুও আমরা ভালো বল করেছি। মোট কথা, আমরা জয় ছাড়া পুরো সিরিজেই ভালো খেলেছি।
আইএইচএস/