টাইগারদের জয়ের আশায় বৃষ্টির বাধা, এখন লক্ষ্য ড্র!
আগেরদিন তাসকিন আহমেদের কথা শুনে আর শরীরী ভাষা দেখে মনে হচ্ছিল টাইগাররা এ টেস্ট জিততে মরিয়া। জিততে হলে কি কি করতে হবে, কোন পথে হাঁটতে হবে? এমন সব সম্ভাব্য ছকও একরকম তৈরি করে রেখেছে যেন তারা।
সেই ছকের প্রথম ধাপ ছিল কিউইদের প্রথম ইনিংসে অন্তত এক রান হলেও পিছিয়ে রাখা। তারপরও নিজেরা দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ে নেমে এমন স্কোর গড়া, যার ওপর নির্ভর করার মত এবং স্বাগতিকদের জন্য হয় চ্যালেঞ্জিং।
উইকেটের যা অবস্থা এবং প্রথম দুদিন খেলার যে চালচিত্র, তাতে জয়ের আশা মোটেও আকাশ কসুম কল্পনা নয়। দ্বিতীয় দিন মাহমুদউল্লাহ, সাব্বির, কামরুল ইসলাম রাব্বি এবং নাজমুল হোসেন শান্তর হাত গলে ক্যাচ না পড়লে হয়ত ৫০ রানের লিড হয়ে যেত তামিম বাহিনীর।
এখন তামিমের দল যদি প্রথম ইনিংসে পিছিয়ে না পড়ে সমান সমানে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে শ’ তিনেক রান করতে পারে, তাহলেই একটা জমজমাট লড়াইয়ের ক্ষেত্র তৈরি হবে। তেমন হিসেব কষেই এগুচ্ছিল টাইগাররা; কিন্তু বৃষ্টি এসে সব গোলমাল করে দিল।
দ্বিতীয় দিন প্রায় ঘন্টা খানেক আর আজ সারা দিন বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায় ম্যাচের আয়ু কমে গেল। এখন হাতে সময় আছে দু’দিন। সে দু’দিনও পুরো খেলা হবে কিনা সন্দেহ। বৃষ্টির হুমকি আছে আগামী দু’দিনও।
তবুও ধরে নেয়া যাক সামনের দুুদিন খেলা হবে। এখন জিততে হলে ওই সময়ের মধ্যে যা করার করতে হবে। প্রথম কাজ হবে নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংসের যে তিন উইকেট বাকি আছে, কাল যথা সময়ের খেলা শুরু হলে খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে ওই তিন উইকেট ঝটপট ফেলে দিতে হবে।
তারপর নিজেরা ব্যাটিংয়ে নামা। হ্যাঁ একটা সোজা পথ আছে, তাহলো চতুর্থ দিন প্রথম ঘন্টায় কিউই ব্যাটিংয়ের লেজ মুড়িয়ে নিজেরা নেমে পড়া। সারা দিন হাত খুলে খেলে যা আগে বলা হয়েছে ৩০০‘র মত রান করে শেষদিন নিউজিল্যান্ডকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া; কিন্তু সময় কমে যাওয়ায় সেটা করাও কঠিন। তাতে বড় ধরনের ঝুঁকি থাকবে।
ভুলে গেলে চলবে না, প্রথম টেস্টে কোনো তাড়াহুড়া ছিল না, তাই দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং ভাল হয়নি। প্রথমবার ৫৯৫ রান করা দল দ্বিতীয়বার ২০০‘ও করতে পারেনি। সেখানে এবার জয়ের লক্ষ্যে নিউজিল্যান্ডকে টার্গেট দিতে গিয়ে হাত খুলে খেলতে গেলে সর্বনাশ নেমে আসার সমূহ সম্ভাবনা থাকবে।
কিউইদের বড় সড় টার্গেট ছুড়ে দিতে গেলে দ্বিতীয় ইনিংসে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে হাত খুলে খেলতে হবে। যাতে রাজ্যের ঝুঁকি। সে ঝুঁকি নিতে গেলে উল্টো বিপদ ঘাড়ে এসে পড়বে। তার চেয়ে এখন যে সময় আছে, তার সর্বোচ্চ ও সেরাটা কিভাবে কাজে লাগানো যায়, সে চিন্তায়ই করা উচিত। না হয় অনিবার্য বিপদের সম্মুখিন হতে হবে।
এদিকে অবস্থা বুঝে নিজেরাই খানিক লক্ষ্য পাল্টেছে টাইগাররা। অভিষেক হওয়া নবীন কিপার কাম মিডল অর্ডার নুরুল হাসান সোহানের কথা শুনে মনে হচ্ছে, বৃষ্টিতে আজকের পুরো দিন ধুয়ে মুছে যাওয়ায় পরিবেশ পরিস্থিতি খানিক পাল্টে গেছে। এখন জয়ের তীব্র আকাঙ্খা নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে হাত খুলে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে গেলে উল্টো বিপদ ঘটতে পারে, এ অনুভব ও বোধটা জেগেছে দলের ভিতরে।
তাই তো নুরুল হাসান সোহানের কথা, ‘একদিন খেলা না হওয়ায় পরিস্থিতি পাল্টেছে খানিকটা। সোহানের কথার সারমর্ম এমন- পাঁচদিনের ম্যাচের একদিন কমে গেছে। এখন এ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে হিসেব করে আগাতে হবে। আমরা সে হিসেব কষে আগানোর কথাই ভাবছি। এখন আমাদের প্রথম লক্ষ্য ড্র। আমরা চেষ্টা করবো ইতিবাচক থেকে আগে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করতে। যদি এরপর সময় ও অবকাশ থাকে, তাহলে জেতার সর্বাত্মক চেষ্টা করতে দ্বিধা থাকবে না। তবে এখন আমরা চাই আগে নিজেরা নিরাপদে থাকতে।’
এখন সে নিরাপদ থাকাও সহজ হবে না। শুধু টাইগাররাই যে ছক কষে আগাবে তা তো নয়। কিউইরাও নিশ্চয় বসে থাকবে না। প্রথম ইনিংসে লিড নিতে না পারলে ব্ল্যাক ক্যাপসরা তেড়েফুঁড়ে আক্রমণ শানাবে।
বোল্ট, সাউদি, ওয়েগনার ও গ্র্যান্ডোমরা তখন সামর্থ্যরে শেষ বিন্দু দিয়ে বোলিং করতে শুরু করবে। সে বোলিং তোড় সামলানো সহজ হবে না। তার ওপর বৃষ্টিতে উইকেট প্রায় দেড়দিন ঢাকা থাকলে খানিক আদ্রতা জমবে। সেটাও চিন্তার কারণ। আবার বৃষ্টি ও প্রচন্ড বাতাসে সীমিং কন্ডিশন আরও জেঁকে বসবে।
সব মিলে আজকের বৃষ্টিটা খানিক ক্ষতিই করে দিল তামিম, সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের। দেখা যাক আগামী দিন পরিস্থিতি কী দাঁড়ায় আর তামিমের দল কী করে?
এআরবি/আইএইচএস/জেআইএম