প্রথমবার বোলাররা একটি ইউনিট হিসেবে বল করেছেন
কামরুল ইসলাম রাব্বির আগে প্রথম ব্রেক থ্রু‘টা হতে পারতো তার। আজ সকালে নিউজিল্যান্ড ইনিংসের ১১নম্বর আর নিজের ছয় নম্বর ওভারেই উইটে পেতে পারতেন তাসকিন আহমেদ। এ ফাস্ট বোলারের সুইংয়ে পরাস্ত কিউই ওপেনার জিত রাভাল ক্যাচ তুলে দেন স্লিপে; কিন্তু দলের অন্যতম চৌকশ ফিল্ডার সাব্বির রহমান রুম্মন সেটা তালুবন্দী করেও ফেলে দেন।
প্রথম ঘণ্টাতেই এমন লোপ্পা ক্যাচ হাতছাড়া! যে কোনো বোলারের মন ভাঙ্গার জন্যই যথেষ্ট; কিন্তু তাতে হতাশ ও হতোদ্যম না হয়ে দ্বিগুণ উৎসাহে বল করে যেতে থাকেন তাসকিন।
পরে সাফল্যও ধরা দেয়। তার সুইংয়ে অফস্ট্যাম্পের বাইরে পরাস্ত হয়ে আরেক ওপেনার টম লাথামকে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন উইকেটের পেছনে। উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহানের গ্লাভসে প্রথম ক্যাচ জমা পড়ল সেটা।
সারা দিনে নামের পাশে ওই একটি মাত্র উইকেট জমা পড়লেও শনিবার যতটা সময় খেলা হয়েছে, কিউই ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে সমীহ আদায় করে নিয়েছেন বাংলাদেশের পেসার তাসকিন আহমেদ।
তার গতি, সুইং এবং বাউন্সারে একজন কিউই ব্যাটসম্যানও স্বাচ্ছন্দে খেলতে পারেনি। শুধু তাসকিন একা নন। এ সফরে আজ প্রথমবারের মত বাংলাদেশের পাঁচজন বোলারই একটা বোলিং ইউনিট হিসেবে বল করেছেন।
এই ক্রাইস্টচার্চে প্রথম ওয়ানডে দিয়ে নিউজিল্যান্ড সফর শুরু, এরপর আর কোন ম্যাচে বোলাররা একটা ইউনিট হয়ে বল করতে পারেননি। যে কারনে প্রতিপক্ষের ওপর কর্তৃত্বও ফলানো সম্ভব হয়নি।
আজ সেই কাজটি প্রথমবারের মত হওয়ায় নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে লিড নেবার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। মাহমুদউল্লাহ, সাব্বির, শান্ত ও কামরুল ইসলাম রাব্বি- চারজনে মিলে ঠিক চারটি ক্যাচ ফেলেছেন। এর মধ্যে অন্তত তিনটি ধরতে পারলে আজই অলআউট হয়ে যেতো নিউজিল্যান্ড। সম্ভবত লিডও পেতো বাংলাদেশ।
বোলারদের সবাই একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও নিশানায় বল করায় বø্যাক ক্যাপসদের স্বচ্ছন্দ ও স্বাভাবিক ব্যাটিংয়ে সমস্যা হয়েছে। যার প্রমাণ সারাদিনে মাত্র দুুটির বেশি জুুটি গড়ে ওঠেনি। যার একটি ল্যাথাম ও রস টেলরের। তৃতীয় উইকেটে ১০৬ রান তোলেন তারা দু’জন। এছাড়া পঞ্চম উইকেটে হেনরি নিকোলস ও সান্তনার ৭৫ রানের জুটি গড়েন।
পুরো সফরে এই প্রথম কিইউরা সে অর্থে উইকেটে জেঁকে বসতে পারেননি। দিন শেষে সে কথা অকপটে স্বীকার করেছেন ল্যাথাম। বোলারদের সবার সমান অবদান ও কার্যকরিতার আরও একটি নমুনা শুনুন, অনিয়মিত বোলার সৌম্য সরকার তিন ওভার করা ছাড়া যে পাঁচ জেনুইন বোলার বল করেছেন, তার মধ্যে রুবেল হোসেন ছাড়া সবাই উইকেট পেয়েছেন। রুবেল উইকেট না পেলেও সবচেয়ে নিয়ন্ত্রিত বল করেছেন। তার বলে রান উঠেছে সবচেয়ে কম।
এটাই একটা ইউনিটের সবচেয়ে বড় নিদর্শন। পেসাররা সবাই একটা চেইনে বল করার চেষ্টা করেছেন। অহেতুক ও অনাবশ্যক কিছু করার চেষ্টা ছিল না কারোর মধ্যে। শর্ট অফ লেন্থে বল করার প্রনবনতাও ছিল কম। সবাই চেস্টা করেছেন টাইট বোলিং করতে।
সাকিব শেষ বিকেলে অভিজ্ঞা ও বুদ্ধি খাটিয়ে মাত্র ৯ বলের ব্যবধানে তিন উইকেটের পতন ঘটিয়ে রীতিমত সুবিধাজনক অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছেন দলকে।
যদিও তার আগে তিন পেসার তাসকিন, রুবেল ও রাব্বি এবং অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ ভাল বল করে প্লাটফর্ম তৈরি করেন। তাই তো দিন শেষে তাসকিন আহমেদের মুখে এ কথা, ‘আমি একা নই। আজ সব বোলার ভাল বল করেছে। সবাই লক্ষ্য ও পরিকল্পনা অনুযায়ী বল করেছে। আমার বলে ক্যাচ পড়েছে। তবে আমি তা নিয়ে খুব একটা হতাশ নই। ক্যাচ পড়লে আমার কেন যেন খুব খারাপ লাগে না। আমি কারো ওপর চটিও না। মনে হয়, হয়তো দিনটি আমার না। বিশ্বাস করি, যেদিন আমার দিন হবে, সেদিন আর ক্যাচ পড়বে না। আমি হয়ত ৬/৭ উইকেট পেয়ে যাব।’
এআরবি/আইএইচএস/আরআইপি