রুবেলের কথা শুনেই রেগে গেলেন হাথুরু
নিউজিল্যান্ড সিরিজের জন্য ঘোষিত প্রাথমিক স্কোয়াডেই ছিলেন না রুবেল হোসেন। বিপিএলের পারফরম্যান্স দিয়ে অবশেষে জায়গা পেলেন। গেলেন অস্ট্রেলিয়ার প্রস্তুতি ক্যাম্পে। এরপর নিউজিল্যান্ড। পুরো সফরেই দলের সঙ্গে রয়েছেন। খেলতে পেরেছেন মাত্র টি-টোয়েন্টি সিরিজ। ওয়ানডে সিরিজে ছিলেন উপেক্ষিত। টি-টোয়েন্টিতে সুযোগ পেয়ে তিন ম্যাচে নিলেন ৭ উইকেট।
টি-টোয়েন্টির পারফরম্যান্স দিয়ে রুবেল নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ দিলেন। সবাই ভেবে নিয়েছিল, টেস্টে অনভিজ্ঞ পেস বোলিং লাইনআপের নেতৃত্ব থাকবে রুবেলের কাঁধেই। দলের মধ্যে যে তিনিই অভিজ্ঞ পেসার!
কিন্তু ওয়েলিংটনে বাংলাদেশের একাদশ দেখে সবাই অবাক। কারণ যে তিনজন পেসারকে নিয়ে খেলতে নেমেছে বাংলাদেশ, তার মধ্যে দু’জনেরই অভিষেক হয়েছে ওই ম্যাচে। বাকি কামরুল ইসলাম রাব্বির অভিজ্ঞতা মাত্র ২ টেস্টের। অথ্যাৎ তিন পেসারের অভিজ্ঞতা সব মিলিয়ে মাত্র ২ টেস্টের।
ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে বাকি ঘটনা সব ইতিহাস। বাংলাদেশকে দারুণ সুযোগ তৈরি করেও লজ্জ্বার রেকর্ডের শিকার হয়ে হারতে হলো। তখন আবারও প্রশ্ন উঠলো, রুবেল হোসেন যদি একাদশে থাকতো, তাহলে কী বাংলাদেশ হারতো? নিউজিল্যান্ড সফরকালে বাংলাদেশ দলের সঙ্গে খুব বড় দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নেই। বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির ম্যানেজার সাব্বির খানকে সফরের ম্যানেজার করে পাঠানো হয়েছে। দলের মুখপাত্র হলেন মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমাম।
একাদশ নিয়ে তাই এদের মন্তব্য করার কিছুই নেই। তারা কোনো মন্তব্য করেনও না। বক্তব্য দেয়ার জন্য যিনি সবচেয়ে বেশি দায়িত্বশীল, সেই কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহকেও পাওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে তাকে পাওয়া গেলো দ্বিতীয় টেস্ট শুরুর ৪৮ ঘণ্টা আগে, অথ্যাৎ বুধবার। নানা বিষয়ই নিয়েই কথা বললেন তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে।
শুরুতেই ওয়েলিংটনের বোলিং, বিশেষ করে পেস অ্যাটাক সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলো হাথুরুর কাছে। নিজের মত একটা ব্যাখ্যা দিলেন তিনি। এরপরের প্রশ্ন ছিল তার কাছে, রুবেলকে কেন নেয়া হলো না?
এ প্রশ্ন শুনেই খানিকটা রেগে গেলেন বাংলাদেশ দলের কোচ। চোখে-মুখে বিরক্তির চাপ ফুটিয়ে তুললেন। অনেকটা খেদের সঙ্গেই জবাব দিলেন, ‘এ ব্যাপারে আপনাকে কোনো যুক্তি দেয়ার প্রয়োজন তো আমার নেই!’ রাগের মাথায় এ কথা বলে ফেলার পর স্বর একটু নরম করে বললেন, ‘দলের জন্য যা ভালো মনে হয়, আমি সেটাই করি।’
তিন অনভিজ্ঞ পেসারকে দলে নেয়ার যুক্তিটা তার আগেই দিয়েছেন তিনি। নিজেই স্বীকার করলেন, অনভিজ্ঞ তিন পেসারকে দলে নিয়েছেন। যাদের কারও কারও গত আড়াই তিন বছরও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতাও নেই। সে সব জেনেও হাথুরুর মন্তব্য, ‘আগের ম্যাচে আমাদের জন্য সবুজ আক্রমণ তৈরি করা হয়েছিল। আমাদের যে তিন পেসার খেলেছিল, তাদের অভিজ্ঞতা মাত্র দুই টেস্টের। আপনি হয়তো দেখবেন, তাদের অনেকেই দুই, আড়াই বছর প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেনি। একজন তো তিন বছরের বেশি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেনি। তবে আমার কাছে এটা কোনো অজুহাত নয়। কারণ, তাদের তিনজকেই টেস্ট খেলার জন্য তৈরি করে নেয়া হয়েছে। আমি মনে করি প্রথম ইনিংসে তিনজনই খুব ভালো বল করেছে। ১৪০টির বেশি ওভার বল করেছে তারা। দ্বিতীয় ইনিংসে ভালো করতে পারেনি চাপের কারণে। তবে বোলারদের কারণে নয়, আমরা হেরেছি মূলতঃ বাজে ব্যাটিংয়ের কারণে।’
এরপরই এলো রুবেল প্রসঙ্গ। তার কথা শুনেই কোনো উত্তর ঠিকমত দিলেন না। বরং উত্তেজিত হলেন হাথুরু। যদিও এর আগে টেস্ট ক্যারিয়ার খুব বেশি ভালো নয় রুবেলের। এর আগে মোট ২৩টি টেস্ট খেলেছেন রুবেল। উইকেট নিতে পেরেছেন মোটে ৩২টি। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রুবেলের ওপর খুব বেশি আস্থা নেই হাথুরুর। কোচের বিশ্বাস, ৫দিন খেলার মত টেম্পারমেন্ট নেই রুবেলের; কিন্তু প্রশ্ন হলো যদি টেম্পারমেন্টই না থাকে, তাহলে তাকে কেন দলের সঙ্গে রাখা হলো। দলে রাখা হয়েছে যখন তখন তাকে খেলাতে সমস্যা কোথায়?
এআরবি/আইএইচএস/এমএস