এত বড় জুটি গড়ে উঠবে ভাবেননি মুশফিক
শুধু বেশি রান আর সর্বাধিক সেঞ্চুরির মালিক বলেই নন, এ মুহূর্তে তিন ফরম্যাটে বাংলাদেশের সফলতম ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের অনেক সাফল্যের প্রাথমিক ধাপটা তামিমের হাতে গড়া। কিন্তু যদি বলা হয়- বাংলাদেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য কোন দুজন?
তাহলে চলে আসবে মুশফিকুর রহিম আর সাকিব আল হাসানের নাম। কারণ মিডল-অর্ডার ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে বড় নির্ভরতা তারা। যে কোনো ফরম্যাটে প্রয়োজনের সময় সাকিব-মুশফিক জুটি জ্বলে ওঠার রেকর্ড আছে প্রচুর।
গত বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেও তারাই ধরেছিলেন হাল। সাকিব- মুশফিকের জোড়া ফিফটিতে শেষ পর্যন্ত লড়িয়ে স্কোর পায় বাংলাদেশ। যা শেষ পর্যন্ত জয়ের জন্য যথেষ্ঠ বলেও প্রমাণিত হয়। কিন্তু এবার নিউজিল্যান্ড সফরে এই জুটি এক সাথে হতে পারেনি।
প্রথম ওয়ানডেতেই ব্যথা পেয়ে যান মুশফিক। তারপর ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি মিলে পাঁচ ম্যাচ দলের বাইরে। কাকতালীয়ভাবে এই জুটিই এখন বায়লাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ পার্টনারশিপের মালিক। ৩৫৯ রানের পার্টনারশিপ; চাট্টিখানি ব্যাপার নয়।
বলার অপেক্ষা রাখে না, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজের পর অতি বড় বাংলাদেশ সমর্থকও ভাবেননি টেস্টে সাকিব- মুশফিকরা এমন এক হিমালয় সমান কীর্তি ছুঁয়ে ফেলবেন। শুধু কি ভক্ত-সমর্থকরা, যারা এ অনন্য কীর্তি গড়ে এখন ইতিহাস স্রষ্টা- তারাও কি ভেবেছিলেন এত বড় জুটি গড়ে তুলতে পারবেন?
নিউজিল্যান্ডে গিয়ে সীমিত ওভারের ফরম্যাটে চরমভাবে নাস্তানাবুদ হওয়া বাংলাদেশ টেস্টে সব অনভ্যস্ততা আর প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে এমন এক মজবুত অবস্থানে গিয়ে পৌঁছবে? নাহ, ভাবেননি। আর ভাবেননি বলেই প্রেস কনফারেন্সে মুশফিকুর রহীমের সহজ সরল স্বীকারোক্তি- ‘এত বড় জুটি তৈরি হবে ভাবিনি।’
মোদ্দাকথা, মুশফিকও খানিক অভিভূত! এত অর্জন, প্রাপ্তি, নতুন নতুন রেকর্ড আর নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথমবার প্রায় সাড়ে পাঁচশো রান-এত কিছু হবে তা মুশফিকও ভাবেননি। ভাবার কথাও না। অর্জন এভাবেই হয়ে যায়। কোনো রেকর্ড কেউ বলে-কয়ে করতে পারে না।
আগাম জানান দিয়ে রেকর্ড গড়ার ঘটনা আছে কি? ইতিহাস খুঁজে হয়তো একটিও মিলবে না। তাই মুশফিক হয়তো ভদ্রতা দেখিয়ে বলেছেন, ‘এতটা ভাবিনি।’ কিন্তু বাস্তবতা হলো- কেউ তো আর বলে-কয়ে রেকর্ড গড়ে না। রেকর্ড হঠাৎই হয়ে যায়।
এই যেমন সাকিব আর মুশফিকুর রহিম যে একদিনে ৩৫৯ রানের হিমালয় সমান জুটি গড়ে তুলবেন, তা কি কেউ আগাম টের পেয়েছিলেন? পাওয়ার কথাও নয়। মুশফিকের কথা, ‘আমরা চেয়েছিলাম যতক্ষণ সম্ভব উইকেটে টিকে থাকতে। যত দীর্ঘ সম্ভব পার্টনারশিপ তৈরি করতে।’
এই মন্তব্য পরিষ্কার প্রমাণ করে বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়কের ইচ্ছে ছিল প্রবল। ইচ্ছে শক্তি কাজে লাগিয়েই নতুন নতুন রেকর্ড গড়। মুশফিক জানিয়ে দিলেন, উইকেটে পেসারদের যতটা হেল্প করবে বলে ভাবা হচ্ছিল, ততটা সাহায্য করেনি। বাংলাদেশ অধিনায়কের এই কথাটিরও একটা তাৎপর্য আছে।
তার মানে, তিনি এবং সাকিব খুব ভালোভাবেই বুঝে ফেলেছিলেন উইকেট আসলে তত কঠিন নয়। এখানে দেখে ও বুঝে খেললে উইকেটে লম্বা সময় থাকা যাবে। আর বেশি সময় ধরে থাকা মানেই বড় জুটি তৈরি করা।
এনইউ/পিআর