উষ্ণ অভিনন্দনে সিক্ত সাকিব-মুশফিক
চা বিরতিতে দু`দলের ক্রিকেটাররা ফিরছেন ড্রেসিং রুমে। নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেটাররা একটু পিছনে। বাংলাদেশের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান সাকিব আল হাসান আর মুশফিকুর রহীম সামনে। গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডে বসা দর্শকদের মুহুর্মুহু করতালি। কিউই ক্রিকেটাররাও সবাই দু`হাত এক করে তালি দিতে দিতে ড্রেসিং রুমের পথে। চা বিরতিতে সাজঘরে ফেরার পথে স্বাগতিক দশর্ক-সমর্থকদের উষ্ণ অভ্যর্থনা। আর প্রতিপক্ষ ক্রিকেটারদের করতালি পাওয়া খুব একটা দেখা যায় না।
কিন্তু আজ ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে সে দৃশ্যর দেখা মিললো। স্বাগতিক দল ও সমর্থকদের শুভেচ্ছায় সিক্ত হলেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম ও সাকিব আল হাসান। এমনিতেই নিউজিল্যান্ড দর্শকরা দারুণ সমঝদার। খুব স্পোর্টিং। হোক তা নিজ দল কিংবা প্রতিপক্ষ, কেউ ভালো শট খেলে বাউন্ডারি হাকালে করতালিতে ফেটেপড়ে মাঠ। দারুণ ফিল্ডিং হলেও জোটে অভিনন্দন। একটা দুর্দান্ত ক্যাচ ধরলেও দর্শকরা তাৎক্ষনিকভাবেই অভিনন্দন জানান।
বেসিন রিজার্ভে গত দেড়দিনে ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে হওয়া বাউন্ডারিগুলো বাদ দিলে যতবার বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা বাউন্ডারি হাকিয়েছেন, বিশেষ করে কভার ড্রাইভ, স্ট্রেট ড্রাইভ, ফ্লিক, স্কোয়ার কাটের মত ক্রিকেটীয় শটে, প্রতিবার দর্শকরা সে মারের প্রশংসা করেছেন।
কিন্তু তারা তো আর এমনি এমনি বাংলাদেশের দুই ব্যাটসম্যানকে অভিনন্দনে সিক্ত করেননি। তারা নিজ গুণে ঐ অভিনন্দন আদায় করে নিয়েছেন। ঘুরিয়ে বললে সাকিব আল হাসান আর মুশফিকুর রহীম অভিনন্দন আশা করতে পারেন। দু`জনই যে সেঞ্চুরিয়ান। সেঞ্চুরির অপরাজিত অবস্থায় এক সেশন শেষে সাজ ঘরে ফেরার পথে স্বাগতিক দর্শক ও দলের কাছ থেকে উষ্ণ অভ্যর্থনা কি বাড়তি কিছু? মোটেই না। আর সাকিব ও মুশফিক নিজেদের ব্যাটিং মেধার যথাযথ স্ফুরণ ঘটিয়েই সবার মন কেড়েছেন।
আগেই জানা দুজনেরই টেস্ট ক্যারিয়ারের এটা চতুর্থ সেঞ্চুরি। তবে দুজনার সেঞ্চুরির ধারা ও ইতিহাস ভিন্ন। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সাকিব আল হাসানের এটা ব্যাক টু ব্যাক শতক। ২০১০ সালে হ্যামিল্টনের সেডন পার্কে বাংলাদেশ যে শেষ টেস্ট খেলে গেছে সেখানেও দ্বিতীয় ইনিংসে শতরান ( ১০০) করেছিলেন সাকিব। তার আগে ৮৭ রানের আরও একটি উজ্জ্বল ইনিংসও আছে তার।
তবে এবার তিন অংকে পৌঁছানোর আগে ফিরে যাচ্ছিলেন ৪ রানে। বাঁহাতি কিউই ফাস্ট বোলার টিম সাউদির বলে ৪ রানে জীবন পেয়েছেন সাকিব। তার পুল শট দু হাতে নিয়েও ফেলে দেন সাণ্টানার। সাকিবের কাছ থেকে সান্টানারকে ধন্যবাদ পেতেই পারেন। কারণ তার হাতে জীবন পেয়েই ফিরে গেছেন ছয় বছর আগে হ্যামিল্টনের বেসিন পার্কে।
২০১০ সালের ফেব্রুয়ারীতে হওয়া সে ম্যাচে সাকিব যেখানে শেষ করেছিলেন, আবার নিউজিল্যান্ডে এসে ঠিক সেখানেই ফিরে যাওয়া। এবং সবচেয়ে বড় কথা, ঠিক পরের ইনিংসেই। সাকিব এর আগে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে যে সেঞ্চুরি করেছিলেন, সেটা ছিল একমাত্র টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে। আর এবার প্রথম ইনিংসেই তিন অংকে। মাঝখানে প্যাসিফিক ও তাসমান উপসাগরে অনেক জল গড়িয়েছে। কিন্তু সাকিব ঠিক আগের মতই আছেন। ওয়ানডেতে না পারলেও টেস্টে ঠিক সেঞ্চুরি। চা বিরতি প্রায় ঘন্টা খানেক আগে কিউই ফার্ষ্ট মিডিয়াম বোলার ওয়েগনারের বলে ফ্লিক করে সিঙ্গেলস নিয়ে ৯৯ থেকে ১০০‘তে সাকিব।
মুশফিকুর রহীমের অবস্থা ছিল ঠিক শতভাগ বিপরিত। বাংলাদেশের ক্রিকেটে তিনি নির্ভরতার প্রতীক। ওয়ানডে আর টেস্ট দুই ফরম্যাটে তার ব্যাট দলের অন্যতম বড় সম্পদ ও শক্তি। যখন যে দলের সঙ্গে খেলাই হোক না কেন, মুশফিক মানেই একটা অন্যরকম নির্ভরতা।
কিন্তু কেন যেন নিউজিল্যান্ডের মাটিতে নিজেকে খুঁজে পাননি বাংলাদেশের মিস্টার ডিপেন্ডেবল। আগের তিন টেস্টে ছয় ইনিংসে তার মোট রান মোটে (৭ + ২২ +৭+৬+৮+০ ) = ৫০। এবার হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি কাটিয়ে নিজের ভাষায় শতভাগ ফিট না হয়ে খেলতে নামাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। আর মাঠে নেমে অতীতের ব্যর্থতা ঘুচিয়ে দারুণ শতক। টিম সাউদির বলে বাউন্ডারি হাকিয়ে তিন অংকে পা রাখা। অফস্টাম্পের ঠিক বাইরে পিচ পরা ডেলিভারি, ভিতরে আসবে, না বেড়িয়ে যাবে ঠিক ভেবে উঠতে না পেরে ব্যাট পেতে দিলেন মুশফিকুর রহীম। থার্ডম্যানে যেহেতু কেউ নেই, তাই বল স্লিপ আর গালি ফিল্ডারের নাগালের বাইরে বল যাওয়া মানেই বাউন্ডারি।মুশফিক আনন্দের অতিশয্যে দু`হাত তুলে উল্লাসে মেতে উঠলেন। অমন উল্লাস যে তাকেই মানায়।
এআরবি/এমআর/এমএস