সাকিবের সঙ্গে ফর্মে থাকা মিরাজকে চাই
ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষ হয়ে গেলো। যদিও এই দুই সিরিজে একটি ম্যাচেও জয় পাইনি। এবার নতুন ফরম্যাট, নতুন চ্যালেঞ্জ। দেশের মাটিতে সর্বশেষ ইংল্যান্ডের মত শক্তিশালী দলকে হারিয়ে যাওয়ার পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই টেস্ট নিয়ে আমরা আশাবাদী হতেই পারি। আশা করবো, যে সাফল্য আমাদের ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টিতে দেখানোর সামর্থ্য ছিল, সেটা সেখানে না পারলেও টেস্টে দেখাতে পারবো। আমাদের সে সামর্থ্য এবং আত্মবিশ্বাসও আছে। আশা করছি, টেস্টে আমাদের ক্রিকেটাররা দেশের মানুষকে ভালো কিছুই উপহার দিতে সক্ষম হবে।
তবে এই টেস্টে ভালো করতে হলে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টির মতো একাদশ নিয়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থার তৈরি করা যাবে না। সঠিক জায়গায় সঠিক খেলোয়াড়টিকেই মাঠে নামাতে হবে। যদিও শুনলাম, ম্যাচের আগের দিন সন্ধ্যায় টিম মিটিংয়ে একাদশ ঠিক করা হয়নি। টিম ম্যানেজমেন্ট চিন্তায় আছে সৌম্য সরকারকে খেলাবে নাকি মেহেদী হাসান মিরাজকে খেলাবে- এ নিয়ে।
আমি তো টেস্টে মিরাজকে না খেলানোর কোনো কারণই দেখছি না। সে ইতিমধ্যেই নিজেকে প্রমাণ করেছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দেশের মাটিতে খেলা দুই টেস্টেই সে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও টেস্ট সিরিজে স্পিনার সাকিবের সঙ্গে সব ভালো ফর্মে থাকা মিরাজকে চাই। যদিও এই সফরে এখনও পর্যন্ত অপ্রত্যাশিতভাবে এক ম্যাচেও তাকে খেলার সুযোগ দেয়া হয়নি।
টিম কম্বিনেশন নিয়ে নানা কথা শোনা যাচ্ছে। আমার মতে তিনটা ফাস্ট বোলার নিয়ে অবশ্যই নামা উচিত। সঙ্গে সাকিব আর মিরাজ। মোট এইট ৫ বোলার। তিনজন ফাস্ট বোলার হওয়া উচিত রুবেল হোসেন, শুভাশিষ রায় এবং তাসকিন আহমেদ। যদিও গত চার বছরে তাসকিনের প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। প্রথম শ্রেণির ম্যাচের অভিজ্ঞতা ছাড়া একজন পেসার কতটুকু কী করতে পারবে, সেটা অবশ্যই চিন্তার বিষয়। তবুও আমাদের হাতে তো আর অপশন নেই।
উপরে দিকে যদি যাই, তাহলে ব্যাটিংয়ে ইমরুল কায়েস, তামিম ইকবাল, মুমিনুল হক, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুশফিক রহীম, সাকিব আল হাসান এবং সাব্বির রহমান। আট নম্বরে মিরাজ, নয়, দশ এবং এগারো- এই তিন জায়গায় তিনজন পেসার। সুতরাং, একাদশে তো আমি আর সৌম্যর কোনো জায়গা দেখছি না। আামি বুঝি না, একজনকে নিয়ে এত আবেগ কেন কাজ করে। সৌম্য ভালো ব্যাটসম্যান, ঠিক আছে। তবে সে যে টেকনিকে খেলে, তাতে তো তাকে সব ফরম্যাটে খেলানো যায় না। সে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টির জন্য হয়তো ফিট; কিন্তু টেস্টের জন্য নয়।
উইকেট নিয়ে যদি বলি, তাহলে আমি বলবো, ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে আমার খেলার অভিজ্ঞতা আছে। এখানে প্রথম দুই কিংবা আড়াইদিন ফাস্ট বোলারদের রাজত্ব থাকবে। এরপর কিন্তু স্পিনাররাই ফায়দা তুলে নিতে শুরু করবে। এ কারণে আমি মনে করি, আমাদের দলে একজন স্পেশালিস্ট অফ স্পিনার খুবই প্রয়োজন। সে হিসেবে মিরাজের বিকল্প আমি দেখছি না।
ওদের (নিউজিল্যান্ডের) একাদশ হবে ফাস্ট বোলিং নির্ভর। আমরা যতটা সামনে খেলবো, তত আমাদের লাভ। সামনে বলতে, কাভার, পয়েন্ট, গালি, স্লিপ, সিলি পয়েন্ট, সিলি মিডঅফ কিংবা সিলি মিডঅনে। সামনের এই জায়গাগুলোতে খেলতে পারলেই দীর্ঘক্ষণ টিকে থাকা যাবে। আমাদের ব্যাটসম্যানদের তাই লক্ষ্য হতে হবে, যতটা সামনে খেলা যায়, যত বল ছেড়ে দেয়া যায়।
নিউজিল্যান্ডে যদিও আমাদের বেশ কিছুদিনের অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে। ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে দুটা সিরিজ শেষ করে ফেললাম। আশা করি টেস্টে এ অভিজ্ঞতা বেশ কাজে লাগবে। সঙ্গে আরেকটা কথা না বললেই নয়, ছোট ছোট কিছু ইনজুরি আছে। যেমন ইনজুরি থেকে মুশফিকের সেরে ওঠা। ইমরুল, তামিমেরও ইনজুরিতে পড়া। যদিও তারা সবাই খেলতে নামতে পারবে। তবে আমার পরামর্শ হলো, মাঠে খেলার সময় এ বিষয়গুলো মাথায় না রাখাই ভালো।
এর মধ্যে আবার দলের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে এমন কিছু বাজে লক্ষ্মণ চোখে পড়ছে। নিউজিল্যান্ড সফরে টিম খারাপ করার কারণে, নানা ধরনের গুঞ্জন চারদিকে শোনা যাচ্ছে। আবার বোর্ড প্রধানও অহেতুক সেখানে ঘি ঢেলে দিচ্ছে। নিশ্চিত, এতে ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। আমাদের সকলের উচিৎ, দলকে সব পর্যায়ে সমর্থণ জুগিয়ে যাওয়া। কোনোভাবেই বাজে সমালোচনা কিংবা বিতর্ক তৈরি হতে পারে এমন কোনো কিছু না বলা। কেননা একটা রীতিই হয়ে গেছে, দল ভালো করলে সেটা সবারই কৃতিত্ব; কিন্তু যদি খারাপ করে, তাহলে সবাই পেছনে চলে যায়। তখন শুধু খেলোয়াড়দেরই দোষ।
এই টেস্টে আমার প্রত্যাশা, অবশ্যই বাংলাদেশের শুরুটা ভালো হবে। আবহাওয়া, কন্ডিশন এবং উইকেটের যে কন্ডিশন, তাতে টসে জিতে অবশ্যই আমাদের ফিল্ডিং নেয়া উচিত এবং ভালো শুরুরে অপেক্ষায় আছি। আশাবাদী হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ, এই দলটার সাফল্য আছে। আছে অভিজ্ঞতাও।
ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের হারানোর আত্মবিশ্বাস এখানে বেশ কাজে দেবে বলে আমার বিশ্বাস। ইংল্যান্ডের মত একটি দলকে হারানোর পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই টেস্টে আমার প্রত্যাশা অবশ্যই বাংলাদেশ ভালো করবে। আগে এক সময় ছিল, বড় বড় দলগুলোর বিপক্ষে আমরা খেলতে নামতাম সর্বোচ্চ ড্র করার উদ্দেশ্যে। পরে হেরে যেতাম বড় ব্যবধানে। এখন আমরা মাঠে নামি জেতার লক্ষ্যে। জিততে না পারলেও এখন ড্র করতে পারি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি টেস্ট ম্যাচেই জয়ের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছিলাম। একটিতে ড্র এবং অন্যটিতে জয় পেয়েছি।
এবারও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আমরা জয়ের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামবো। জিততে না পারলেও যেন অন্তত টেস্ট ম্যাচটা ড্র করতে পারি। যদিও কেউ কেউ নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সম্প্রতি খেলে আসা পাকিস্তানের পরিণতির কথা বলছে। তবে আমি বলবো, বাংলাদেশ তো আর পাকিস্তান নয়। বাংলাদেশের এই দলটির অভিজ্ঞতা আছে। সফলতাও আছে। বেশ কিছুদিন নিউজিল্যান্ড থাকার কারণে কন্ডিশনের সঙ্গে বেশ মানিয়ে নিয়েছে। আশা করছি কন্ডিশন আর সমস্যা হবে না। শুভ কামনা রইল তাদের জন্য।
আইএইচএস/জেআইএম