এই সিরিজে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতার নাম ‘ব্যাটিং’
ওয়ানডের মত টি-টোয়েন্টি সিরিজেও হোয়াইটওয়াশ হলাম। একটা দল হিসেবে আমরা গিয়েছিলাম নিউজিল্যান্ড খেলতে, অনেক আত্মবিশ্বাস নিয়ে, দেশে অনেকগুলো সিরিজ জিতে; কিন্তু সেখানে গিয়ে প্রথম দুটি ফরম্যাটেই হেরে গেলাম। টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারার পর আজ একটাই আশা ছিল, শেষ ম্যাচে ভালো করার। আজ দেখলাম যে, প্রথম ১০ ওভার কিন্তু আমরা বেশ বালো বল করেছিলাম। তার আর দাঁড়াতেই পারিনি।
কিন্তু কিভাবে শেষ ১০ ওভার খেলতে হবে, সেটাই আমরা ঠিক করতে পারিনি। শুরুটা ভালো করেও শেষ করতে পারিনি। আমাদের ফিল্ডিং ছিল মধ্যমমানের। কয়েকটি ফিল্ডিং ছিল বেশ বাজে। যদিও সাকিব-মোসাদ্দেক বেশ ভালো বল করেছে। রুবেল ভালো বল করেছে। তবে ওদের ব্যাটসম্যানরা দেখিয়ে দিয়েছে, শুরুতে কিছুটা বিপদে পড়লেও শেষ কিভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয়, কিভাবে লম্বা ইনিংস খেলতে হয়, কিভাবে জুটি গড়তে হয়।
যদিও শুরুতে তিনটা উইকেট আমরা ভালো একটা চাপ সৃষ্টি করেছিলাম নিউজিল্যান্ডের ওপরে। অথচ উইলিয়ামসন আর কোরি অ্যান্ডারনসন দেখিয়ে দিলো কিভাবে একটি ইনিংসকে লম্বা করতে হয় এবং কিভাবে জুটি গড়তে হয়, সেটা। বোলিং-ফিল্ডিং বাদ দিলে ব্যাটিংয়েও কিন্তু আমরা শুরু করেছিলাম ভালো। তামিম আর সৌম্য দারুণ সূচনা করে দিয়েছিল। যদিও তামিম শট বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গিয়েছিল।
তামিম-সৌম্য যে শুরুটা আমাদের ধরিয়ে দিয়েছিল, পরের ব্যাটসম্যানরা সেটা ধরে রাখতে পারেনি। ব্যাটসমানদের ওপর যে দায়িত্ব ছিল, তারা সেটা পুরোপুরি পালন করতে পারেনি। ফলশ্রুতিতে আমরা এভাবে হেরে গেলাম। টি-টোয়েন্টিতে ২৭ রানে পরাজয় মানে এটা বিরাট পরাজয়।
আমি আবারও সাকিবের কাছে ফিরে যাচ্ছি। সে যদিও ৪১ রান করেছে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার এই ইনিংস ম্যাচ জয়ের জন্য কোনো কাজেই আসলো না। রানিং বিটুইন দ্য উইকেট ছিল মধ্যম মানের। অথচ ওদের কোরিং অ্যান্ডারসন এবং উইলিয়ামসনের দিকে তাকিয়ে দেখুন, তাদের রানিং বিটুইন দ্য উইকেট কতটা ফাস্ট ছিল।
তাদের বোলারদের মধ্যে সোদি এবং হুইলার খুব ভালো বল করেছে। অ্যান্ডাসন সেও বোলার। যদিও সে বল করেনি। উইলিয়ামনও বল করেন। আজ ২ ওভার বল করেছেন এবং বাংলাদেশের রান অনেকটা চেক দিয়ে রাখতে পেরেছিলেন। একদিনে অ্যান্ডারসন আর উইলিয়ামসনের ব্যাটিং, অন্যদিকে হুইলার আর সোদির বোলিংয়ের কাছেই মূলতঃ আমরা হেরে গিয়েছি।
প্রায় দীর্ঘ আড়াই সপ্তাহের সফর শেষে আমাদের এখন শেষ লক্ষ্য টেস্ট ম্যাচ। এই ফরম্যাটেই এখন সর্বশেষ লক্ষ্য ভালো করা এবং ভালো করে যেন আমাদের দেশকে ভালো জায়গায় তুলে আনতে পারি, সে লক্ষ্যে চেষ্টা করা উচিৎ।
আজকের ম্যাচে আশা করেছিলাম মিরাজকে খেলানো হবে। অথচ তাকে খেলানো হলো না। কেন তাকে বসিয়ে রাখা হলো, কেন তাকে খেলানো হলো না, এর কারণ আমি জানি না। মিরাজকে কী টেস্টের আগে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে পরিচিত করিয়ে দিতে চাচ্ছে না এমন কিছু নাকি অন্য কী কারণ, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না, তাকে না খেলানোর কারণ সম্পর্কে।
যেখানে মোসাদ্দেক ভালো বল করছে, সেখানে আরেকটা অফ স্পিনার খেলানো হলে সেটা তো দলের জন্যই উপকারী হতো এবং আমার মনে হয় ম্যাচের অবস্থা আরও ভালো হতে পারতো।
এ পর্যন্ত মোট ৭টি (একটি প্রস্তুতিমূলক ম্যাচসহ) ম্যাচ খেলে একটাও জয় নেই বাংলাদেশের। কেন জিততে পারেনি? এ প্রশ্ন করা হলে, আমি বলবো এই সফরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতার নাম হচ্ছে ব্যাটিং। কোনো ফরম্যাটে একটা সেঞ্চুরি নেই। দু’একটা ফিফটি হয়েছে শুধু। এটা খুবই হতাশাজনক।
বোলিংয়ের কথা যদি বলি তাহলে বলবো, বোলিং মোটামুটি ভালোই হয়েছে। তবে কখনওই মনে হয়নি যে আমরা ডমিনেট করছি কিংবা জয়ের মত বল করছি।
টস জিতে ফিল্ডিং নেয়ার বিষয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আমি বলবো, টস জিতে ফিল্ডিং নেয়াটা ছিল ভালো সিদ্ধান্ত। কারণ প্রচুর বাতাস বইছিল তখন। যে কারণে ফিল্ডিং নেয়া হয়েছিল, সেটা অবশ্য প্রথম ১০ ওভার পরেই শেষ হয়ে যায়। প্রথম ১০ ওভারে কিন্তু বাংলাদেশ বেশ ভালো বোলিং করেছে। ওরা বাতাসের বিপরীতে বেশি ভালো ব্যাটিং করতে পারেনি। এরপর পরিস্থিতি বদলে গেলো। বাতাস কমে যাওয়ার কারণেই মূলতঃ তারা ভালো ব্যাটিং করেছে।
সামনে টেস্ট সিরিজ। তবে, আমি বলবো এ ক্ষেত্রে আমাদের অপারেশন্স কমিটি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। কারণ, টেস্ট ম্যাচের আগে অবশ্যই একটি তিনদিনের প্রস্তুতি ম্যাচ থাকার প্রয়োজন ছিল। এটা কেন হয়নি আমি জানি না। আগেই আমি ফরম্যাটের কথা বলেছিলাম যে, সূচিতে তারা আমাদেরকে একটা কৌশলী মার দিয়েছে। সে কথা আবারও বলবো যে, একটি প্রস্তুতি ম্যাচও রাখা হয়নি টেস্টের আগে।
আইএইচএস/